আট ঘাট বেঁধে নামা জালিয়াত চক্র ধরা পড়ে গিয়েছিল পরীক্ষার ঠিক আগের দিনেই। রবিবার কড়া নিরাপত্তায় দক্ষিণ-পূর্ব রেলের গ্রুপ-ডি নিয়োগের পরীক্ষা প্রায় নির্বিঘ্নেই হয়েছে। কিন্তু জালিয়াতির ছোঁয়া থেকেই গেল ওই পরীক্ষায়। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সৌমিত্র মজুমদার জানান, পাটুলির খানপুর গার্লস স্কুলে অ্যাডমিট কার্ড জাল করে পরীক্ষা দিতে আসা দুই প্রার্থী এবং তাঁদের দুই শাগরেদকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন পরীক্ষকেরা। ধৃতদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তবে আগের দিন জালিয়াত চক্রে জড়িত সন্দেহে ধৃত চার জনের কাছে পাওয়া উত্তরপত্রের সঙ্গে এ দিনের প্রশ্নপত্রের কোনও মিল পাওয়া যায়নি বলেই রেল সূত্রের খবর।
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের চতুর্থ শ্রেণির ২৪০০ পদে কর্মী নিয়োগের পরীক্ষা ছিল রবিবার। ৪৮টি কেন্দ্রে এ দিন ওই পরীক্ষা দেন ৮০ হাজার প্রার্থী। তার আগে, শনিবার ওই জালিয়াত চক্রের হদিস পায় রেলের ভিজিল্যান্স শাখা। হাওড়ার জগাছায় একটি হোটেলে হানা দিয়ে এক রেলকর্মী-সহ চার জনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হোটেলের যে-ঘরে ছিল, সেখানে পাওয়া যায় ৭১টি মোবাইল ফোন, নগদ প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা, একটি ট্যাবলেট কম্পিউটার, ফোটোকপি মেশিন, স্ক্যানার, কিছু কাগজপত্র এবং একটি উত্তরপত্র। এই অবস্থায় রবিবার পরীক্ষা আদৌ হবে কি না, তা নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। রেলের তরফে অবশ্য জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, পরীক্ষা হবে নির্দিষ্ট সময়সূচি মেনেই।
এ দিন পরীক্ষা কেন্দ্রগুলিকে নিরাপত্তার ঘেরাটোপে মুড়ে ফেলা হয়েছিল। ছিল পুলিশ এবং আরপিএফ। পরীক্ষা কেন্দ্রের চৌহদ্দির মধ্যে মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। কড়া তল্লাশির পরেই ঢুকতে দেওয়া হয় পরীক্ষার্থীদের। জালিয়াত চক্রের কাছে পাওয়া উত্তরপত্রটি নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। সেটি রেলেরই আগেকার কোনও পরীক্ষার উত্তরপত্র বলে মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু চক্রের লোকজন সেটি কী ভাবে ব্যবহার করার ছক কষেছিল, সেই বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। এই ব্যাপারে ধৃতদের আরও জেরা করা হচ্ছে। তবে বাজেয়াপ্ত করা কাগজপত্র বা উত্তরপত্রটির সঙ্গে এ দিনের প্রশ্নপত্রের কোনও মিল না-থাকায় তদন্তকারী অফিসারেরা মনে করছেন, ভুয়ো প্রশ্নপত্র বিক্রি করেই উপার্জনের চেষ্টা করছিল চক্রটি। সেই কাজেই উত্তরপত্রটিকে কাজে লাগানোর চেষ্টায় ছিল তারা। তদন্তে সিবিআইয়ের সাহায্য নেওয়া হতে পারে বলে রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী আগেই আশ্বাস দিয়েছেন।
ওই চক্রের হদিস পাওয়ার পরে প্রায় ১০০ পরীক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তাতে জানা যায়, টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন জানিয়ে দেওয়ার টোপ দিয়ে চক্রের লোকজন তাঁদের জগাছার ওই হোটেলের কাছে ডেকেছিল। সেই প্রশ্ন নিতেই তাঁরা সেখানে যান।
চক্রের ডেরায় পাওয়া ট্যাবলেট কম্পিউটারে কী আছে, তা যাচাই করা হচ্ছে। তার মধ্যে কোনও উত্তরপত্র থাকতে পারে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। তাঁদের সন্দেহ, হোটেলের ঘরে পাওয়া ফোটোকপি মেশিনে উত্তরপত্র ছাপিয়ে বিক্রি করার মতলব এঁটেছিল দুষ্কৃতীরা।
ওই চক্রের লোকজন মোবাইলেও প্রশ্নের উত্তর জানানো হবে বলে ছাত্রদের একাংশকে জানিয়েছিল। তার জন্য অবশ্য বেশি টাকা চাওয়া হয়। তদন্তকারীরা জানান, হোটেলের ঘরে পাওয়া ৭১টি মোবাইল এই কাজের জন্যই আনা হয়েছিল। পরীক্ষার পরে সেগুলি ফিরিয়ে দিতে বলা হয়েছিল পরীক্ষার্থীদের। কিন্তু মোবাইল বিলি করার আগেই ওই জালিয়াত চক্রের হদিস পায় পুলিশ এবং রেলের ভিজিল্যান্স বিভাগ। একসঙ্গে অত মোবাইল উদ্ধারের পরে পরীক্ষা কেন্দ্রে মোবাইল ফোন ঢোকানো ঠেকাতে শুরু হয় কড়া নজরদারি।
|
দক্ষিণবঙ্গের চার জেলা বর্ধমান, হুগলি, বাঁকুড়া ও হাওড়ায় চলতি মরশুমে বোরো চাষের সেচের জন্য ২২ ডিসেম্বর থেকে ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত জল দেবে ডিভিসি। সেচ দফতরের বর্ধমান দামোদর ক্যানাল ডিভিশনের সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার ধীরাজ ধর বলেন, “ওই চার জেলায় বোরো চাষের জন্য গত বার মাত্র সাড়ে ৬৯ হাজার একরে সেচের জল মিলেছিল। এ বার ১ লক্ষ ৫১ হাজার একরে ডিভিসি-র মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধারের জল মিলছে।” চলতি মরসুমে ভারী বর্ষার পরে এখন মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধারে মোট প্রায় ৪৫৪ হাজার একর ফুট জল সঞ্চিত রয়েছে। তাই বোরো চাষের জন্য দ্বিগুণেরও বেশি জল মিলবে বলে সেচ দফতর সূত্রে খবর। ২ ডিসেম্বর চার জেলার প্রশাসন ও সেচ দফতরের মধ্যে এ নিয়ে বৈঠকও হয়েছে। বর্ধমান গত বার যেখানে জল পেয়েছিল ৪০,৫০০ একরে, এ বার পাচ্ছে ৯৬ হাজার একরে। হুগলির ক্ষেত্রে তা ১৩০০০ থেকে বেড়ে হচ্ছে ৩১,৫০০ একর। বাঁকুড়া গত বার পেয়েছিল পনেরো হাজার একরে, এ বার পাচ্ছে কুড়ি হাজার একরে। হাওড়া গত বার ২০০০ একরে সেচের জল পেয়েছিল, এ বার তা আরও এক হাজার বাড়ছে। |