ভাগ্যিস ছিল শিরস্ত্রাণ! থুড়ি হেলমেট! তাই জোর বাঁচা বেঁচে গেলেন স্কুলশিক্ষক শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়। “না হলে রেলগেট যে ভাবে সজোরে আছড়ে পড়েছিল মাথায়, তাতে খুলি গুঁড়ো হয়ে যেত।”মাথায় হেলমেট থাকায় এ যাত্রা রক্ষা পেয়ে বলছিলেন শৈলজানন্দবাবু। চোট অবশ্য তিনি ভালই পেয়েছেন। রাতে চিকিৎসক তাঁকে পরীক্ষা করার পরে অবিলম্বে মাথার স্ক্যান করাতে বলেছেন।
সোমবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে বাঁকুড়া শহরের কাঠজুড়িডাঙা লেভেল ক্রসিংয়ে। ঘটনার পরে ওই রেলগেট অপারেটরকে ঘিরে সাময়িক বিক্ষোভ দেখায় জনতা। ঘটনার তদন্ত দাবি করে সন্ধ্যায় বাঁকুড়া স্টেশন ম্যানেজারের কাছে ওই গেটম্যানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানান ওই স্কুলশিক্ষক। স্টেশন ম্যানেজার বিশ্বনাথ মুদি বলেন, “রেলগেটের অপারেটরের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ পেয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অভিযোগপত্রটি পাঠানো হবে।”
মগরা হাইস্কুলের বাংলা বিষয়ের শিক্ষক শৈলজানন্দবাবু জানান, এ দিন বিকেল তিনটে নাগাদ স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে কাঠজুড়িডাঙা রেলগেটে তিনি আটকে পড়েন। কিছু ক্ষণ পরে ট্রেন বেরিয়ে যেতে রেলগেট উঠতে শুরু করে। তাঁর কথায়, “গেট উঠতেই অন্য যাত্রীদের সঙ্গে আমিও লেভেল ক্রসিং পার হচ্ছিলাম। হঠাৎ রেলগেট সজোরে আমার মাথায় এসে পড়ল! কয়েক মুহূর্তের জন্য চোখে যেন অন্ধকার দেখলাম। এখনও মাথা ঝাঁ ঝাঁ করছে।” |
তাঁর অভিযোগ, রেলগেট ওঠানোর সময় গেটম্যানের গাফিলতিতেই এই ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মৃত্যুঞ্জয় পাল বলেন, “রেলগেট ওঠার পরে আমি কিছুটা এগিয়ে গিয়েছিলাম। হঠাৎই পিছনে জোর একটা শব্দ শুনতে পেয়ে ফিরে দেখি, রেলগেট ওই ভদ্রলোকের হেলমেটের উপরে পড়েছে।” ধীরে ধীরে ফের তুলে নেওয়া হয় রেলগেটটি। ঘটনার পরে উপস্থিত লোকজন ওই গেটম্যানকে ঘিরে সাময়িক বিক্ষোভ দেখান। সন্ধ্যায় শৈলজানন্দবাবু স্টেশন ম্যানেজারের কাছে অভিযোগ করেন। তাঁর কথায়, “মাথায় হেলমেট ছিল এ যাত্রা রক্ষা পেলাম। না থাকলে কী হত, ভাবলেই শিউরে উঠছি!”
কাঠজুড়িডাঙার ওই রেলগেটে শিফটিং ডিউটি থাকে কর্মীদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই রেলগেটের এক কর্মী বলেন, “গেট তোলার পরে তা লক করতে হয়। সেখানে কিছু সমস্যা থাকাতেই এই ঘটনা ঘটেছে। এই সমস্যার কথা আমরা বহুবার স্টেশন ম্যানেজারকে জানিয়েছি। মাঝে মাঝে রেলের সিগন্যাল বিভাগের লোকেরা এসে সারিয়ে দিয়ে যান। কিন্তু স্থায়ী সমাধান হয় না।” এ দিনের ঘটনার জন্যও যান্ত্রিক গোলযোগকেই দায়ী করছেন তাঁরা। বাঁকুড়ার রেল সিগন্যাল বিভাগের ইনচার্জ মোহিত মুখোপাধ্যায়ের অবশ্য দাবি, “ঘটনার খবর পেয়েই সন্ধ্যায় তিনি ওই রেলগেটটি পরীক্ষা করেন। যান্ত্রিক কোনও ত্রুটি তাঁর চোখে ধরা পড়েনি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আগেও এই রেলগেটে কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। রেলগেট সংলগ্ন কেশড়া এলাকার বাসিন্দা দিলীপ ধল্ল বলেন, “এই রেলগেটে প্রায়ই নানা ঝামেলা বাধে। ঠিক সময়ে রেলগেট ফেলা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। এ বার এক জনের মাথায় রেলগেট পড়ল। আমরা এই ঘটনার যথাযথ তদন্ত দাবি করছি।” |