পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে মন্ত্রীকে চিঠি
জল নিয়ে জলঘোলা, সিউড়িতে সরব তৃণমূলই
ল নিয়ে জল ঘোলা। সাড়ে ৬ বছরের বেশি সময় পরে সিউড়ির জল প্রকল্পের উদ্বোধন হবে কাল, শনিবার। তার আগেই তৃণমূলেরই ৫ কাউন্সিলর এই খাতে বরাদ্দ টাকা নয়-ছয়ের অভিযোগ তুললেন দলীয় পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, এ ব্যাপারে তাঁরা দলীয় পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকেও লিখিত ভাবে জানিয়েছেন। একই অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন আরও তিন কংগ্রেস কাউন্সিলর। দলের কাউন্সিলররা সরব হওয়ায় স্বভাবতই পুরপ্রধান উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় খানিকটা অস্বস্তিতে পড়েছেন বলে মনে করছেন এলাকার বাসিন্দা থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। তবে অভিযোগ মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন পুরপ্রধান।
সিউড়ির অন্যতম জ্বলন্ত সমস্যা জল। সিউড়ির বাসিন্দাদের ক্ষোভ, ১৩৭ বছরের পুরনো এই পুরসভা আজও জলের সুরাহা করে উঠতে পারল না। এখনও তাঁদের প্রতিদিন পানীয় জলের জন্য হা-পিত্যেশ করে থাকতে হয়। জলের ব্যাপারে সিউড়ি পুরসভার যে কাউন্সিলর সবচেয়ে অভিজ্ঞ বলে পরিচিত, অন্যতম অভিযোগকারী তৃণমূল কাউন্সিলর (১৫ নম্বর) দীপক দাসের কথায়, “সিউড়ি পুর-এলাকায় ৮০ হাজার মানুষের বাস। এ ছাড়াও আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস, বহুতল, হাসপাতাল এবং বিভিন্ন প্রয়োজনে আরও ২০ হাজার লোক বাইরে থেকে প্রতিদিন এ শহরে আসেন। সরকারি নিয়মানুযায়ী, এক লক্ষ লোকের জন্য কম করে প্রতিদিন ২০ লক্ষ গ্যালন জলের প্রয়োজন।” প্রসঙ্গত, গত মার্চ মাসে দীপকবাবুরাই তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিলেন।
রঙের পোচ জলাধারে। বসেনি পাইপলাইনই। —নিজস্ব চিত্র।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, জলের এই সমস্যা মেটাতে ২০০৭ সালের মে মাসে জওহরলাল নেহরু ন্যাশন্যাল আরবান রিনিউয়াল মিশন (জেএনএনইউআরএম) আওতায় ১০.১৪ কোটি টাকা অনুমোদিত হয়। ওই টাকার ৮০ শতাংশ কেন্দ্র, ১৫ শতাংশ রাজ্য ও ৫ শতাংশ পুরসভার দেওয়ার কথা। সেই সময় পুরবোর্ডের ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস। তখন ৪.৪৯ কোটি টাকা পায় পুরসভা। দুর্নীতির প্রসঙ্গ তুলে শহর কংগ্রেসের তরফে একটি প্রচারপত্র ছাপানো হয়েছে। তাতে দাবি করা হয়েছে, তৎকালীন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সহযোগিতায় সিউড়ির জল প্রকল্পের অনুমোদন মেলে। সেই সময় সাড়ে চার কোটি টাকা মতো পুরসভা পায়। ওই টাকায় দু’টি ওভারহেড ও দু’টি আন্ডারগ্রাউন্ড রিজারভার, জল সরবরাহের জন্য ৫১ কিলোমিটার পাইপ ও ৯০ লক্ষ টাকায় আনুসঙ্গিক যন্ত্রপাতি কেনা হয়। এ ছাড়া, তিলপাড়ায় ময়ূরাক্ষী নদীতে ৮টি বোরিং করা হয়। তার পরেও পুরসভার হাতে ৬০ লক্ষ টাকা ছিল। ২০১০ সিউড়ি পুরসভা তৃণমূল দখল করে। কংগ্রেসর শহর সভাপতি চঞ্চল চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, “তার পর থেকেই জল প্রকল্পের কাজ থমকে যায়। অথচ তৃণমূল পুরবোর্ডে ক্ষমতায় আসার পরে প্রায় দ্বিগুণ টাকা পায়। এক প্রকার কোনও কাজই করেনি বর্তমান বোর্ড। অথচ ওই বাবদ কোনও টাকা ফান্ডে নেই। এ ব্যাপারে ফিরহাদ হাকিমের কাছে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। ভাঁওতা দিয়ে জল প্রকল্পের উদ্বোধন করা হচ্ছে।”
