ক্ষমতায় এসে মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি দফতরে কর্ম সংস্কৃতি ফেরানোর ঘোষণাই সার। গত বছর নদিয়া হস্ত শিল্প মেলার খরচের ৬ লক্ষ ৫২ হাজার টাকার মধ্যে কানাকড়িও দেয়নি রাজ্য সরকার। এ বছর মেলা আয়োজনের দিন ঘনিয়ে এসেছে। কিন্তু এখনও আগের বছরেরই টাকা না মেলায় অনিশ্চিত মেলার ভবিষ্যৎ। এতদিনেও টাকা আসার কারণ নিয়ে স্পষ্ট কোনও ব্যাখা নেই রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্প মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের কাছে। স্বপনবাবু বলেন, “বিষয়টি জানি। ওই মেলার জন্য যারা টাকা পান তারা সকলেই টাকা পেয়ে যাবেন।” কিন্তু এত দিনেও কেন মেলার বকেয়া টাকা মিটিয়ে দেওয়া হল না? এর অবশ্য কোনও সদুত্তর মেলেনি মন্ত্রীর কাছ থেকে। এমত অবস্থায় জনপ্রিয় শিল্প মেলা বন্ধ হতে বসায় হতাশ দফতরের কর্মী থেকে নদিয়াবাসী।
জেলা শিল্প কেন্দ্রের আধিকারিক সৈকত দত্ত বলেন, “গত বছরের বকেয়া টাকা এখন পাইনি। পাওনাদাররা টাকা না পেলে কাজ করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। আবার এই বছরের মেলার জন্য খরচের অনুমোদন চেয়ে আমরা অনেক আগেই রাজ্যকে পাঠিয়েছি। কিন্তু সেই বিষয়ে এখনও আমাদের কিছু জানান হয়নি। তাই এ বছর মেলার আয়োজন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।”
|
জেলার আধিকারিকদের দাবি, ফি বছর ১৭ থেকে ২০ জানুয়ারির মধ্যে মেলা শুরু হয়। এ বছর মেলা করতে হলে এখনই তার জন্য তোড়জোড় শুরু করতে হবে। কিন্তু এখনও অবধি গত বারেরই বকেয়া টাকা না মেলায় মেলাও প্রস্তুতিও থমকে রয়েছে। দফতরের কর্মীরা এ বছরের মেলা আয়োজনের ব্যাপারে হাল ছেড়েছেন।
২০০৮ সালে কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরির মাঠে প্রথম এই মেলার আয়োজন করেছিল জেলা শিল্প কেন্দ্র। পরপর দু’বার এখানে মেলা হলেও লোকসমাগম বাড়তে থাকায় পরে সিএমএস হাই স্কুলের মাঠে মেলা সরিয়ে নিয়ে যায় জেলা শিল্প কেন্দ্র। সাতদিনের পরিবর্তে মেলা হত ন’দিন ধরে। দফতর সূত্রের খবর, প্রথম বার রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে শিল্পী এসেছিলেন ১০৮ জন। বিকিকিনি হয়েছিল প্রায় ৮ লক্ষ টাকা। ২০০৯ সালে আসেন ২০৯ জন শিল্পী। বিক্রির পরিমান বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ২৭ লক্ষ টাকা। ২০১০ সালে শিল্পী আসেন ৩১০ জন। বিক্রি হয় প্রায় ৪৪ লক্ষ। ২০১১ সালে শিল্পী এসেছিলেন ৩৫০ জন। বিক্রি হয় প্রায় ৫১ লক্ষ টাকা। গত বছর শিল্পী আসেন ৩৯৫ জন। আর বিক্রি বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে ৬১ লক্ষ টাকা। মেলায় স্টল দেওয়ার জন্য শিল্পীদের কাছ থেকে কোনও টাকা নেওয়া হত না। পাশাপাশি তাঁদের থাকারও ব্যবস্থাও করা হত। কোচবিহারের বাঁশের তৈরি শিল্পকর্ম থেকে নকশালবাড়ির শিল্পীদের তৈরি কাঠের মুখোশ, মেদিনীপুরের মাদুর, ঘূর্ণীর মৃৎশিল্প, কার্পেট, বুটিকের কাজ এমন নানা শিল্প সামগ্রী কিনতে প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজির হতেন হাজার হাজার মানুষ। কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা অভিজিৎ ভট্টাচার্য বলেন, “মেলায় উৎকৃষ্ট মানের শিল্প সামগ্রী পাওয়া যেত। মেলাটা বন্ধ হয়ে গেলে গোটা জেলার মানুষ
হতাশ হবেন।”
এ রকম একটি জনপ্রিয় মেলার ভবিতব্য কী বন্ধ হয়ে যাওয়া? স্বপনবাবুর জবাব, “এ বিষয়ে নিশ্চিত ভাবে কিছু বলতে পারছি না।” |