বালি কাটায় ক্ষতিগ্রস্ত সেতু ও বাঁধ, অভিযানের সিদ্ধান্ত
কোথাও নড়বড়ে হয়ে পড়ছে সেতু। কোথাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাঁধ। কখনও আবার পাল্টে যাচ্ছে নদীর খাত। বেআইনি ভাবে পাড় থেকে বালি কাটার জেরে এই ধরনের নানা সমস্যার কথা বেশ কিছু দিন ধরেই জানিয়ে আসছে সেচ দফতর। শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে বালি পাচার রুখতে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নিল বর্ধমান জেলা পুলিশ ও প্রশাসন।
পুলিশ ও প্রশাসনের মধ্যে শনিবার এক বৈঠকে ঠিক হয়েছে, অনুমতি ছাড়াই যে সব বালি খাদান চলছে, সেগুলিকে ধরতে অভিযান চালাবে প্রশাসন ও পুলিশের সম্মিলিত টাস্ক ফোর্স। রাস্তায় যে সব ট্রাক বালি নিয়ে কলকাতার দিকে রওনা হচ্ছে, সেগুলি কত ওজন বহন করছে, তা পরীক্ষা করে দেখা হবে। প্রয়োজন মতো তাদের জরিমান করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর।
সেচ দফতর সূত্রে খবর, বর্ধমানে অজয় ও দামোদরের আশপাশ থেকে অনুমতি ছাড়াই বালি তোলার ফলে ইতিমধ্যে ডিভিসি-র বিভিন্ন সেচখালের উপরে বহু সেতু নড়বড়ে হয়ে গিয়েছে। অনেক সেতুতে ধরেছে বিপজ্জনক ফাটল। দামোদরের দু’পাশের বাঁধও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সেচ দফতরের দাবি, বেশ কয়েক জায়গায় নদীর খাত পর্যন্ত বদলে গিয়েছে। এরই জেরে নদীর জলধারা মাঝ-বরাবর না গিয়ে বইছে একপাশ ঘেঁষে। তার ফলে রীতিমতো ভূমিক্ষয় হচ্ছে। বাঁধের ক্যাচমেন্ট এরিয়া থেকে সরে যাচ্ছে বোল্ডারও। যার জেরে বাঁধগুলিতে মাঝে-মধ্যেই ফাটল দেখা দিচ্ছে। দেখা গিয়েছে, যে এলাকায় বালি তোলার কথা, সেখান থেকে সরে গিয়ে নদীখাতের এলাকা থেকে বেআইনি ভাবে বালি তুলে নিচ্ছেন একদল ব্যবসায়ী। তার জেরেই ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।
বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্গাপুরের প্রশাসনিক বৈঠকে জেলা প্রশাসন ও পুলিশকে এই অবৈধ বালির যাতায়াত রুখতে নির্দশে দেন। এ ভাবে অনুমতি না থাকা এলাকা থেকে বালি তোলা ও অতিরিক্ত ওজন নিয়ে ট্রাকগুলির চলাচলের জেরে রাস্তারও প্রচুর ক্ষতি হচ্ছে। তাই আমরা বালি বোঝাই ট্রাকগুলিকে আটক করব। জেলা ভূমি কর দফতর এসে ওই ট্রাকগুলির ওজন ও নথিপত্র দেখবে। যদি দেখা যায়, এই ট্রাকগুলি নিজেদের নির্দিষ্ট ক্ষমতার বেশি ওজন বহন করছে, তাহলে তাদের জরিমান করা হবে।” পুলিশ জানায়, মাস দেড়েক আগেও প্রায় ২৫-৩০টি এমন অতিরিক্ত ওজনের বালি বোঝাই ট্রাক আটক করা হয়েছিল। সেগুলির কাছ থেকে মোটা অঙ্কের জরিমান আদায় করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শনিবারই জেলার ৭টি থানা এলাকায় প্রায় ৮৮টি বালি বোঝাই ট্রাক বা ডাম্পার আটক হয়েছে। তার মধ্যে ৫৩টি যান আটক করেছে খণ্ডঘোষ থানা। জামালপুরে ১৪টি এবং বর্ধমান, পূর্বস্থলী ও মঙ্গলকোট পাঁচটি করে বালিবোঝাই যান আটক হয়েছে। আটক ট্রাকগুলির কাছ থেকে জরমানা বাবদ সংগ্রহ করা হয়েছে প্রায় ২৮ হাজার টাকা। খন্ডঘোষ থানা এ বাবদ ৭০ হাজার টাকা সংগ্রহ করেছে। পুলিশ সুপার বলেন, “স্থানীয় বিএলএলআর দফতরকে নিয়ে বালি বোঝাই ট্রাকের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালাতে বলা হয়েছে থানাগুলিকে।”
জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, “জেলায় অবৈধ বালি বা কয়লা বহনের ব্যাপারে ফের এক দফা নিষেধাজ্ঞা জারি করে মুখ্যমন্ত্রী চেয়েছেন, প্রশাসন ও পুলিশ যেন যৌথ ভাবে এই চোরাচালান রোখার ব্যবস্থা নেয়। তাই সব বিএলএলআরও-কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এ ধরনের অবৈধ বালি বা কয়লার চোরাচালান রুখতে হবে। বলা হয়েছে, প্রয়োজনে অবৈধ খাদানেও হানা দিতে হবে।”
জেলার এক বালিখাদান ব্যবসায়ী যোগেন্দ্রনাথ বর্মণের বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এই অভিযানের সিদ্ধান্তকে আমি স্বাগত জানাচ্ছি। অতিরিক্ত বালি বোঝাই ট্রাকের যাতায়াতের কারণে রাস্তাঘাটের প্রচুর ক্ষতি হচ্ছে। এই ক্ষতি অনেকটাই রোখা যাবে, যদি ট্রাকগুলিকে নির্দিষ্ট ওজন বহন করতে বাধ্য করানো যায়।” তিনি আরও বলেন, “তবে ইতিমধ্যে কলকাতায় যে ছয় বা দশ চাকার ট্রাকগুলি যায়, তাদের অনুমোদন অনুযায়ী নির্দিষ্ট ওজন বহন করতে বলে বিজ্ঞপ্তি জারিও করা হয়েছে। তাতে যে সব ব্যবসায়ীরা সুষ্ঠু ভাবে ব্যবসা করতে চান, তাঁদের সুবিধাই হবে।”
পাড় কাটার ফল
• সেচ দফতর জানায়, অজয় ও দামোদরের আশপাশে অনুমতি ছাড়া বালি তোলা সমস্যার কারণ।
• ডিভিসি-র সেচখালের উপরে বহু সেতু নড়বড়ে হয়ে পড়েছে।
• অনেক সেতুতে বিপজ্জনক ফাটল।
• বালি কাটার ফলে বদলে যাচ্ছে নদীখাত, যার জেরে ভূমিক্ষয়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.