অভিযান সত্ত্বেও লাগাম নেই বিদ্যুৎ কারচুপিতে
ধারাবাহিক অভিযান সত্ত্বেও বিদ্যুতের মিটারে কারচুপিতে কিছুতেই লাগাম টানা যাচ্ছে না শিল্পাঞ্চল জুড়ে। গত দেড় মাসে এমন কয়েকশো কারচুপি ধরা পড়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ৫ জনকে। তবু কারচুপির তল খুঁজে পেতে হিমসিম বিদ্যুৎ কর্তারা।
আসানসোল শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় মিটারে কারচুপি করে বিদ্যুৎ চুরির অভিযোগ উঠছিল বহু দিন ধরেই। কিন্তু হদিস পাচ্ছিলেন না পর্ষদ কর্তারা। অক্টোবরে প্রথম কারচুপি ধরা পড়ে কুলটির নিউ রোড এলাকার একটি মিষ্টি ও একটি খাবারের দোকানে। পর্ষদের কর্তারা এর পরে একটি বিশেষজ্ঞ দল গড়ে শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন প্রান্তে হানা দিতে শুরু করেন। রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার আসানসোল বিভাগের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার মিতেশ দাশগুপ্ত বলেন, “এই কয়েক মাসে আমরা প্রায় চারশোটি মিটারে কারচুপির ঘটনা ধরেছি। এর জন্য জরিমানা আদায় করা হয়েছে প্রায় ৩ কোটি টাকা।” কিন্তু এর পরেও গ্রাহকদের সম্বিত ফিরছে না বলে দাবি করেছেন মিতেশবাবু। তিনি জানান, গ্রাহকেরা এখনও মিটারে কারচুপি করেই যাচ্ছেন। কেন গ্রাহকেরা এত বেপরোয়া? পর্ষদের এক কর্তার মতে, বিভিন্ন কারণে এই কাণ্ডে জড়িত গ্রাহকদের কড়া শাস্তি দেওয়া হচ্ছে না। আর্থিক জরিমানা দিয়েই পার পেয়ে যাচ্ছেন। ওই পর্ষদ কর্তা বলেন, “এই ধরনের বিদ্যুৎ চুরিতে দু’বছরের জন্য জেল হতে পারে।” তিনি জানান, কয়েক জন গ্রাহককে জেলে পাঠাতে পারলে কারচুপিতে লাগাম লাগানো সম্ভব।
রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার আসানসোল শাখার প্রধান মিতেশবাবু জানান, গ্রাহকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে যারা মিটারে কারচুপির কাজটি করছে, এমন অভিযোগে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের দু’জন রানিগঞ্জ, দু’জন আসানসোল রেলপাড় এবং এক জন সালানপুরের দেন্দুয়ার বাসিন্দা। মিতেশবাবুর দাবি, ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে সবিস্তার তথ্য জানা গিয়েছে। এই কাজটিতে তারা খুবই সিদ্ধহস্ত। তারা দিল্লি থেকে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের কাছে এই অপকর্মটি শিখে এসেছে। মিটারের মধ্যে একটি কম দামি ‘রেজিস্ট্যান্স’ লাগিয়ে এরা কারচুপি করছে। মিতেশবাবু জানান, এই যন্ত্রটি যে কোনও টেলিভিশন সেটে লাগানো হয়। শিল্পাঞ্চলের যে কোনও ছোটখাট ইলেকট্রনিক্সের দোকানে এটি পাওয়া যায়। এই যন্ত্রটি লাগানো থাকলে বিদ্যুতের মিটার অনেক ধীর গতিতে চলে। এক ধাক্কায় বিদ্যুৎ ব্যবহারের খরচ অনেক কমে যায়। মিতেশবাবু জানান, পুলিশ ও বিদ্যুৎ কর্তারা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এই কাজে যুক্ত রাঘব বোয়ালদের ধরার চেষ্টা চালাচ্ছে। পুলিশ ও বিদ্যুৎ কর্তারা অনুমান করছেন, এই কাজে একটি বড়সড় চক্র জড়িত আছে। কারণ গ্রাহক পিছু তারা ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত দর হাঁকে। স্বভাবতই প্রতি মাসে কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয় বলে অনুমান কর্তাদের। মিতেশবাবু বলেন, “আমরা প্রচার করছি, যে সব গ্রাহকেরা এখনও মিটারে কারচুপি করে বিদ্যুৎ চুরি করছেন, তাঁরা দোষ স্বীকার করে পর্ষদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে জরিমানা ও শাস্তির মাত্রা কম হবে। তা না হলে এ বার ধরা পড়লে কঠোরতম শাস্তির ব্যবস্থা করবে পর্ষদ।”
এক বিদ্যুৎ কর্তা জানান, আসানসোল শিল্পাঞ্চলে মিটারে কারচুপির পরিমাণ রাজ্যে সর্বাধিক। এই অবস্থায় এখানে ক্ষতির পরিমাণও অনেক। কারচুপি রুখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার নির্দেশও দেন বণ্টন সংস্থার চেয়ারম্যান কাম ম্যানেজিং ডিরেক্টর (সিএমডি) নারায়ণস্বরূপ নিগম। তিনি একটি বিশেষজ্ঞ দল তৈরি করে এই চুরি রোখার জন্য সক্রিয় হওয়ার পরামর্শ দেন। সম্প্রতি সে কাজ সরেজমিনে খতিয়ে দেখতেও আসানসোলে আসেন সিএমডি। বিদ্যুৎ কর্তাদের অনুমান, এই শিল্পাঞ্চলে এখনও কয়েকশো মিটারে কারচুপির ঘটনা ঘটছে। তাঁদের দাবি, সবগুলিই বন্ধ করা হবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.