থানায় কেউ অভিযোগ জানালে গেলে তাঁকে প্রথমে এক গ্লাস জল দিতে হবে। তাতে তিনি অনেক স্বচ্ছন্দ বোধ করবেন। শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের দায়িত্ব নেওয়ার পরে পুলিশকর্মীদের সঙ্গে বৈঠকে এমনই নির্দেশ দিলেন সদ্য নিযুক্ত পুলিশ কমিশনার জগমোহন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মাল্লাগুড়ির পুলিশ কমিশনারেটে বিভিন্ন থানার আইসি, ওসি ছাড়াও পদস্থ কর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন পুলিশ কমিশনার। পুলিশ সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে কমিশনার জানিয়ে দেন, থানায় কোনও বাসিন্দা অভিযোগ নিয়ে গেলে তা সঙ্গে সঙ্গে লিপিবদ্ধ করে খতিয়ে দেখার কাজ শুরু করতে হবে। অভিযোগ না নেওয়া, পরে আসতে বলার মত অভিযোগ যাতে না ওঠে, সেই সম্পর্কে পুলিশ অফিসারদের সতর্কও করে দেন তিনি। এ দিন তিনি বলেন, “থানা-পুলিশ নিয়ে মানুষের মধ্যে নানা রকম ধারণা রয়েছে। অনেকে সেখানে যেতে ভয়ও পান। আমাদের এটা দূর করতে হবে। কোনও সমস্যা নিয়েই বাসিন্দারা সাধারণত আমাদের কাছে আসেন। তাই প্রথমে তাঁকে এক গ্লাস জল দেওয়া হলে, তিনি অনেকটাই স্বচ্ছন্দ বোধ করবেন। এর পরে অভিযোগ জমা নিয়ে নিতে হবে। তা নিয়ে টালবাহানা বরদাস্ত করা হবে না।” টালবাহানা বা দুর্ব্যবহারের অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্ট অফিসারের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবেও বলে পুলিশ কমিশনার জানিয়ে দেন।
পুলিশ সূত্রেরই খবর, শিলিগুড়িতে বিভিন্ন সময়ই অভিযোগ জমা নিয়ে টালবাহানা বা না নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি সেবক রোডের শালুগাড়া এলাকায় এক শেয়ার ব্যবসায়ীর গাড়ি আটকে টাকা এবং সোনার গয়না ছিনতাই-র ঘটনা ঘটে। তিনি ভক্তিনগর থানায় গেলে সেখানে প্রথমে টালবাহানা করা হয় বলে অভিযোগ। পরে ওই ব্যবসায়ীর বন্ধু তথা এক আইনজীবী কমিশনারেটের এক পুলিশ কর্তাকে টেলিফোন করে অভিযোগ জমা নেওয়ার ব্যবস্থা করেন। অতীতে অনেক সময় পুলিশি গড়িমসির অভিযোগে সরাসরি আদালতে মামলা করার ঘটনাও ঘটেছে।
এ ছাড়াও, পুলিশ কর্মীর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ থাকলে তা থানায় জমা নেওয়া হয় না বলেও নানা সময়ে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি শিলিগুড়ির এনজেপি এলাকার একটি মহিলা দোকানদারের উচ্ছেদের মামলা এবং হাকিমপাড়ার এক বধূর এক পুলিশ কর্মীর বিরুদ্ধে সহবাসের অভিযোগের ক্ষেত্রে অভিযোগকারীকে সরাসরি পুলিশ কমিশনারের দ্বারস্থ হতে হয়।
পুলিশ সূত্রের খবর, গোটা দেশে বিভিন্ন প্রান্তে এমন অভিযোগ ওঠার পর গত বছরের এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টে একটি জনস্বার্থে মামলা হয়। মামলার রায় দিতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্ট পুলিশ অভিযোগ পাওয়ামাত্র লিপিবদ্ধ করার নির্দেশ দেয়। এই রায় মেনে চলা হয় না বলে অভিযোগ করেছেন আইনজীবী তথা বৃহত্তর শিলিগুড়ি নাগরিক মঞ্চের সম্পাদক রতন বণিকের। তিনি বলেন, “প্রায়ই এমন অভিযোগ না নেওয়া ঘটনা শুনি। অনেক সময় অভিযোগকারীকে দীর্ঘক্ষণ থানায় বসিয়ে রাখা হয়। আবার অভিযোগ শুনে তা জমা না নিয়ে অপরপক্ষকে ডেকে পাঠানোর ঘটনাও ঘটে।”
পুলিশ সূত্রের খবর, শুধু অভিযোগ জমা নেওয়া নিয়ে গড়িমসি রোখাই নয়, ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়েও মজবুত এবং কড়া রাখার জন্য পুলিশ অফিসারদের নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ কমিশনার। সেখানে কোনও পুলিশ কর্মী বা পুলিশের ভ্যান ট্রাফিক বিধি ভাঙলে সঙ্গে সঙ্গে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। জগমোহন বৃহস্পতিবার বলেন, “আমরা শিলিগুড়ির বাসিন্দাদের পাশে থেকে সবসময় কাজ করতে চাই। সেখানে ট্রাফিক ব্যবস্থা অন্যতম। বিধি মেনে ট্রাফিক ব্যবস্থাকে জোরদার করার কথা বলেছি। তবে বিধি ভাঙলে সাধারণ বাসিন্দাদের মতই পুলিশ কর্মীদেরও যাতে না ছাড়া হয় তাও দেখতে বলেছি।”
রতনবাবু বলেন, “নতুন পুলিশ কমিশনারের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তবে নির্দেশ যাতে সব সময় কার্যকর হয় তা খেয়াল রাখতে হবে।” একইভাবে ব্যবসায়ীদের সংগঠন ফোসিনের সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “নতুন পুলিশ কমিশনার উদ্যোগী হয়েছেন। থানায় দুর্ব্যবহারের অভিযোগ আমাদের কাছেও আসে। তবে দেখতে হবে নির্দেশ যেন সব সময় অফিসাররা মানেন।”
|