ব্যাগে দু’লাখ, ফেরালেন সব্জি ব্যবসায়ী
ব্যাগটার চেন খুলেই চমকে উঠেছিলেন চন্দন সাহা। নেহাতই সাধারণ দেখতে নীল রঙের কাপড়ের ব্যাগের ভিতরে দু’টি হাজার টাকার নোটের তাড়া! আর পাঁচটা রবিবারের দুপুরের মতো-ই শিলিগুড়ির বিধান মার্কেটের ভিড় তখন বেশ হালকা। বাজারের ঠিক মাঝবরারই একটি তক্তপোষের উপর কয়েকটা ঝুড়িতে আলু, পটল, লঙ্কা ও সব্জি নিয়ে চন্দনবাবুর দোকান। আলুর ঝুড়ির উপরেই নীল ব্যাগটিকে লক্ষ করেছিলেন। কিছু আগেই এক ক্রেতার হাতে ব্যাগটিকে দেখেছিলেন তিনি। নিছকই কৌতুহলে ব্যাগটিকে খুলেই চমকে ওঠেন শিলিগুড়ির চয়নপাড়ার বাসিন্দা পঞ্চাশ ছুঁইছুঁই চন্দনবাবু।
নোটের তাড়া দেখেই ব্যাগটি বন্ধ করে, চারপাশটা দেখে নিয়ে ব্যাগটিকে আড়াল করে ফেলেন তিনি। কিছু পরেই তিনি মনস্থির করেন, ব্যাগটি ক্রেতাকে ফিরিয়ে দেবেন। কিন্তু কাকে দেবেন? সেই ক্রেতার নাম, ঠিকানা কিছুই জানেন না। তবে রবিবার করে ওই ক্রেতা বাজারে আসেন। সেই সুবাদেই মুখচেনার ‘পরিচয়’। ঠিক করলেন, আগামী রবিবার ক্রেতা দোকানে এলে সেই ব্যাগ ফিরিয়ে দেখবেন, কিন্তু রাখবেন কোথায়। দুই মেয়ে-স্ত্রীর সংসারে অভাব নিত্যসঙ্গী। এক নজরে যা দেখেছেন তাতে হাজার টাকার মোটের দুটি তাড়ায় অন্তত লক্ষাধিক টাকা রয়েছে। অভাবের সংসারে এত টাকা সামলে রাখতে পারবেন তো?
ইতিমধ্যে এক ব্যক্তি এসে সেই ব্যাগের মালিক বলে পরিচয় দিয়েছেন। দু’দশক ধরে সব্জির ব্যবসা করা চন্দনবাবু বেশ বুঝতে পারলেন, টাকার ব্যাগের কথা শুনে এরপরেই একাধিক দাবিদার এসে উপস্থিত হবেন। বেগতিক দেখে তিনি থানায় যাবে বলেই মনস্থ করেন। সেই মতো দোকান বন্ধ করতেও শুরু করেন। সে সময়ই সেই পরিচিত ব্যক্তি ফিরে আসেন। চন্দনবাবু কথায়, “উনি এসে জানতে চান, কোনও ব্যাগ ফেলে গিয়েছেন কি না। আরও একবার বাজিয়ে দেখার জন্য ব্যাগের রং, কীসের ব্যাগ জানতে চাই, উনি সবই নিখুঁত বলেন। তারপরেও আমি জানাই, ব্যাগটি এখানে নেই। তিনি কিছুটা মনমরা হয়ে চলেই যাচ্ছিলেন, তখন ডেকে ব্যাগটি ফেরত দিই।”
সোমবার সকালে চন্দনবাবুর মুখে তৃপ্তির হাসি। তিনি বলেন, “ব্যাগটি ওঁর হাতে দিয়ে কত টাকা ছিল জানতে চাওয়ায় উনি দু’লক্ষ টাকার কথা বলেন। দোকানে দাঁড়িয়েই টাকা গুনে নেন তিনি। ততক্ষণে আশপাশ থেকেও অনেকে জড়ো হয়েছেন।”
ব্যবসায়ীদের মুখেই চন্দনবাবুর এই ঘটনার কথা জানাজানি হয়ে যায়। সোমবার ব্যবসায়ী সমিতির সদস্যরা এসে চন্দনবাবুকে অভিনন্দনও জানিয়েছেন। সমিতির সম্পাদক চিত্তরঞ্জন দাস বলেন, “চন্দনবাবু যে কাজ করেছেন, তাতে আমরা গর্বিত। সে কারণেই ওঁর দোকানে এসে অভিনন্দন জানিয়েছি। তবে ও যদি ব্যাগটা দেওয়ার আগে আমাদের সকলকে ডেকে এই কথা জানালে, সে সময় ওকে আরও ভাল করে সংবর্ধিত করা যেত।” সোমবার দুপুরে সমিতির সকলেই দোকানে চলে আসায় খানিকটা বিব্রত চন্দনবাবু বললেন, “অন্য সকলে হলেও একই কাজ করত। তাই সকলকে বলতে লজ্জা পেয়েছি। বাড়িতে ফিরে দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে বলেছি। সকলেই খুব খুশি।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.