মাওবাদী যোগের অভিযোগে ধৃত প্রৌঢ় চিকিৎসক
মাওবাদী শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ রাখায় অভিযুক্ত এক বৃদ্ধ ডাক্তারকে বুধবার রাতে গ্রেফতার করল আসানসোল পুলিশ। ২০১০-এ ওই অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর থেকেই পলাতক ছিলেন সমীর বিশ্বাস নামে বছর সাতষট্টির ওই ডাক্তার। পুলিশের দাবি, বুধবার রাতে আসানসোলের মহিশীলা কলোনিতে এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে ধরা হয় রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা-সংস্থা ইসিএলের ওই অবসরপ্রাপ্ত ডাক্তারকে। বৃহস্পতিবার আসানসোল আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক ধৃতকে ৬ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। তবে আদালত চত্বরে সমীরবাবুর ভাইপো বলে পরিচয় দিয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে জনৈক যীশু বিশ্বাস দাবি করেন, সমীরবাবু আত্মসমর্পণ করেছেন।
এ দাবি পুলিশ মানেনি। আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের এডিসিপি (সেন্ট্রাল) সুরেশকুমার চাডিভে বলেন, “নির্দিষ্ট খবরের ভিত্তিতেই ধরা হয়েছে সমীরবাবুকে।” তিনি জানান, ধৃতের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা, ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের মামলা করা হয়েছে।
মহিশীলা কলোনিতেই থাকেন সমীরবাবুর দাদা সুভাষ বিশ্বাস। এ দিন তাঁর বাড়ি গিয়ে বারবার ডাকাডাকি করা হলেও কোনও সাড়া মেলেনি। ফোনেও যোগাযোগ করা যায়নি।
পুলিশের গাড়িতে সমীর বিশ্বাস। ছবি: শৈলেন সরকার।
জঙ্গলমহলে মাওবাদী তৎপরতার বাড়বাড়ন্তের সময়ে মাওবাদীদের চিকিৎসা করার অভিযোগে নানা সময়ে জেরা করা হয়েছে গ্রামীণ চিকিৎসকদের। ২০১১-র নভেম্বরে জখম মাওবাদী নেত্রী সুচিত্রা মাহাতোর চিকিৎসা করার জন্য পশ্চিম মেদিনীপুরের জামবনির গ্রামীণ চিকিৎসক ভূদেব মাহাতোকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সে দিক থেকে এই প্রথম এ রাজ্যে কোনও এমবিবিএস পাশ করা ডাক্তার গ্রেফতার হলেন বলে দাবি রাজ্য পুলিশের একাংশের। এডিসিপি (সেন্ট্রাল) জানান, ২০১০-এর ১৯ এপ্রিল আসানসোল উত্তর থানার পুলিশ সমীরবাবুর বিরুদ্ধে মাওবাদী নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ও তাঁদের সাংগঠনিক কার্যকলাপে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ যোগাযোগের অভিযোগ দায়ের করে। সেই অভিযোগেই বুধবার সমীরবাবুকে ধরা হয়।
মাওবাদীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার অভিযোগে ছত্তীসগঢ় পুলিশ ২০০৭-এ গ্রেফতার করেছিল চিকিৎসক তথা মানবাধিকার-কর্মী বিনায়ক সেনকে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নয়াদিল্লি থেকে টেলিফোনে বিনায়কবাবু বলেন, “যে হেতু আমিও চিকিৎসক এবং আমারও একই ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছিল, এই বিষয়ে আমার আগ্রহ থাকা স্বাভাবিক। তবে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ যেহেতু খুবই স্পর্শকাতর বিষয়, বিশদ না জেনে কিছু বলা উচিত হবে না।”
পাঁচগাছিয়ায় ইসিএলের যে আবাসনে অকৃতদার সমীরবাবু থাকতেন ২০১০-এর ১৯ এপ্রিল সেখানে অভিযান চালায় পুলিশ। সমীরবাবুর দীর্ঘ দিনের সঙ্গী এক পরিচারককে গ্রেফতার করা হয়। সমীরবাবুর হদিস পুলিশ পায়নি। তবে পুলিশ দাবি করে, ওই আবাসনে মাওবাদীদের নানা কাগজপত্র পাওয়া গিয়েছে। সেখানে মাওবাদীদের যাতায়াত ছিল, সমীরবাবু তাঁদের টাকা-পয়সা দিতেন, এমনকী, প্রয়াত মাওবাদী নেতা কিষেনজি এবং আর এক মাওবাদী নেতা বিক্রম ওরফে অর্ণব দামের চিকিৎসাও তিনি করেছেন বলে দাবি করা হয়। এডিসিপি (সেন্ট্রাল) অবশ্য বলেন, “উনি কার চিকিৎসা করেছিলেন, সে ব্যাপারে নির্দিষ্ট তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে সব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
২০১০-এর এপ্রিলে সমীরবাবুর বাড়িতে পুলিশি অভিযানের প্রতিবাদ জানিয়ে রাস্তায় নেমেছিল তৃণমূল। দলের নেতা তথা বারাবনির বর্তমান বিধায়ক বিধান উপাধ্যায় সেই সময়ে দাবি করেছিলেন, ওই চিকিৎসককে ফাঁসিয়েছে সিপিএম। এ দিন এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া চাওয়া হলে বিধানবাবু বলেন, “আইন নিজের পথে চলবে।” পক্ষান্তরে আসানসোলের সিপিএম সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরীর বক্তব্য, “২০১০-এ নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই পুলিশ ওই ডাক্তারের বাড়িতে অভিযান চালিয়েছিল।” তাঁর সংযোজন, “তৃণমূল এক সময়ে মাওবাদীদের হাত ধরেছিল। এখন তাঁদেরই গারদে পুরছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.