আর মাত্র ১৮৫ দিন পরেই ব্রাজিলে লেখা হবে ফুটবলের এক নতুন অধ্যায়। কিন্তু ২০১৪ বিশ্বকাপের প্রস্তুতির পাশাপাশি পেলের দেশে চলছে আরও একটা অধ্যায়। সমর্থকদের প্রতিবাদ, স্টেডিয়ামের গ্যালারি ভেঙে যাওয়ার পরে এ বার যোগ হল ফুটবল মাঠে ভয়াবহ দাঙ্গা। যার জেরে মারা গেলেন এক ফুটবল সমর্থক। তিন জনের ঠিকানা এখন হাসপাতাল।
ঘটনার প্রেক্ষাপট, আটলেটিকো প্যারানিন্স বনাম ভাস্কোর ব্রাজিলিয়ান লিগ ম্যাচে। ম্যাচটা চলছিল কুরিটিবা শহরের অদূরে। এই কুরিটিবা আবার ২০১৪ বিশ্বকাপের ভেন্যু। দু’দলের মধ্যে আটলেটিকো খেলছিল কোপা লিবার্তাদোরসে যোগ্যতা অর্জনের ম্যাচ। আর ভাস্কোর সামনে ছিল অবনমন বাঁচানোর পরীক্ষা। আটলেটিকো প্রথম গোল করার পরেই ক্রুদ্ধ ভাস্কো সমর্থকদের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ে আটলেটিকো। শুরু হয় হাতাহাতিও। পরিস্থিতি শান্ত করতে নেমে পড়েন নিরাপত্তারক্ষীরা। রেফারি সঙ্গে সঙ্গে ম্যাচ বন্ধ করলেও, সমর্থকদের আক্রোশ থামানো যায়নি। লাথি, ঘুষি মেরে একে অপরের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা। পুলিশ রবার বুলেট মারতে শুরু করলেও কাজ হয়নি। বরং সমর্থকদের রক্তস্নান চলতে থাকে। এমনকী এক ভাস্কো সমর্থককে আলাদা করে চার পাঁচ জন মিলে কাঠ দিয়ে মারেন। আর এক জনকে আবার আটলেটিকো সমর্থকরা টানা দশ মিনিট লাথি মারতে থাকেন। হাতাহাতি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, এক আহত সমর্থককে মাঠ থেকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হেলিকপ্টার আনতে হয়।
ঘটনার আতঙ্কের ছায়া থেকে বাঁচতে পারেননি দু’দলের ফুটবলারও। তাঁরা নিজের নিজের ক্লাব সমর্থকদের কাছে আবেদন করেন হাতাহাতি থামানোর জন্য। কয়েক জন মাথায় হাত দিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলেন মাঠের যাবতীয় ঘটনা। আটলেটিকো ডিফেন্ডার লুইস আলবার্তো বলেন, “ভাস্কো সমর্থকরা পালানোর চেষ্টা করছিল। ভাবতেই পারছি না যে চোখের সামনে দেখলাম কাঠ দিয়ে দু’চার জন এক সমর্থককে মারছে। আমরা সমর্থকদের অনুরোধ করেছিলাম এ সব বন্ধ করার জন্য। তবুও ওরা শুনল না।” |
ব্রাজিলের ভয়াবহ এই দৃশ্য প্রত্যক্ষ করল গোটা বিশ্ব। ছবি: এএফপি। |
এই ঘটনার জেরে ব্রাজিল বিশ্বকাপ নিয়ে নতুন প্রশ্ন উঠতে পারে, মেনে নিচ্ছেন আলবার্তো। তাঁর কথায়, “আমি কুড়ি বছর ধরে ফুটবল খেলছি। কখনও এ রকম পরিস্থিতির সামনে পড়িনি। আমাদের দেশে কয়েক দিন বাদেই বিশ্বকাপ হতে চলেছে। যার আগে ব্রাজিলের এ রকম ছবি ফুটে উঠছে সবার সামনে।” ঘটনার পরে পুলিশের ভূমিকার তীব্র কটাক্ষ করেছে ব্রাজিলীয় মিডিয়া। অনেক দৈনিকের প্রশ্ন, পুলিশ কেন ঘটনায় হস্তক্ষেপ করল না? যে বিতর্ক উড়িয়ে পুলিশ প্রধান আডিলসন মোরেরা বলেন, “নিরাপত্তার দায়িত্ব ছিল আটলেটিকোর উপর। যার দায়িত্ব ওরা একটি সংস্থাকে দিয়েছিল।” ঘটনায় আহত যে তিন জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে দু’জন সুস্থ। এক জন কোমায়।
২০১৪ জুনের আগে ‘হোগা বোনিত্তো’-র দেশ এই দুঃস্বপ্ন কাটিয়ে উঠতে পারে কি না, এখন সেটাই দেখার। |