মায়াপুর থেকে কৃষ্ণনগরের ঘূর্ণি পর্যন্ত জলঙ্গি নদীর বুকে জলপথ পরিবহণ চালু করতে চলেছে নদিয়া জেলা প্রশাসন। সারা বছর ধরে মায়াপুরে যে হাজার হাজার পর্যটক আসেন, তাঁদের ঘূর্ণি দেখানোর পাশাপাশি জলঙ্গির দুই পারে প্রাকৃতিক শোভাকেও নদিয়ার মানচিত্রে জায়গা করে দিতে চাইছে প্রশাসন। জেলাশাসক পি বি সালিম বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি, যাতায়াতে যাতে ৩০ থেকে ৪৫ মিনিটের বেশি সময় না লাগে। যাত্রীদের সব রকম স্বাচ্ছন্দ্য দেওয়ারও চেষ্টা করা হবে।” আগামী দোলপূর্ণিমার মধ্যেই এই ব্যবস্থা চালু করা যাবে বলে আশা প্রশাসনের।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জগদ্বিখ্যাত কৃষ্ণনগরের মাটির পুতুলের সূতিকাগার ঘূর্ণির মৃৎশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা, মৃৎশিল্পের বাজারকে চাঙ্গা করে তোলাই এই ব্যবস্থার উদ্দেশ্য। প্রশাসনের কর্তারা জানান, প্রচারের ঘাটতি রয়েছেই। তবে তার পাশাপাশি ঘূর্ণির ভৌগোলিক অবস্থান আর অপ্রতুল যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণেও ঘূর্ণিতে পর্যটকদের তেমন পা পড়ে না। অথচ সারা বছরই মায়াপুরে ভিড় থাকে পর্যটকের। সেই মানুষগুলোকেই ঘূর্ণির সৌন্দর্য দেখাতেই এই নৌকা বিহারের উদ্যোগ। জানা গিয়েছে, লঞ্চ বা ওই ধরনের কোনও জলযানের মাধ্যমেই এই জলপথ পরিষেবা চালু করা হবে। এর জন্য একাধিক সংস্থার সঙ্গে ইতিমধ্যেই যোগাযোগ করা হয়েছে। ৫০টি আসনবিশিষ্ট এই জলযানে থাকবে খাবার স্টল, বাজানো হবে মন-ভাল-করে-দেওয়া সঙ্গীত। ঘূর্ণির কাছে তৈরি হবে উন্নত মানের ফেরিঘাট। |
১৮৫১ সালে লণ্ডনে ‘এগজিবিশন অব দ্য ওয়ার্কস অফ ইন্ডাস্ট্রিজ অফ অল নেশনস’ প্রদর্শনীতে স্থান পায় ঘূর্ণির শিল্পী শ্রীরাম পালের শিল্পকর্ম। সেই শুরু। এর পর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে বারবার নিজেদের জায়গা করে নিয়েছেন ঘূর্ণির শিল্পীরা। এত পুরস্কার, সুনামের পরও নানা কারণে তেমন বাজার পায়নি এখানকার শিল্পকর্ম। ঘূর্ণির এই শিল্পীদের জন্য সুদিন আনতে ইতিমধ্যে পদক্ষেপও নিতে শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। ঘূর্ণিতে আর্ট অ্যান্ড ক্রাফট সেন্টার তৈরির অনুমোদন পাওয়া গিয়েছে। সেখানে থাকবে মাটির পুতুলের বিপণণ কেন্দ্র। শিল্পীদের শিল্পকমের প্রদশর্নীর ব্যবস্থাও থাকবে। দর্শকদের জন্য থাকবে বিশ্রাম ঘর, শৌচাগার, ক্যান্টিন। শিশুদের জন্য থাকবে পার্ক। এর সঙ্গেই যুক্ত হল এই এই জলপথ পরিবহণ ব্যবস্থা।
মায়াপুরের ‘ইসকন’ মন্দিরের জনসংযোগ আধিকারিক রমেশ দাস বলেন, “প্রশাসনের এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। কারণ, আমাদের এখানে যাঁরা আসছেন, তাঁরা বেড়ানোর আরও একটা জায়গা পেলেন। বিদেশি পর্যটকরা জলপথে ভ্রমণ করতে খুবই পছন্দ করেন।”
প্রশাসনের এই উদ্যোগে খুশি শিল্পীরাও। স্থানীয় শিল্পী সুবীর পাল বলেন, “জলপথে মায়াপুরের সঙ্গে ঘূর্ণির যোগাযোগ স্থাপনের কথা আমরা অনেক দিন ধরেই বলে আসছি। অবশেষে প্রশাসন সেটা করতে উদ্যোগী হওয়ায় আমরা খুশি।” তিনি বলেন, “মায়াপুরের পর্যটকরা যদি সত্যিই আমাদের এখানে আসেন, তা হলে কিন্তু ঘূর্ণির শিল্পীরা অত্যন্ত উপকৃত হবেন। এখানকার শিল্পকর্মের একটা যোগ্য বাজার তৈরি হবে।” |