ফিরল না দুই বন্ধু, বনেটে মাথা ঠুকলেন পরিজনেরা
বাড়িতে না জানিয়ে কখনও বাইরে রাত কাটাননি বাবলু রায় (৩৫)। আর অমৃত মণ্ডল (৩৭) ফোন করে জানিয়েছিলেন, একটু বাদেই ফিরছি। কিন্তু রাতে কেউই ফেরেননি। বৃহস্পতিবার সকালে বাড়ির কাছেই পাওয়া যায় বাবলু ও অমৃতের দেহ। তার জেরে উত্তেজনা ছড়ায় কোচবিহারের ঘোকসাডাঙার লতাপোতা পঞ্চায়েতের লাফাবাড়িতে। ক্ষোভের পাশাপাশি শোকেও থমথমে গোটা এলাকা।
গাড়িতে মাথা ঠুকছেন পরিজনেরা।
লাফাবাড়ির বাসিন্দা বাবলু ও অমৃতের বাড়ি পাশাপাশিই। ছোটবেলা থেকেই তাঁদের বন্ধুত্ব। সোনার গয়নার দোকানের মালিক বাবলুর কথাতেই তাঁর সঙ্গে ব্যবসার কাজে ফালাকাটা যেতে রাজি হন অমৃত। মহাজনের দোকান থেকে বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য নেওয়া অর্ডারের সোনার গয়না নিয়ে তাঁরা রাতেই ঘোকসাডাঙা পৌঁছন। একটি বাড়িতে অর্ডারের গয়নাও দেন। রাত ১১টা নাগাদ অমৃতের সঙ্গে তাঁর ভাই অমূল্যের শেষ বার কথা হয়। তখনও তিনি কিছুক্ষণের মধ্যে বাড়ি ফিরবেন বলে জানিয়েছিলেন। অমৃতের ভাইয়ের কথায়, “তার পরেও দাদা আর ফিরল না।”
পুলিশ এ দিন দেহ উদ্ধার করতে গেলে এলাকার বাসিন্দারা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। পুলিশ যাতে দেহ দু’টি নিয়ে বেরোতে না পারে, সে জন্য রাস্তা কেটে দেওয়া হয়। পরে কাটা রাস্তার উপরে বাঁশ ফেলে গাড়ি পার করে পুলিশ।
পুলিশের সঙ্গে বচসা এলাকাবাসীর।
এ দিন পুলিশ দেহ উদ্ধার করতে গেলে তাদের গাড়িতে মাথা কুটছিলেন অমৃতের ভাগ্নী তুলসী মল্লিক। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বললেন, “বিকেলে বেরোনোর আগে আমিই মামাকে ভাত বেড়ে দিয়েছিলাম।” অমৃতবাবুর বাবা জগদীশবাবু, মা আশাদেবী কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। স্ত্রী কথাই বলতে পারছেন না। তিন নাবালক সন্তানও বাবার মৃত্যুতে বাগরুদ্ধ।
শোকে দিশেহারা বাবলুর পরিজনেরাও। স্ত্রী সরস্বতীদেবী মাঝেমধ্যেই স্বামীর শোকে মূর্ছা যাচ্ছেন। কোনওমতে সরস্বতী বললেন, “না জানিয়ে কখনও রাতে বাইরে থাকত না। রাতে বাড়ি না ফেরায় বেশ কয়েকবার মোবাইলে ওঁকে ফোন করেছিলাম। রিং হলেও ফোন না তোলায় ভেবেছিলাম বাইক চালাচ্ছে। তন্দ্রার মতো এসেছিল। রাত দেড়টা নাগাদ জেগে উঠে আবার ফোন করেছি। ততবারই রিং হয়ে কেটে গিয়েছে।” তাঁর কথায়, “ওঁর সঙ্গে কারও খারাপ সম্পর্ক ছিল শুনিনি। তার পরেও এত বড় সর্বনাশ কারা কেন করলেন?” শোকে বিহ্বল পরিবারের অন্যরা ও দুই নাবালক সন্তানও। কথা হারিয়ে গিয়েছে তাঁর এক ছেলে ও এক মেয়েরও।
পার করানো হচ্ছে পুলিশের গাড়ি।
শোকের ছায়া গোটা এলাকাতেই। গ্রামবাসীদের সকলেই খুনের কিনারার দাবিতে সরব। আত্মীয়দের অনেকেই এ দিন মৃতদেহ গাড়িতে তোলার পরে বনেটে মাথা ঠুকে বারেবারে কান্নায় ভেঙে পড়েন। কোচবিহারের পুলিশ সুপার অনুপ জায়সবালের আশ্বাস, “নিহতের মোবাইল-সহ কিছু সামগ্রী উদ্ধার হয়েছে। তদন্তে সব কিছু উঠে আসবে। অপরাধীরা পার পাবে না।”

ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.