এখনও মাঠ, নদীচরে শৌচ সারছে দেড় লক্ষ পরিবার
রেল লাইন পেরিয়ে নদীর চর। ঘুঘুমারির বাসিন্দাদের কাছে অবশ্য চরের আরেকটা পরিচয় রয়েছে। শৌচাগার। ‘নির্মল ভারত’ অভিযান শুরুর এক দশক পরে কোচবিহারের শহরের থেকে ঢিল-ছোঁড়া দূরত্বের ঘুঘুমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের একটি অংশে এমনই দশা। দিনহাটা, মাথাভাঙা, তুফানগঞ্জ, মেখলিগঞ্জের বহু গ্রাম পঞ্চায়েতে এখনও অনেক বাড়িতে শৌচাগার তৈরি হয়নি। জেলা পরিষদের তথ্য, এখনও প্রায় দেড় লক্ষ পরিবারের মানুষ উন্মুক্ত জায়গায় শৌচকর্ম করছেন। কোচবিহার জেলা পরিষদের স্বাস্থ্য ও জনস্বাস্থ্য দফতরের কর্মাধ্যক্ষ শুচিস্মিতা দেবশর্মা বলেন, “নির্মল ভারত তৈরির লক্ষ্যমাত্রা রেখেও তা সম্পূর্ণ করতে পারেনি বামেরা। আমরা দ্রুত ওই কাজ শেষ করার চেষ্টা করব।” প্রাক্তন সভাধিপতি বামফ্রন্টের দিলীপ বিশ্বাস অবশ্য দাবি করেছেন, কর্মীর অভাব, পরিকল্পনার ত্রুটির জন্য সব কাজ শেষ করা যায়নি। তিনি বলেন, “শৌচাগার তৈরির কাজে সরকার ব্লক পিছু একটি করে বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে দায়িত্ব দিয়েছিল। কিন্তু ওই একটা সংস্থার পক্ষে সব কাজ করা সম্ভব হচ্ছিল না। পরে আমরা গ্রাম পঞ্চায়েত পিছু একটি করে সংস্থাকে কাজ দেওয়ার দাবি জানিয়েছি।” বছর খানেক আগে তা পাশ হয়েছে। এখন ভাল কাজ হওয়ার কথা, দাবি তাঁর। জেলা পরিষদ সূত্রের খবর, ২০০৩ সালে নির্মল ভারত অভিযানে কোচবিহার জেলায় শৌচাগার তৈরির কাজ শুরু হয়। বেশ কয়েকটি ভাগে পরিকল্পনা করে কাজ শুরু করে জেলা পরিষদ জেলা পরিষদের তথ্য অনুযায়ী জানা গিয়েছে, কোচবিহার জেলায় বিপিএল তালিকাভূক্ত ৩ লক্ষ ৩৫ হাজার বাড়িতে ২০১৩ সালের মধ্যে শৌচাগার তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়। কিন্তু বিপিএল-এপিএল মিলিয়ে এখনও প্রায় ১ লক্ষ ৪৬ হাজার বাড়িতে শৌচাগার তৈরি হয়নি। জেলা পরিষদের কিছু সদস্যদের দাবি, ওই হিসেবের বাইরেও আরও অনেক মানুষের বাড়িতে শৌচাগার নেই। নতুন করে সমীক্ষা করা হলে তা উঠে আসবে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, যখন ওই প্রকল্প শুরু হয় সে সময় উপভোক্তাদের থেকে ৩০০ টাকা এবং সরকার ৩২০০ টাকা দিয়ে মোট ৩৫০০ টাকায় শৌচাগার তৈরি করে দেওয়া হত। বছর খানেক আগে সরকারি তরফে টাকা বাড়িয়ে ৪৬০০ করা হয়, উপভোক্তার কাছ থেকে নেওয়া হয় ৯০০ টাকা। মাথাভাঙা ২ নম্বর ব্লক এবং বেশ কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েত ‘নির্মল’ পুরস্কার পেয়েছে। কিন্তু জেলার বহু এলাকাতেই ওই প্রকল্পে কাজ হয়নি বলে অভিযোগ।
কেন এগোচ্ছে না কাজ? গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, সরকারি প্রকল্পের কথা জানেন না অনেকে। কেউ জানলেও কী ভাবে, কোথায় শৌচাগারের জন্য টাকা জমা দিতে হবে, ধারণা নেই। ঘুঘুমারি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় হাজার দুয়েক মানুষের বাড়িতে শৌচাগার নেই। এলাকার বাসিন্দা মজিবুল রহমান বলেন, “দিনমজুরি করি। থাকার ঘর বানিয়ে শৌচাগার করার মতো টাকা নেই। সরকারি কোন প্রকল্পে শৌচাগার করে দেওয়া হয় জানি না।” আরেক বাসিন্দা বাবলা মিঞা জানান, বাম আমলে একবার পঞ্চায়েত শৌচাগার করে দেবে বলেও কাজে তা করেনি।
ঘুঘুমারি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার উপপ্রধান সহিরুদ্দিন মিঞা বলেন, “আমাদের গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রতিটি মৌজায় অনেক শৌচাগারহীন বাড়ি রয়েছে। ফলে এলাকায় দূষণ ছড়াচ্ছে। সে কথা আমরা জেলা পরিষদে জানিয়েছি। তাঁরা আশ্বাস দিয়েছেন, দ্রুত ওই কাজ শুরু করবেন।” মাথাভাঙার জোরপাটকি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান দেবাশিস মজুমদার জানান, ওই এলাকায় এখনও ১৭৮১টি পরিবারে শৌচাগার হয়নি। তিনি বলেন, “আমরা নির্মল গ্রাম তৈরির চেষ্টা করছি। আশা করছি দ্রুত প্রত্যেকটি পরিবারে শৌচাগার হবে।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.