ক্ষোভের রশিতে লেনিন-পতন ইউক্রেনে
ড়ি ধরে মারো টান, লেনিন হবে খানখান। এগারো ফুট উঁচু লাল গ্রানাইটের মূর্তিটা হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়তেই উল্লাসে ফেটে পড়ল জনতা। কেউ আনন্দে হাততালি দিচ্ছেন, তো কেউ আবার প্রাণখুলে গাইছেন জাতীয় সঙ্গীত। চতুর্দিক ছেয়ে গিয়েছে নীল-হলুদ পতাকায়। রাশিয়ার ঠিক পাশে, ছোট্ট দেশ ইউক্রেনের পতাকার রং যে এটাই। এই দেশ যখন অবিভক্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল, সে সময় (১৯৪৬ সালে) শেভচেনকো বুলেভার্ডে বসেছিল লেনিনের এই বিশাল মূর্তি। রবিবার সন্ধ্যায় ভারী হাতুড়ি, গাঁইতি, দড়ি নিয়ে লেনিনকে টলাতে যাঁরা জড়ো হয়েছিলেন, তাঁরা বেশির ভাগই অবশ্য নবীন প্রজন্মের। তাঁদের মুখেও ছিল বিপ্লবের ডাক। লেনিন তথা রুশ প্রভাবকে উৎখাত করার বিপ্লব।
ডিসেম্বর মাস। হাড় কাঁপানো ঠান্ডা। কিন্তু প্রতিবাদীদের উৎসাহ-উদ্দীপনায় ভাটা পড়ছে না তাতেও। সরকার-বিরোধী বিক্ষোভে গত তিন সপ্তাহ ধরে উত্তাল পূর্ব ইউরোপের এই দেশ। ঘর-বাড়ি ছেড়ে, কনকনে ঠান্ডা হাওয়াকে উপেক্ষা করে পথে নেমেছেন ইউক্রেনবাসী। দাবি একটাই, গদি ছাড়তে হবে প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচকে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে ইউক্রেন নাম লেখাবে, ঠিক হয়েছিল আগেই। কিন্তু শেষ মুহূর্তে বেঁকে বসেছেন প্রেসিডেন্ট। প্রতিবাদীদের অভিযোগ, দেশবাসীকে ঠকিয়ে রাশিয়ার দিকে ঝুঁকছেন ইয়ানুকোভিচ। ইউরোপীয় ইউনিয়নে না গিয়ে এই তালে রুশ নেতৃত্বাধীন কাস্টমস ইউনিয়নে ঢোকার চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি।
মানুষের আক্রোশে কিয়েভের রাস্তায় ভূপতিত লেনিন। ছবি: এপি।
প্রেসিডেন্ট ইয়ানুকোভিচ অবশ্য যুক্তি হিসেবে খাড়া করছেন দেশের ধুঁকতে থাকা অর্থনীতিকে। তাঁর দাবি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের যোগ দেওয়ার মতো সময় এখনও আসেনি। তার বদলে রাশিয়ার সঙ্গে যদি এই বেলা ‘কৌশলগত চুক্তি’ সই করা যায়, আখেরে লাভ তাঁদেরই। মিলতে পারে রাশিয়া থেকে সস্তার গ্যাস-সহ আরও কিছু উপরি সুবিধে। প্রেসিডেন্টের এই যুক্তিতে ভুলছেন না বিক্ষোভকারীরা। জানিয়েছেন, আট-ঘাট বেঁধে তৈরি হতে গত শুক্রবারই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ। সোভিয়েত শাসন এখনও ভোলেনি যে দেশ, আরও এক বার সেখানে রুশ আধিপত্য কায়েম হোক অধিকাংশ ইউক্রেনবাসীই চান না তা। সারা শরীর জাতীয় পতাকায় মোড়া ২২ বছরের এক যুবক জানালেন, “দেশটা রাশিয়ার হাতের পুতুল হোক, বরদাস্ত করতে পারব না।” বস্তুত ২০০৪-২০০৫ সালের