সম্পাদকীয় ১...
কর্মফল
লোকসভা নির্বাচনের কয়েক মাস আগে একাধিক রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইলে ইদানীং তাহা সেমিফাইনাল বলিয়া অভিহিত হয়। যাহারা জয়ী হয় তাহারা এই অভিধায় সায় দেয়, যাহারা পরাজিত হয় তাহারা বলে— সেমিফাইনাল বলিয়া কিছু হয় না, প্রতিটি নির্বাচনই এক-একটি স্বতন্ত্র লড়াই। চার রাজ্যের নির্বাচনী ফল প্রকাশের পরে কংগ্রেসের নেতা ও মুখপাত্ররা কণ্ঠে যথাসাধ্য জোর সংগ্রহ করিয়া দ্বিতীয় মতটি প্রচার করিতেছেন, ইহা নিতান্ত স্বাভাবিক। খেলায় সেমিফাইনালে হারিলে ফাইনালে খেলিবার সুযোগ পাওয়া যায় না, নির্বাচনে সেই সুযোগ থাকে। সুতরাং আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস লড়িবার সুযোগ পাইবে। আপাতত তাহার অধিক কোনও আশা কংগ্রেসের নাই। রাহুল গাঁধী এই ফল হইতে শিক্ষা গ্রহণের কথা বলিয়াছেন। দল কী শিক্ষা লইবে, তাহা ক্রমশ প্রকাশ্য, কিন্তু লোকসভা নির্বাচনের জন্য দলকে চাঙ্গা করিয়া তুলিতে পারে, এমন কোন ‘ক্র্যাশ কোর্স’ দলের সহ-সভাপতি আবিষ্কার করিবেন, দেবা ন জানন্তি।
কেন কংগ্রেসের এই পরাজয়? সহজ প্রশ্ন। যে দল নিরবচ্ছিন্ন অধ্যবসায়ে আপন প্রশাসনিক অপদার্থতার প্রমাণ দিয়া চলে, তাহাকে দেশের মানুষ রাজ্যে রাজ্যে দুই হাত বাড়াইয়া বরণ করিয়া লইবে কেন? রাজস্থানের ভোটফল প্রমাণ করিতেছে, কংগ্রেস রাজ্য স্তরেও সুশাসনের সামর্থ্য হারাইয়াছে, তদুপরি কেন্দ্রীয় ব্যর্থতা সেই স্তরেও জনমানসে প্রভাব ফেলিয়াছে। অর্থনীতির মন্দাক্রান্ত অবস্থা ভোটদাতাদের অভিজ্ঞতায় দীর্ঘ ছায়া ফেলিয়াছে, তাহার সহিত যুক্ত হইয়াছে বাজারের আগুন। এই সার্বিক নৈরাশ্যের জন্য তাঁহারা প্রধানত কেন্দ্রীয় সরকারের চালকদেরই দায়ী করিয়াছেন। ভারতীয় রাজনীতিতে ইহা নূতন কিছু নহে— কেন্দ্রীয় সরকার অতি প্রবল বলিয়াই তাহার ব্যর্থতা বা দুরাচার রাজ্যে রাজ্যে বড় প্রভাব বিস্তার করিয়া থাকে। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ভাবিয়াছিলেন, তাঁহাদের ‘জনকল্যাণ’-এর নীতি ও কার্যক্রম দিয়া ভোটের ফসল তুলিবেন। ভুল ভাবিয়াছিলেন। এই ভোটপর্ব প্রমাণ করিয়াছে, আয়বৃদ্ধির রাজপথ ছাড়িয়া দারিদ্র পুনর্বণ্টনের কানাগলি ধরিলে অতলেই পৌঁছাইতে হয়। গাঁধী পরিবার ও তস্য উপদেষ্টারা বুঝিতে পারেন নাই, দানসত্রে ভুলিয়া ভোট দেওয়ার যুগ অতীত, জনসাধারণ এখন উন্নয়ন চাহেন। ছত্তীসগঢ়ও তাহার পরোক্ষ প্রমাণ। রমন সিংহ সনিয়া গাঁধীর শিষ্য হইয়া জনকল্যাণসত্র চালাইয়াছেন, পরিণামে কোনও ক্রমে জিতিয়াছেন। কংগ্রেসবিরোধী হাওয়া না থাকিলে ও নরেন্দ্র মোদীর কিছু প্রভাব কাজ না করিলে তাঁহার দুর্গ সম্ভবত বেহাত হইত।
ভারতীয় জনতা পার্টি কি জনসাধারণের উন্নয়নী চাহিদা পূরণে সক্ষম? ভোটদাতারা কি তাহা মনে করেন? এই নির্বাচনগুলি কি লোকসভা নির্বাচনের পূর্বসংকেত বহন করিতেছে? আপাতত ইহা প্রশ্নমাত্র। কংগ্রেসের বিরুদ্ধে যে প্রবল জনমত, বিজেপি স্বভাবতই তাহার সুবিধা পাইয়াছে। কিন্তু সর্বত্র সমান হারে পায় নাই। যে সব রাজ্যে অ-কংগ্রেসি দল বলিতে কার্যত বিজেপি-ই, সেখানে দল ভাল ফল করিয়াছে। যেখানে অন্য বিকল্প আছে, সেখানে তাহার ফল তুলনায় নিষ্প্রভ। দিল্লির ফলাফল এই প্রেক্ষিতেই তাৎপর্যপূর্ণ। দিল্লি অবশ্যই চরিত্রে স্বতন্ত্র, আম আদমি পার্টির চমকপ্রদ সাফল্য দেশের অন্যত্র— এমনকী দিল্লির লোকসভা কেন্দ্রগুলিতেও— কতটা পুনরাবৃত্ত হইতে পারে তাহা বলা শক্ত, কিন্তু এই সাফল্য অবশ্যই বিজেপি’র পক্ষে চিন্তার কারণ। অধিকাংশ রাজ্যেই বিজেপিকে কংগ্রেসবিরোধী পরিসরটি নানা দলের সহিত ভাগ করিয়া লইতে হইবে, ফলে সরকার গড়িবার জন্য আবশ্যক রসদ দলের ঝুলিতে আসিবেই, এমন নিশ্চয়তা আপাতত নরেন্দ্র মোদীর কাছে নাই। তিনি এবং তাঁহার দল চার রাজ্য হইতে অবশ্যই ভরসা পাইয়াছেন, কিন্তু আপাতত প্রাপ্তি বলিতে ভরসাটুকুই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.