|
|
|
|
শিক্ষিকাকে ছাড়পত্র না দেওয়ায় বিতর্ক ময়ূরেশ্বরে
নিজস্ব সংবাদদাতা • ময়ূরেশ্বর |
এক শিক্ষিকার বদলি সংক্রান্ত ছাড়পত্র না দেওয়াকে ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে ময়ূরেশ্বরের একটি মেয়েদের স্কুলে। অভিভাবকদের একাংশের আশঙ্কা, ঘটনার জেরে দুই শিক্ষিকার কাজিয়ায় স্কুলের পঠনপাঠনই ব্যাহত হতে বসেছে। ঘটনাটি ময়ূরেশ্বর বালিকা বিদ্যালয়ের।
স্কুল সূত্রে খবর, সম্প্রতি ওই স্কুলের ৯ জন শিক্ষিকা স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় বসেন। ৩ জন ইন্টারভিউয়ের ডাক পান। দু’জন উত্তীর্ণ হন। ইতিহাসের শিক্ষিকা এষা বন্দ্যোপাধ্যায় হুগলির স্কুলে নিয়োগপত্র পান। আর ইতিহাসেরই এক পার্শ্বশিক্ষিকা সিউড়ির একটি স্কুলের নিয়োগপত্র পান। পার্শ্বশিক্ষিকা ময়ূরেশ্বরের স্কুল থেকে পদত্যাগ করে সিউড়ির স্কুলে যোগও দিয়েছেন। কিন্তু গোল বেধেছে এষাদেবীকে নিয়েই। এখনও তিনি নতুন স্কুলে যোগ দেওয়ার ছাড়পত্র পাননি।
প্রধান শিক্ষিকা রিনা রায়ের অভিযোগ, “শুধু এষা বন্দ্যোপাধ্যায়ই নন, নয় জনই প্রয়োজনীয় অনুমতি না নিয়ে এসএসসি পরীক্ষায় বসেছিলেন। এমনকী, এষাদেবী স্থানীয় এক বিজেপি নেতাকে সঙ্গে নিয়ে চাপ সৃষ্টি করে আমার কাছ থেকে অভিজ্ঞতার শংসাপত্র লিখিয়ে নিয়েছেন। নতুন স্কুলে সুযোগ পেয়ে এষাদেবী এখন প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র আদায়ের জন্যও আমাকে চাপ দিচ্ছেন।” অন্য দিকে, অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করে এষাদেবীর পাল্টা দাবি, “স্কুল কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই আমি পরীক্ষায় বসেছি। অথচ এখন প্রধান শিক্ষিকা নতুন স্কুলে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে ছাড়পত্র দিচ্ছেন না।” ওই ঘটনায় রিনাদেবী খোদ জেলা স্কুল পরিদর্শকের (মাধ্যমিক) বিরুদ্ধেও ছাড়পত্র দেওয়ার জন্য তাঁর উপরে চাপ সৃষ্টি করার অভিযোগ তুলেছেন।
প্রশাসন সূত্রে খবর, নিয়ম অনুযায়ী কর্মরত শিক্ষকদের ক্ষেত্রে স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় বসার আগে লিখিত ভাবে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়। পরিচালন সমিতির বৈঠক ডেকে রেজোলিউশনের মাধ্যমে সেই আবেদন মঞ্জুর হলেই কর্মরত শিক্ষকেরা ওই পরীক্ষায় বসার সুযোগ পান। এর পরে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে ইন্টারভিউয়ের সময় স্কুল কর্তৃপক্ষের দেওয়া অভিজ্ঞতার শংসাপত্র জমা দিতে হয়। সফল হলে আগের স্কুলের থেকে সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র নিয়ে নতুন স্কুলে জমা করতে হয়। তবেই তিনি নতুন স্কুলে কাজে যোগ দিতে পারেন। এষাদেবী বলছেন, “অনুমতি মেলার প্রমাণ আমার কাছে আছে।” তাঁর দাবি, “প্রধান শিক্ষিকার কাছ থেকে জোর করে অভিজ্ঞতার শংসাপত্র লিখিয়ে নিইনি। তিনি ভেবেছিলেন, আমি ইন্টারভিউয়ে পাশ করব না। তাই এখন উল্টো সুর।” রিনাদেবীর আবার পাল্টা দাবি, “ওই শিক্ষিকা বেআইনি কাজ করেছেন। তার উপর ইতিমধ্যেই ইতিহাসের পার্শ্ব শিক্ষিকা অন্যত্র চলে গিয়েছেন। ওই বিষয়ের স্কুলে এখন একমাত্র শিক্ষিকা এষাদেবীই। তিনিও চলে গেলে স্কুল কী ভাবে চলবে!”
এ দিকে, স্কুলের অভিভাবক বংশী লেট, দিলীপ সাহারা বলেন, “এ ভাবে সবাই স্কুল ছেড়ে চলে গেলে আমাদের মেয়েদের পড়াশোনার কী হবে? তা ছাড়া প্রধান শিক্ষিকা তো বলছেনই, তিনি কোনও অনুমতি না নিয়েই এসএসসি-তে বসেছিলেন।” যদিও এষাদেবীর পাশেই দাঁড়িয়েছেন স্কুল পরিচালন সমিতির সম্পাদক জগন্নাথ গুঁই। তিনি বলেন, “এষাদেবী এসএসসি পরীক্ষায় বসার আগে প্রয়োজনীয় অনুমতি নিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও প্রধান শিক্ষিকা কেন তাঁকে ছাড়পত্র দিতে চাইছেন না, বুঝতে পারছি না। আগামী ১৩ ডিসেম্বর পরিচালন সমিতির বৈঠকে আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব।”
গোটা ঘটনায় প্রধান শিক্ষিকা জেলাশাসকের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন বলে দাবি করেছেন। যদিও জেলাশাসক জগদীশ প্রসাদ মিনা বলেন, “এখনও কিছু জানি না। অভিযোগ হাতে পেলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেব।” অন্য দিকে, জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) আশরাফ আলি মির্জার দাবি, প্রধান শিক্ষিকার অভিযোগ ভিত্তিহীন। মির্জা বলেন, “এসএসসি-র নিয়োগপত্র পাওয়ার পরে কোনও শিক্ষককেই আটকে রাখা যায় না। আটকে রাখলে স্কুলের আর্থিক সাহায্য বন্ধ হয়ে যাবে। আমি সেই নিয়মের কথাই রিনাদেবীকে স্মরণ করিয়েছি।” তাঁর পরামর্শ, অনুমতি না নিয়ে থাকলে, স্কুল কর্তৃপক্ষ ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে স্কুল সার্ভিস কমিশনে অভিযোগ জানান। প্রয়োজনে আদালতের দ্বারস্থও হতে পারেন। |
|
|
|
|
|