|
|
|
|
ঔপন্যাসিক অনুপম |
গানের বদলে এ বার তাঁর গদ্য। লিখছেন সংযুক্তা বসু |
“যে ক’টা দিন তুমি ছিলে কাছে
কেটেছিল নৌকার পালে চোখ রেখে”
কিংবা
“আমাকে আমার মতো থাকতে দাও
আমি নিজেকে নিজের মতো গুছিয়ে নিয়েছি” |
এই সব মুখে মুখে ফেরা গানের লাইনের স্রষ্টা অনুপম রায় এ বার উপন্যাস লিখছেন। বইমেলায় বেরোতে চলেছে তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘সময়ের বাইরে।’
সময় কি দোষ করল যে সময়ের বাইরে হাঁটার চেষ্টা করছেন অনুপম?
হেসে বললেন তিনি, “ওটা তো উপন্যাসের নাম। আমার গল্পের নায়ক ঠিক এই সময়কার কলকাতার একজন। বয়স প্রায় পঁয়ত্রিশ। থাকে পার্ক সার্কাসে। এই সময়ে দাঁড়িয়েই সে সময়ের বাইরের কিছু বোধকে খোঁজার চেষ্টা করে।”
সব উপন্যাসেই একটা না একটা বোধ থাকে। কিন্তু গল্পটা কী?
উত্তরে জানালেন গীতিকার, তাঁর উপন্যাসের নায়কের নাম বিপ্লব। সে ট্যুইটারে ট্যুইট করে নিজের প্রতীকী নামে লেখে, “আমার আসার কথা ছিল, অথচ আমি আসছি না।”
ইন্টারনেট, ফেসবুক, ট্যুইটার ঘনঘন এসে পড়ে উপন্যাসের অলিতেগলিতে। মাত্র একশো চল্লিশ শব্দের সীমায় বাঁধা ট্যুইটারের জগৎ থেকে কি জন্ম নিতে পারে আধুনিক বাংলা সাহিত্য? প্রশ্ন ওঠে এ সব নিয়েও।
বিশ্ব চরাচরে ছেয়ে যাওয়া গ্লোবালাইজেশনের ধাক্কায় আলোড়িত হয় বিপ্লব। তাকে ঘিরে থাকে পাল্টে যাওয়া কলকাতা। সময়ের বদল দেখতে দেখতেও তার মনে হয় কোনও কিছুই আসলে এগোচ্ছে না। যা কিছু ঘটছে সবই কেমন অবিন্যস্ত। সারবত্তাহীন। এমনকী একাধিক প্রেমও বিপ্লবের জীবনে কেমন যেন এলোমেলো। এ সব নিয়েই এগিয়ে চলে বিপ্লবের জীবন আপন খেয়ালে। |
|
ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল। |
কিন্তু প্রশ্ন হল গান লেখা ছেড়ে, গান গাওয়া ছেড়ে হঠাৎ উপন্যাস লেখা কেন? এখন কি অনুপমের গান তেমন বিকোচ্ছে না? জোর প্রতিবাদ করে তিনি বলেন, “ উপন্যাস লিখছি কারণ আমি বেসিক্যালি গদ্যই লিখতাম আগে। সেই গদ্যকে একটা কাহিনির আদল দেওয়ার চেষ্টা করছি।”
সে তো গেল উপন্যাস লেখার কৈফিয়ত, কিন্তু গানের কী হল? “‘হেমলক সোসাইটি’ আমার লেখা গানে, সুরে শেষ রিলিজ করা ছবি। এই ছবির ‘জলফড়িং’, ‘এখন অনেক রাত’ গানগুলো খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। আরও পাঁচটা ছবিতে সুর দিয়েছি, গান লিখেছি। কিন্তু সেগুলো রিলিজ যদি না করে তা হলে তো আমার গান জনপ্রিয় হল কি হল না এই নিয়ে কোনও প্রশ্নই ওঠে না। শেষ বছর দেড়েক ‘হেমলক সোসাইটি’র গান ছাড়া আর কার লেখা, কোন বাংলা গানই বা জনপ্রিয় হয়েছে?” পাল্টা প্রশ্ন অনুপমের।
এ বছর অনুপমের অনুষ্ঠান বা জলসার সংখ্যা কম। আর সেই ফাঁকেই লিখে ফেলেছিলেন উপন্যাস জুন- জুলাই মাসে বসে। বললেন,“চিট ফান্ডের কেলেঙ্কারির পর থেকে বাজার মন্দা। তাই ফাংশনও প্রতিবারের তুলনায় এ বার কম।”
আসলে অনুপম রায়ের গান মানেই সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ছবি। সেই সৃজিত এখন ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত, কবীর সুমনকে দিয়ে ছবির সঙ্গীত পরিচালনা করাচ্ছেন। তা হলে কি সৃজিত-অনুপম জুটিকে আর পাওয়া যাবে না? অনুপম বললেন, “ অবশ্যই পাওয়া যাবে। সৃজিত ‘চতুষ্কোণ’ ছবিটা করলে আমি তাতে সুর দেব। এমনই কথা হয়ে আছে।”
এই গান-ভালবাসা অনুপমেরই কি অল্টার ইগো ‘সময়ের বাইরে’ উপন্যাসের নায়ক বিপ্লব? বিপ্লব আমেরিকা থেকে চাকরি ছেড়ে কলকাতায় ফিরে আসে। চাকরি করতে চায় না সে মনের খোরাক পাচ্ছে না বলে। ঠিক এমন ভাবেই বেঙ্গালুরু থেকে চাকরি ছেড়ে অনুপম রায়ও চলে এসেছিলেন কলকাতায়। গান গাইবেন, গাল লিখবেন, গানে সুর দেবেন বলে। অনুপম বললেন, “ না, বিপ্লবের চরিত্রে আমার কোনও প্রভাব নেই। কিন্তু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার এক সিনিয়রের কিছুটা প্রভাব রয়েছে এই চরিত্রে। তাঁকেই উৎসর্গ করছি বইটা।”
আপাতত অনুপম মেতে আছেন উপন্যাস প্রকাশেরই আনন্দে। গত বছর বেরিয়েছিল তাঁর কবিতার বই।
কিন্তু তাঁর মতে কবিতার বইয়ের পাঠক কম হয়। আশা করছেন উপন্যাসের পাঠক বাড়বে।
যে অনুপম লেখেন ‘নতুন আলুর খোসা আর এই ভালবাসা’, ‘শুকনো পেঁয়াজকলি ফ্রিজের শীতে,’ যে অনুপম কবিতায় লেখেন, ‘দেড়শো বছর আগেও আমি তোমায় চেয়ে গান লিখেছি’ সেই প্রেমিক, লিরিক্যাল অনুপমকে কতটা পাওয়া যাবে তাঁর গদ্যভাষায়। কতটাই বা ছুঁতে পারবেন সেই গদ্যভাষায় মধ্যবিত্ত জীবনের চৌহদ্দি থেকে উঠে আসা উপমা রূপক?
পাঠক যত ক্ষণ না তাঁর বই পড়ছেন বুঝতে পারবেন না। |
|
|
|
|
|