কমলা বিক্ষোভ (অরেঞ্জ রেভলিউশন)-এর পর এত স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ আর দেখেনি ইউক্রেন। কেন্দ্রস্থল ইন্ডিপেনডেন্স স্কোয়ারের যে দিকে তাকানো যায়, সে দিকেই রংবেরঙের তাঁবুর সারি। প্রথমটা দেখলে মনে হয়, যেন একটা আস্ত গ্রামই উঠে এসেছে শহরের মধ্যিখানে। পুলিশ যাতে ঝাঁপিয়ে পড়তে না পারে তাই ব্যারিকেড তৈরি করেছেন তাঁরা। সরকারের প্রধান প্রধান দফতরেরও দখল এখন বিদ্রোহীদের হাতে। সরকারের উপর চাপ বাড়াতেই কাল জমায়েতের ডাক দিয়েছিলেন তাঁরা। আর তাতে সাড়া দিয়ে জড়ো হন হাজার হাজার মানুষ।
আন্দোলনের মাঝেই তাঁদের রাগ গিয়ে পড়ে লেনিনের উপর। বিশাল উঁচু এক স্তম্ভ, তার উপর মুষ্টিবদ্ধ হাতে দাঁড়িয়ে রুশ বিপ্লবের এই নেতা। বিদ্রোহীদেরই মধ্যে এক জন জোগাড় করে আনেন একটা মই। মই বেয়ে উঠে, মূর্তির কোমরে দড়ি পরিয়ে, হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে চলে লেনিনকে উপড়ে ফেলার পর্ব। শেষমেশ সত্যিই সত্যিই বেদী থেকে সবশুদ্ধু উপড়ে পড়ে লেনিনের মূর্তি। নীচের মেঝে চৌচির হয়ে ঢুকে যায় তাঁর মাথা। এতেই কিন্তু ক্ষান্ত হননি জনতা। বরং দ্বিগুণ উৎসাহে লেগে পড়েন তাঁরা। লেনিন যেখান থেকে খসে পড়েছেন হঠাৎই সেখানে উঠে পড়েন এক মহিলা। হাতে ধরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের পতাকাটা গুঁজে দেন ওই বেদীতেই। লেনিনের ভাঙা টুকরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়তেই দ্রুত কুড়িয়ে নিয়েছেন অনেকে। ইতিহাসের সাক্ষী ছিলেন, হয়তো দেখাবেন আগামীকে! লেনিনকে ভূপতিত করার ঘটনায় কেউ এখনও গ্রেফতার না হলেও কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর মুখপাত্র বলেন, ঐতিহাসিক এই মূর্তি ভাঙা বর্বরতারই সামিল। বিদ্রোহীদের শান্ত থাকতে আর্জি জানান বিরোধী নেতারাও। তবে এতে দমছেন না প্রতিবাদকারীরা। ইউক্রেনের অবস্থান যে রাশিয়ার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা এত দিনে ভাল করেই জেনে গিয়েছেন তাঁরা। আগামী ১৭ তারিখ ফের বসবেন পুতিন আর ইয়ানুকোভিচ। তবে তত দিন অপেক্ষা করতে রাজি নন দেশবাসী। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করুন, দাবি তাঁদের। ‘গুড বাই লেনিন’ ছবির মতো লেনিনের ভাঙা মূর্তি কোনও হেলিকপ্টার তুলে নিয়ে যাবে কি না, সে প্রশ্ন পরের। উল্টোনো লেনিনের স্তম্ভে এখন জ্বলজ্বল করছে একটাই হুঁশিয়ারি, “লেনিন তো হল, প্রেসিডেন্ট এ বার আপনার পালা।” ইয়ানুকোভিচও কি এ বার মুখ থুবড়ে পড়বেন, গোটা বিশ্বের নজর এখন সে দিকেই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.