নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা ও চুঁচুড়া |
প্রাক্তন কৃষিমন্ত্রী নরেন দে ও প্রাক্তন বিধায়ক অজিত পাত্রের উপরে হামলার ঘটনার জেরে শোরগোল বাধল বিধানসভায়। ফরওয়ার্ড ব্লকের নেতা-কর্মীদের উপরে আক্রমণের প্রতিবাদে মুলতবি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার অনুমতি না পেয়ে সোমবার প্রথমার্ধের অধিবেশন থেকে ওয়াক আউট করলেন বাম বিধায়কেরা। হামলাকারীদের শীঘ্র গ্রেফতারের পাশাপাশি পুলিশমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যাও দাবি করেছে বামেরা। |
জখম নরেন দে-কে দেখতে হাসপাতালে বাম বিধায়কেরা। ছবি: তাপস ঘোষ। |
বাম বিধায়কদের প্রতিনিধিদল এ দিনই চুঁচুড়ায় গিয়ে নরেনবাবুর সঙ্গে দেখা করেছে। তার পরেই আহত মন্ত্রীকে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতাল থেকে স্থানান্তরিত করা হয়েছে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে। তাঁর দু’চোখের আঘাত গুরুতর। হাসপাতাল সূত্রের খবর, তাঁর দুই রেটিনারই ক্ষতি হয়েছে। তার জেরেই চোখে রক্ত জমাট বেঁধেছে। বুকে-পেটে আঘাত লেগেছে। বাঁ-হাতের কনুইতেও ক্ষত হয়েছে।
ফব-র তরফে এ দিনই হুগলির পুলিশ সুপার ও প্রশাসনের কাছে ধনেখালির তৃণমূল বিধায়ক অসীমা পাত্রের ছায়াসঙ্গী হিসেবে পরিচিত সৌমেন ঘোষ ওরফে পটল এবং দুই অনুগামী শেখ আসলাম ওরফে বুলবুল এবং অরুণ বেরার নামে রবিবারের ওই হামলায় জড়িত থাকার লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি। জেলার পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী বলেন, “অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বিধানসভা চত্বরে এ দিন ফব বিধায়ক পরেশ অধিকারী অভিযোগ করেন, “প্রাক্তন মন্ত্রী যদি পার্টি অফিসে বসে বৈঠক করতে না পারেন, তা হলে বোঝাই যাচ্ছে চারপাশের অবস্থাটা কী!” অধিবেশনের শুরুতেই মুলতবি প্রস্তাব আনতে চান বাম বিধায়কেরা। কিন্তু পরে আলোচনা করার আশ্বাস দিয়ে অধিবেশন শুরু করেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। কিছুক্ষণ প্রশ্নোত্তর পর্বও চলে। এর পরে বাম বিধায়ক তাজমুল হোসেন মুলতবি প্রস্তাব পুরোটা পড়ার আগেই মাইক্রোফোন বন্ধের অভিযোগ নিয়ে শুরু হয় গোলমাল। পরে সিপিএম বিধায়ক আনিসুর রহমান বলেন, “রাষ্ট্রপতি বিধানসভায় এসে সংসদীয় গণতন্ত্রের কথা বলে গেলেন। কিন্তু শাসক দল যে কোনও শিক্ষাই নেয়নি, এই ঘটনাই তার চরম নিদর্শন!”
পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য কটাক্ষ করেছেন, “এটা রাজনৈতিক কৌশল। কোনও ভাবেই এই সরকারের উন্নয়নের গতিরোধ করতে পারছে না। তাই এ ধরনের খবরের মধ্যে থেকে কাগজে বেঁচে থাকতে চাইছে!” স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক অসীমার পাল্টা অভিযোগ, “ধনেখালি ব্লকের তৃণমূলের সভানেত্রী পূর্ণিমা দাস-সহ ১৫ জন মহিলা তখন ফব কার্যালয়ের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁদের ফ ব কর্মীরা কটূক্তি করে। তাতেই গোলমাল বাধে।” এলাকায় আবার অসীমাই দাবি করেছেন, “ফব-র গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই ওই ঘটনা। আমাদের দলের কেউ ওখানে ছিল না।” আর আহত নরেনবাবু বলেছেন, “১৯৫৩ সাল থেকে রাজনীতি করছি। কিন্তু আমার উপরে এমন হামলা কোনও দিন ভাবতেও পারিনি! মারের চোটে যখন মেঝেতে পড়ে যাই, তখন ষণ্ডামার্কা এক জন এসে মুখে-চোখে এলোপাথাড়ি ঘুষি মারতে থাকে। কিছু ক্ষণ চোখে কিছু দেখতে পাইনি।”
অসীমাদেবীর বক্তব্য শুনে নরেনবাবুর প্রতিক্রিয়া, “ধনেখালির তৃণমূল বিধায়ক যদি এমন কথা বলেন, তা হলে ঘোড়াও হাসবে!” হামলার প্রতিবাদে যুব লিগ এ দিন রাজভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখায়। হামলার ঘটনায় ‘সাতের দশকের পদধ্বনি’ শোনা যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের রাজ্য সম্পাদক পার্থ ঘোষ।
|