ভাড়াবৃদ্ধির দাবিতে ফের আন্দোলনে নামছে বাস এবং মিনিবাসের মালিক সংগঠনগুলি। আগামী ১৮ ডিসেম্বর মেট্রো চ্যানেলে অবস্থান বিক্ষোভ করবেন বাসমালিকেরা। ওই মঞ্চ থেকেই পরবর্তী আন্দোলন-কর্মসূচি ঠিক করা হবে বলে দাবি বাসমালিকদের। তাঁরা জানিয়েছেন, “সরকার বারবার আশ্বাস দেওয়ার পরেও ভাড়াবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনায় বসছে না।কোজেই এই অবস্থায় আন্দোলনে নামা ছাড়া আমাদের সামনে আর কোনও পথ খোলা নেই।” তবে আন্দোলনের হুমকিতেও ভাড়াবৃদ্ধির কোনও আশ্বাস দিচ্ছেন না পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। উল্টে বাসমালিকদের বিক্ষোভের মধ্যে গিয়েই তিনি তাঁদের বোঝাতে চান, কেন সরকার বাসভাড়া বাড়াতে পারছে না।
বাস-মিনিবাস সংগঠনগুলির সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৫ ডিসেম্বর শিলিগুড়িতে সারা রাজ্যের বাস-মিনিবাস মালিকদের সংগঠনগুলিকে নিয়ে একটি কনভেনশন ডাকা হয়েছিল। সেই কনভেনশনেই ঠিক করা হয়েছে, চলতি মাস থেকে ফের বাসভাড়া বৃদ্ধির আন্দোলন তীব্র করা হবে। বাসমালিকদের দাবি, গত কয়েক মাস ধরেই কলকাতা-সহ রাজ্যের সব জেলাগুলিতে বাসের সংখ্যা ক্রমশই কমতে শুরু করেছে। বাসমালিকদের কথায়, “জিনিসপত্র এবং জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কথা মাথায় রেখে মেট্রো রেলের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। অটো ইউনিয়নের উপরে সরকারের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় তারাও ইচ্ছেমতো ভাড়া বাড়িয়েছে। আমাদেরই শুধু ভাড়া বাড়ছে না। অথচ, তা নিয়ে রাজ্য সরকারের কোনও হেলদোল নেই।” |
বেসরকারি বাসমালিক সংগঠন জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেটসের নেতা তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “গত এক বছরে ১৫ বার ডিজেলের দাম বেড়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যেই ডিজেলকে বিনিয়ন্ত্রিত করার কথা ঘোষণা করেছে। গত কয়েক মাসে জিনিসপত্রের দামও আকাশ ছুঁয়েছে। এই অবস্থায় বাসের ভাড়া না বাড়ালে পরিবহণ শিল্পটাই আর বাঁচবে না।” তপনবাবুর দাবি, “পুজোর আগে আমরা যখন ভাড়াবৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিলাম, তখন সরকার আশ্বাস দিয়েছিল কালীপুজোর পরে এ নিয়ে আলোচনা শুরু করবে। ওই আশ্বাসেই আমরা আন্দোলন তুলে নিয়েছিলাম। কিন্তু তার পরে এক মাসের উপর কেটে গিয়েছে। সরকার আলোচনায় বসেনি। গত ৩০ তারিখ পরিবহণমন্ত্রী আমাদের দফতরে এসে সাত দিনের মধ্যে আলোচনায় বসার আশ্বাস দিয়েছিলেন। সাত দিন কেটে যাওয়ার পরেও তিনি সেই কথা রাখেননি। এই অবস্থায় আমাদের সামনে একমাত্র আন্দোলনের পথই খোলা থাকছে।”
পুজোর আগে বাসভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে দু’টি সংগঠন আন্দোলনে নামলেও বেসরকারি বাসমালিকদের অন্য সংগঠন বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেট সেই আন্দোলনে অংশ নেয়নি। যার ফলে দু’দিনের বাস ধর্মঘট কার্যত ব্যর্থ হয়েছিল। এ বার বাসমালিকেরা সেই ভুল করতে চাইছেন না। সেই কারণে আগামী ১৮ তারিখ মেট্রো চ্যানেলের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেটকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ওই সংগঠনের তরফেও অবশ্য আন্দোলনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে সবুজ সঙ্কেত দেওয়া হয়েছে। সংগঠনের নেতা দীপক সরকার বলেন, “আমরা সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করে ধর্মঘটে অংশ নিইনি। কিন্তু এ বার ভাড়া না বাড়ালে পরিবহণ শিল্পটাই উঠে যাবে। তাই বাধ্য হয়ে আমরাও আন্দোলনে সামিল হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
বিক্ষোভ-কর্মসূচিতে থাকছেন মিনিবাস মালিকেরাও। তাঁদের সংগঠন মিনিবাস অপারেটর্স কো-অর্ডিনেশন কমিটির নেতা অবশেষ দাঁ বলেন, “১৮ তারিখের মঞ্চ থেকেই আমরা পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করব। পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত পরিবহণ সংগঠনকে একত্রিত করেই আমরা আন্দোলনে নামতে চাইছি। কারণ পরিবহণ শিল্পের এখন খুবই সঙ্কটজনক অবস্থা। কিন্তু এই অবস্থায় সরকার ভাড়া না বাড়িয়ে রাজনীতির কথা ভাবছে। ফলে বাধ্য হয়েই আমাদের আন্দোলনে নামতে হচ্ছে।”
রাজ্য প্রশাসন সূত্রের অবশ্য খবর, বাসমালিকেরা আন্দোলনে নামলেও এখনই বাসের ভাড়া না-বাড়ানোর বিষয়ে অনড় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “কয়েক মাস বাদেই সারা দেশে লোকসভা ভোট। তার আগে বাসভাড়া বৃদ্ধি করলে, তাকে মূলধন করে বিরোধী দলগুলি আন্দোলন শুরু করে দিতে পারে। সেই কারণেই এখন বাসভাড়া বাড়ানোর ঝুঁকি কোনও অবস্থাতেই নিতে রাজি নয় সরকার।” দলের এই মনোভাব ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছেন পরিবহণমন্ত্রীও। রবিবার মদনবাবু বলেন, “গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যে কেউ আন্দোলন করতে পারেন। ডাকলে আমিও বাসমালিকদের বিক্ষোভ মঞ্চে যাব। তাঁদের বুঝিয়ে বলব, কেন সরকার ভাড়া বাড়াতে পারছে না।”
|