ডাক্তারবাবুকে দেখতে ভিড় জমল আদালতে
ভাল ডাক্তার হিসেবে তাঁর সুনাম ছিল এলাকায়। বৃহস্পতিবার সকালে তাই মাওবাদী নেতা-কর্মীদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ যোগাযোগের অভিযোগে চিকিৎসক সমীর বিশ্বাসের গ্রেফতার হওয়ার খবর শুনে চমকে গিয়েছেন আসানসোলের অনেকেই। তাঁকে দেখতে এ দিন অনেকে আসানসোল আদালতে যান। পুলিশি ঘেরাটোপে অবশ্য ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়নি কারও।
প্রায় তিন বছর তাঁকে দেখা যায়নি এলাকায়। বারাবনির পাঁচগাছিয়ার বাসিন্দারা শেষ বার সমীরবাবুকে দেখেছিলেন ২০১০-এর এপ্রিলে। আসানসোলের মহিশীলায় পৈত্রিক বাড়ি থাকলেও তিনি থাকতেন পাঁচগাছিয়ায় বারমুন্ডিয়া কোলিয়ারি লাগোয়া একটি খনি আবাসনে। ইসিএলের কাল্লা সেন্ট্রাল হাসপাতালে কর্মরত থাকাকালীন অবসর নেন ২০০৬ সালে। স্থানীয় বাসিন্দাদেরও চিকিৎসা করতেন তিনি।
পাঁচগাছিয়ার বাসিন্দারা জানান, রাতবিরেতে ঘুম থেকে তুলেও তাঁকে দিয়ে চিকিৎসা করানো যেত। এই অঞ্চলে বহু গরিব পরিবারের বাস। এলাকার বাসিন্দা বিশ্বকর্মা নুনিয়া বলেন, “আমরা চিকিৎসা করিয়ে কখনও তাঁকে টাকা দিইনি। উল্টে, ওষুধপত্র ও খাবার কেনার জন্য তাঁর থেকে পয়সা নিতাম।” আর এক জন প্রদীপ বাউড়ির কথায়, “প্রতি দিন একটি সাইকেলে বস্তি এলাকায় ঘুরতেন সমীরবাবু। বস্তি থেকে শিশুদের তুলে নিজের ঘরে নিয়ে গিয়ে খাওয়াতেন। জামাকাপড়, বইপত্রও দিতেন।”
বৃহস্পতিবার আসানসোল আদালতে সমীর বিশ্বাস। ছবি: শৈলেন সরকার।
২০১০ সালে পাঁচগাছিয়ায় তাঁর আবাসনে অভিযানের পরে পুলিশ দাবি করেছিল, সমীরবাবুর বাড়ি থেকে মাওবাদী লিফলেট, বই ও পত্রিকা পাওয়া গিয়েছে। রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা এ দিন জানান, ২০১০ সালের মার্চের শেষ দিকে পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনি থানার হাতিলোট জঙ্গলে মাওবাদী-যৌথবাহিনী সংঘর্ষ হয়। পুলিশের দাবি, মাওবাদীরা সেই লড়াইয়ে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই লড়াইয়ে কিষেণজি-সহ মাওবাদীদের কয়েক জন শীর্ষ নেতা গুলি ও মর্টারে জখম হন বলে পুলিশ শালবনি থানায় একটি এফআইআর করে। আসানসোল থেকে গিয়ে সমীরবাবু তাঁদের চিকিৎসা করেছেন বলেও সেই এফআইআরে উল্লেখ করা হয়েছিল। রাজ্য পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, আসানসোলে সমীরবাবুর কাছে মাওবাদী কর্মীরা যাতায়াত করতেন বলে তাঁদের কাছে খবর। পাঁচগাছিয়ার বাসিন্দাদের অবশ্য দাবি, এমন কোনও লোকজন তাঁরা দেখেননি।
আসানসোলে নানা সামাজিক সংগঠনের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন অকৃতদার সমীরবাবু। এমনই এক সংগঠনের কর্তা তথা চিকিৎসক মুক্তেশ ঘোষ জানান, প্রায় ২৫ বছর তাঁদের সহযোগী ছিলেন সমীরবাবু। তাঁর দাবি, সমীরবাবু ছাত্রাবস্থায় নকশাল আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন। তবে কখনওই প্রথম সারিতে এসে কাজকর্ম করেননি। মুক্তেশবাবু বলেন, “গত কয়েক বছর আমাদের কোনও যোগাযোগ ছিল না। আজ সকালে খবরটা শুনেই আদালতে দেখা করতে এসেছি।”
কর্মস্থলে অবশ্য কখনও কোনও সংগঠনের সঙ্গে জড়াননি সমীরবাবু। অফিসার হওয়ার সুবাদে শ্রমিক সংগঠনে যোগ দিতে না পারলেও আধিকারিকদের সংগঠনে নাম লেখাতেই পারতেন। সহকর্মীরা সেই অনুরোধও করেছিলেন। কিন্তু কখনও ইসিএল অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের খাতায় সমীরবাবু নাম লেখাননি বলে জানান সংগঠনের সম্পাদক দামোদর বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি শুধু বলেন, “ইসিএলের আধিকারিক ও শ্রমিক-কর্মীদের মধ্যে তিনি জনপ্রিয় ছিলেন।”
এ দিন আসানসোল আদালত চত্বরে গিয়েছিলেন ধৃত সমীরবাবুর কয়েক জন আত্মীয়-পরিজন। তাঁরা অবশ্য সমীরবাবুর সঙ্গে মাওবাদীদের যোগাযোগের অভিযোগ নিয়ে মুখ খুলতে চাননি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.