এ দিকে, দীপক দাস, চঞ্চল চট্টোপাধ্যায় ছাড়াও একই অভিযোগ তুলেছেন তৃণমূল কাউন্সিলর অনিতা কাহার, পূর্ণিমা মাহারা, মহম্মদ সামিমা, প্রীতি ভট্টাচার্য এবং কংগ্রেসের তপন সুকুল (প্রাক্তন পুরপ্রধান), উত্তম দাস, ইয়াসিন আখতার। মন্ত্রীর কাছে পাঠানো চিঠি তাঁরা সাংসদ শতাব্দী রায়, জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল, সিউড়ির বিধায়ক স্বপনকান্তি ঘোষের কাছেও পাঠিয়েছেন। তাঁদের দাবি, প্রকল্পটি রূপায়ণে যথেষ্ট সময় ও অর্থ পাওয়া গিয়েছে। তার পরেও কাজ ৫০ শতাংশ মতো হয়েছে। পুরনো জল ব্যবস্থায় শহরের ৫০ শতাংশ মানুষ ঠিক মতো জল পান না। অসম্পূর্ণ অবস্থায় নতুন জল প্রকল্প চালু হলেও কাজের কাজ কিছু হবে না। শুধু তাই নয়, এ পর্যন্ত ওই প্রকল্পে ১২ কোটি টাকা পাওয়া গিয়েছে। ৫ কোটি টাকা নষ্ট করেছেন পুরপ্রধানই। দীপকবাবু বলেন, “প্রকল্পের ব্যাপারে সবটাই পুরমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে। মন্ত্রী ও জেলা সভাপতির উপরে আমাদের আস্থা আছে। আশা করি তাঁরা ব্যবস্থা নেবেন।” পুরপ্রধান অবশ্য দাবি করেছেন, “বর্তমানে প্রকল্পটির খরচ বেড়ে ১৪.১৭ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। হিসেব মতো ২০১০ সালে প্রকল্পটি চালু হয়ে যাওয়ার কথা। আগের বোর্ডের উদাসীনতা, তৎকালীন রাজ্য সরকারের অসহযোগিতা ও অর্থের কারণে কাজ প্রায় দু’বছর বন্ধ ছিল।” তিনি বলেন, “জেলা সভাপতি ও পুরমন্ত্রীর সহযোগিতায় আরও ৮ কোটি টাকা মিলেছে। সব কাজই শেষ হয়ে গিয়েছে। শুধু নতুন পাইপ লাইন বসনোর কাজ বাকি আছে। সামনে গরম কাল আসছে। এলাকাবাসীর কথা মাথায় রেখে তাই তাড়াতাড়ি উদ্বোধন করা হচ্ছে। পরিষেবা দেওয়ার পাশাপাশি পাইপের কাজও চলবে।”

অভিযোগ ভিত্তিহীন। শুধুমাত্র নতুন
পাইপ লাইন বসানোর কাজ বাকি আছে।
উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় (পুরপ্রধান)

সবটাই পুরমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে।
আশা করি ব্যবস্থা নেবেন।
দীপক দাস (তৃণমূল কাউন্সিলর)
জল নিয়ে এই চাপানউতোর নিয়ে বিরক্ত শহরের মানুষ। তাঁরা বলছেন, “জল নিয়ে হাহাকার পড়ে যায় এই শহরে। শহরবাসীর দাবি, দ্রুত জল প্রকল্প চালু হোক সমস্ত নিয়মনীতি মেনে। দুর্নীতি হয়ে থাকলে প্রশাসন তদন্ত করে ব্যবস্থা নিক।” অনুব্রত মণ্ডল বলেন, “জল সমস্যা আছে। তাই প্রকল্পটি উদ্বোধন হওয়া জরুরি। সেই সঙ্গে বাকি কাজও চলবে।” সাংসদ শতাব্দী রায়ও বলেন, “সিউড়ির মানুষজন জলের সত্যিই খুব কষ্টে আছেন। তাই চেষ্টা করছি প্রকল্পটি যাতে যত শীঘ্র সম্ভব বাস্তবায়িত করা যায়।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.