|
|
|
|
লাভের আশায় বর্ষার পেঁয়াজ চাষে উৎসাহ
নিজস্ব সংবাদদাতা • কালনা |
চাহিদা থাকলেও লাভের নিশ্চয়তা না থাকায় অনেকক্ষেত্রেই বিকল্প চাষের ঝুঁকি নিতে চান না চাষিরা। বিশেষত, পেঁয়াজ বা ওই ধরণের মরসুমি চাষের ক্ষেত্রে।
কিন্তু এ বছর কালনা মহকুমার কয়েকটি জায়গায় বেসরকারি উদ্যোগে শীতের বদলে বর্ষায় পেঁয়াজের চাষ করা হয়েছে। কাঠা পিছু ফলন কম হলেও লাভ ভাল হওয়ায় অনেক চাষিই আগামী বছর বর্ষায় পেঁয়াজ চাষে উৎসাহ দেখিয়েছেন। এ বছর জেলায় ৪৮৫০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। তার মধ্যে কালনা মহকুমার ২৮৯০ হেক্টর জমিও রয়েছে।
চাষিরা জানিয়েছেন, যেহেতু জেলায় পেঁয়াজ সংরক্ষণের কোনও জায়গা নেই, তাই জমি থেকে তোলার পরেই বিক্রি করে দিতে হয়। সেক্ষেত্রে শীতকাল কখনও লাভজনক আবার কখনও উল্টোটা। তবে কৃষি বিজ্ঞানীরা জানান, বর্ষায় বাজারে পেঁয়াজের চাহিদা বেশি। ফলে লাভ নিশ্চিত। তাঁরা আরও জানান, এতদিন বর্ষায় পেঁয়াজ ফলানো নিয়ে স্পষ্ট ধারণা ছিল না জেলার চাষিদের। কিন্তু উদ্যান পালন দফতর হুগলি, মুর্শিদাবাদ-সহ কয়েকটি জায়গায় বিকল্প চাষ হিসেবে বর্ষায় পেঁয়াজের চাষ করায়। বর্ধমানে সরকারি ভাবে না হলেও বেসরকারি উদ্যোগে ওই চাষ হয়। পূর্বস্থলী ১ ব্লকে শাস্ত্রী স্মৃতি সঙ্ঘ, পূর্বস্থলী ২ ব্লকের মোয়াইল গ্রামে ইফকোর উদ্যোগে ও বর্ধমান সদর লাগোয়া কল্যাণ গ্রামে কলা নবগ্রামের এক আশ্রমের জমিতে এই ধরণের পেঁয়াজের চাষ হয়। তিনটি প্রতিষ্ঠানকেই বিনা মূল্যে বীজ ও প্রযুক্তিগত ভাবে সাহায্য করেন বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়েক সব্জি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক তপনকুমার মাইতি। |
|
পেঁয়াজ হাতে চাষি।—নিজস্ব চিত্র। |
সম্প্রতি নাদনঘাট পঞ্চায়েতের শাস্ত্রী সঙ্ঘ তাদের বিঘেখানেক জমিতে পেঁয়াজ চাষ করে। চাষের সাফল্য দেখতে হাজির ছিলেন কালনা মহকুমার কৃষি আধিকারিক স্বপনকুমার মারিক, মহকুমার সহ-কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষ এবং পূর্বস্থলী ১ ব্লকের কৃষি আধিকারিক। তাদের সামনেই পেঁয়াজ তোলা হয়। জমির গড়ন পরীক্ষা করেন তাঁরা। জয়শ্রীর সম্পাদক জনার্দন ঘোষের দাবি, শীতকালীন পেঁয়াজ চাষে যেখানে কাঠা প্রতি চার কুইন্ট্যাল ফলন মেলে, সেখানে বর্ষাকালীন চাষে কাঠা পিছু আড়াই কুইন্ট্যাল ফলন হয়েছে। তবে দাম ভাল মেলায় তারা নিজেরা তো বটেই এলাকার বহু চাষিও বর্ষায় পেঁয়াজ চাষের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে তাঁর দাবি। এলাকার চাষি ফকির মাঝি, দিলীপ বৈরাগ্যরা বলেন, “ওই সংস্থার কাছে বর্ষায় পেঁয়াজ চাষের কথা শুনে প্রথমে ফলন নিয়ে বেশ কিছুটা অনিশ্চয়তা ছিল। কিন্তু সাফল্য দেখে আমরাও উৎসাহিত।”
মহকুমা কৃষি আধিকারিক স্বপনবাবু জানান, নাদনঘাটে এগ্জিকিউটিভ ডার্ক রেড প্রজাতির পেঁয়াজের চাষ হয়েছিল। এ বছর পুজোর আগে ও পরে টানা বৃষ্টি হওয়ায় এবং জমিতে চারা তৈরির সময়ে বেশি তাপমাত্রা পাওয়ায় পেঁয়াজের ফলন ভাল হয়েছে। ফলন দেখে মনে হচ্ছে এই প্রজাতিটি দুর্যোগ মোকাবিলাতেও সফল। তিনি আরও বলেন, “বেসরকারি উদ্যোগে পেঁয়াজ চাষের সাফল্যের কথা জেলা উদ্যাল পালন আধিকারিককে জানানো হয়েছে। আগামী মরসুমে এ ধরণের চাষে ভতুর্কি দেওয়ার ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।” সহ-কৃষি অধিকর্তা পার্থবাবুর কথায়, “বিকল্প চাষে চাষিদের অভিযোগ থাকে যে দাম মিলছে না। এক্ষেত্রে তা হবে না। কারণ শীতকালীন পেঁয়াজ ওঠার পরে মাস তিনেক তার যোগান থাকে। ফলে লাভের নিশ্চয়তা রয়েছে।”
বিষয়টি নিয়ে ফোনে কৃষি বিদ্যালয়ের অধ্যাপক তপনবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “বর্ধমানে যে তিনটে জায়গায় বর্ষায় পেঁয়াজ চাষ হয়েছে সেখানে ফলন ভালই হয়েছে। অতিবর্ষণে কিছু চারা নষ্ট না হলে আরও ফলন বাড়ত।” তাঁর পরামর্শ, “জেলায় যেখানকার জমি উঁচু ও জল নিকাশির ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে আগামী বর্ষায় পেঁয়াজ চাষ করলে সাফল্য মিলবে। চাষিরাও লাভের মুখ দেখতে পাবেন।” |
|
|
|
|
|