ইস্পাত কারখানার জমি খাস করল সরকার
স্পাত কারখানা ‘বেঙ্গল এনার্জি’-র বেশ কিছু পরিমাণ জমি খাস করল সরকার। খড়্গপুরের রূপনারায়ণপুর এলাকায় ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে ওই কারখানার মোট ৬৮.০৯ একর জমি দু’দফায় খাস করেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর। জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক অরিন্দম দত্ত বলেন, “সরকারি অনুমতি ছাড়াই সিলিং বহির্ভূত জমি রাখার জন্য তা খাস করা হয়েছে।”
বেঙ্গল এনার্জি কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ। কারখানার সিনিয়ার জেনারেল ম্যানেজার আর ডি তেওয়ারি বলেন, “সরকার জমি দিতে পারেনি। তাই নিজেরাই প্রয়োজনীয় জমি কিনেছিলাম। ২০০৯ সালে ১৪ ওয়াই অনুমতি চেয়ে আবেদন জানিয়েছিলাম। তারপর বারেবার তদ্বির করেছি। অনুমতির আশ্বাসও মিলেছিল। কিন্তু কাজ হয়নি। এখন হঠাৎ জমি খাস করে দিল।”
জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, নিয়ম বহির্ভূত ভাবে যে সব সংস্থা জমি রেখেছে, তা খাস করার প্রক্রিয়া চলবে। চলতি বছরের শুরুতে খাস করা হয়েছিল চন্দ্রকোনা রোডের কাছে প্রয়াগ ফিল্ম সিটির জমি। প্রয়াগ গোষ্ঠীর প্রায় ২৪ একর জমি খাস করা হয়। অগস্ট মাসে মেদিনীপুর শহর ও ঝাড়গ্রামে ‘রোজ ভ্যালি’র প্রায় ৫ একর জমি খাস করা হয়। ভূমি সংস্কার দফতর সূত্রে খবর, বেঙ্গল এনার্জির জমি খাস করা হয়েছে দু’দফায়। প্রথম দফায় ৪৭ একর খাস করা হয়েছিল। আর বুধবার আরও ২১.০৯ একর জমি খাস করা হয়। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, নিয়মানুযায়ী কোনও ব্যক্তি বা সংস্থা ২৪.২৯ একর জমি রাখতে পারেন। তার বেশি জমি রাখতে গেলে সরকারি অনুমতি (১৪ ওয়াই) প্রয়োজন। যে সব সংস্থা ওই অনুমতি ছাড়াই সিলিং বহির্ভূত জমি রেখেছেন তাঁদেরই জমি খাস করা হচ্ছে।
খড়্গপুরের রূপনারায়ণপুরে ‘বেঙ্গল এনার্জি’ কারখানা। —ফাইল ছবি।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৩-১৪ অর্থবর্ষে রাজ্যে মোট ১২,৪২০ একর জমি খাস করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। এ জন্য প্রতিটি জেলার ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরকে লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছে রাজ্য সরকার। প্রশাসন সূত্রে খবর, পশ্চিম মেদিনীপুরের লক্ষ্যমাত্রা ১০৪৪ একর, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ক্ষেত্রে ৯০০ একর, বাঁকুড়ার ৭৯২ একর, বর্ধমানের ১১৮৮ একর, বীরভূমে ৬৮৪, পুরুলিয়ার ৭২০ একর ইত্যাদি। সেই মতো জমি খাস করার প্রক্রিয়া চলছে। এ দিকে, সরকার জমি নিয়ে নেওয়ায় কারখানা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা আপাতত স্থগিত করে দিয়েছেন বেঙ্গল এনার্জি কর্তৃপক্ষ। ২০০৯ সালে চালু হওয়া এই কারখানায় বছরে .৫ মিলিয়ন টন ইস্পাত তৈরির অনুমোদন ছিল। ২০০৯ সাল থেকে উৎপাদন শুরুও হয়েছিল। সঙ্গে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎও তৈরি করছিল সংস্থাটি। সম্প্রতি আরও ৩টি ব্লাস্ট ফার্নেস, একটি ফেরোওয়্যাল, একটি স্ট্রাকচার রিলোডিং মিল এবং ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ তৈরির পরিকল্পণা গ্রহন করা হয়। আগামী বছরের গোড়ায় এই কাজ শুরুর কথা ছিল। কারখানার সিনিয়ার জেনারেল ম্যানেজার আর ডি তেওয়ারি বলেন, “আপাতত আমরা কারখানা সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত স্থগিত রেখেছি। আমাদের কারখানায় এখন সাড়ে বারোশো শ্রমিক কাজ করেন। কারখানা সম্প্রসারিত হলে আরও আড়াই হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হত। বর্তমানে যে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি রয়েছে, সেখান থেকে আমরা সরকারকে ২ টাকা ৮০ পয়সা দরে ৩২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করি। নতুন প্রকল্প চালু হলে আরও বিদ্যুৎ দিতে পারতাম।”
কিন্তু নিয়ম মাফিক ১৪ ওয়াই ছাড়া জমি রাখতে সরকার তো তা খাস করবেই। তাছাড়া চাইলে জমি ফের নিজেদের মালিকানায় নিয়ে আসতে পারেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। সে জন্য বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী দীর্ঘ মেয়াদি লিজের আবেদন জানাতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রেও সমস্যা রয়েছে। আর ডি তেওয়ারির কথায়, “লিজের জমি থেকে ব্যাঙ্ক ঋণ পাওয়া যাবে। এই জমি তো মালিকের নামে ছিল।”
প্রশাসন অবশ্য এ ক্ষেত্রে কড়া মনোভাব নিচ্ছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর জানিয়েছে, নিয়ম বহির্ভূত ভাবে যে সব সংস্থা জমি রেখেছে, তা খাস করার প্রক্রিয়া চলবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.