এ আক্ষরিক অর্থেই সাধু বেশে পাকা চোরেদের কাজ। বেলুড় মঠের সংগ্রহশালা থেকে চুরির কিনারা করে অন্তত এমনটাই মনে করছে হাওড়া সিটি পুলিশ। এই ঘটনায় সম্প্রতি বারাণসী থেকে ধরা হয়েছে চার জনকে। তাদের মধ্যে এক জনের নাম সিচাই সাশা নারাকি। ধৃতেরা সকলেই তাইল্যান্ডের বাসিন্দা।
কী ভাবে চুরি করত দলটি? পুলিশ জানিয়েছে, এদের কাজ ছিল সাধু বেশে বিভিন্ন মঠে ঢুকে সেখানকার সংগ্রহশালা থেকে মূল্যবান জিনিস হাতানো। সে ভাবেই তারা ঢুকেছিল বেলুড় মঠে। মঠ কর্তৃপক্ষকে তারা পরিচয় দিয়েছিল তাইল্যান্ডের বৌদ্ধ সন্ন্যাসী হিসেবে। কর্তৃপক্ষকে তারা এ-ও জানিয়েছিল, তাইল্যান্ডে সারদাদেবীর মন্দির তৈরি হচ্ছে। সেখানকার সংগ্রহশালার জন্য তারা সারদাদেবীর দাঁত, চুল ও রুদ্রাক্ষের মালা নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু বেলুড় মঠ কর্তৃপক্ষ প্রস্তাব নাকচ করে দেন। এর কয়েক দিন পরেই মঠের সংগ্রহশালা থেকে সারদাদেবীর দাঁত, চুল ও রুদ্রাক্ষের মালা চুরির ঘটনাটি নজরে আসে কর্তৃপক্ষের।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ সংগ্রহশালা থেকে কিছু আঙুলের ছাপের নমুনা সংগ্রহ করে। পাওয়া যায় চার জনের একটি ছবিও। সেই সূত্র ধরেই তদন্ত শুরু করে তারা। সম্প্রতি হাওড়া সিটি পুলিশের কাছে খবর আসে, বারাণসীর কবীর মঠ থেকে চন্দনকাঠের মালা চুরি গিয়েছে। খবর পেয়ে হাওড়া সিটি পুলিশের গোয়েন্দা দফতরের একটি দল বারাণসী পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে। |
কবীর মঠের সিসিটিভি-থেকে পাওয়া চার জনের ছবির সঙ্গে হাওড়া সিটি পুলিশের হাতে থাকা ছবিটি মিলে যায়। এর পরেই বারাণসী পুলিশের মারফত হাওড়া সিটি পুলিশ জানতে পারে, ওই দলটি গোরক্ষপুর হয়ে নেপাল সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে। সেই সূত্র ধরেই গোরক্ষপুর থেকে চার জনকে গ্রেফতার করে হাওড়া সিটি পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে তিন জনকে বারাণসীর মঠ থেকে চুরির ঘটনায় জড়িত সন্দেহে সেখানকার পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। হাওড়া সিটি পুলিশের অনুমান, বেলুড় মঠ থেকে চুরির ঘটনায় সিচাই সাশা নারাকি নামে ওই ব্যক্তি যুক্ত থাকতে পারে। রবিবার সিচাইকে ট্রানজিট রিমান্ডে গোরক্ষপুর থেকে কলকাতায় আনা হয়। হাওড়া জেলা আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতদের সকলেরই বাড়ি তাইল্যান্ডে। তাদের মধ্যে এক জন বৌদ্ধ সন্ন্যাসী। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের সন্দেহ, স্থানীয় এক যুবকের মাধ্যমে ধৃতেরা এই চুরির পরিকল্পনা করেছিল। তবে চুরি যাওয়া জিনিসপত্র ধৃতেরা কোথাও বিক্রি করেছে না সেগুলি ঘুরপথে তাইল্যান্ডে পাঠিয়ে দিয়েছে, সে সম্পর্কে পুলিশ নিশ্চিত ভাবে এখনও কিছু জানাতে পারেনি। ধৃত সিচাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই পুরো ঘটনাটি জানা যাবে বলে পুলিশের অনুমান।
উল্লেখ্য, গত ১৬ জুলাই এই চুরির ঘটনাটি ঘটে। সংগ্রহশালার একতলায় একটি কাচের শো-কেসে ওই জিনিসগুলি রক্ষিত ছিল। ঘটনার পরের দিন, ১৭ জুলাই সংগ্রহশালা খোলার পরে বিষয়টি জানাজানি হয়। খবর দেওয়া হয় পুলিশ ও সিআইডি-কে। ঘটনার কথা জানানো হয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও।
|