|
|
|
|
মোদীর নামে জয়ধ্বনি, তবু রয়ে গেল প্রশ্ন |
দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় • নয়াদিল্লি
৮ ডিসেম্বর |
কুয়াশার চাদর পেরিয়ে কনভয় ঢুকতেই ঢোল-নাকারা-আতসবাজি! গোটা অশোক রোড জুড়ে একটাই আওয়াজ: মোদী-মোদী-মোদী।
কে বলবে, আজ নায়ক শিবরাজ সিংহ চৌহান, বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া, রমন সিংহের মতো কুশীলবেরাও? শীতের দুপুরে দিল্লিতে বিজেপির কর্মীদের মুখে একটাই কথা, এ জয় নরেন্দ্র মোদীর। সেই হাওয়া ঢুকে পড়েছে দলের সদর দফতরের আনাচে কানাচে। যাকে দলের নেতারাও বলছেন, জয়ের ধ্বনি।
সকালে যখন জয়ের আভাস মিলতে শুরু করেছে, কর্মী-সমর্থকদের এই কথার প্রতিধ্বনি শোনা গেল বসুন্ধরা রাজের গলাতেও। তিনি জানালেন, রাজস্থানে জয়ের কৃতিত্ব মোদীরও। কিন্তু শিবরাজ বা রমন সিংহ? তাঁরা কী বলছেন?
শিবরাজের প্রসঙ্গ তুললেন লালকৃষ্ণ আডবাণী, সুষম স্বরাজরা। বস্তুত, তাঁদের মতো হাতে গোনা গুটিকয় নেতার মুখেই এ দিন মোদী-জাদু নিয়ে সংশয় শোনা গেল। তাঁরা বলছেন, মোদীর প্রভাব এই রাজ্যগুলিতে থাকতে পারে। কিন্তু মোদী-জাদু কোথায়? জাদুই যদি থাকত, তা হলে দীর্ঘক্ষণ চরম উত্তেজনায় বসে থাকতে হত না রমন সিংহ, হর্ষবর্ধনদের। দিল্লিতে মোদী বা বিজেপিই যদি বিকল্প হত, তা হলে অরবিন্দ কেজরিওয়ালকেই কেন এত ভোট দিল জনতা? এই প্রসঙ্গে শিবরাজের পুরনো বক্তব্য আরও এক বার শুনিয়ে দিলেন তাঁরা। বললেন, ভোটের পরপর শিবরাজ তো নিজেই জানিয়েছেন, মোদীর প্রচারের ফলে তাঁদের অন্তত ৩৫-৪০টি আসনে খেসারত দিতে হতে পারে। কারণ, যে সংখ্যালঘু ভোট দলের দিকে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন শিবরাজ, মোদীকে দেখে তা উল্টো দিকে চলে গিয়েছে। |
|
জয়ের হাসি। বিজেপি সাংসদ স্মৃতি ইরানিকে মিষ্টি মুখ করাচ্ছেন
দলীয় কর্মীরা। কলকাতায় বিশ্বনাথ বণিকের তোলা ছবি। |
সঙ্ঘ কিন্তু এমন কথা আগেও শোনেনি, আজও শুনতে চায়নি। আরএসএসের এক শীর্ষ নেতা আজ বলেন, “কে বলল, এই বিধানসভা ভোটে মোদীর প্রভাব নেই? প্রাথমিক ভাবে আমরা ভোটের ফল পর্যালোচনা করে দেখেছি, সব রাজ্যেই মোদী তাঁর ছাপ রেখেছেন। বিধানসভা ভোটের প্রচারে গিয়েও তিনি লোকসভার অ্যাজেন্ডা প্রতিষ্ঠা করে এসেছেন। তিনি প্রচারের ঝড় না তুললে দিল্লি, ছত্তীসগঢ় এবং মধ্যপ্রদেশে বরং ফল খারাপ হত। শিবরাজের দুর্বলতাও পূরণের চেষ্টা করেছেন মোদী।” তিনি বলেন, “রাজস্থানে বিজেপি-ঝড়ের বড় কারণ বসুন্ধরা ও মোদীর যুগলবন্দি। বসুন্ধরা নিজেও তা কবুল করেন।”
সঙ্ঘের মন বুঝে আজ সাংবাদিক সম্মেলনেও রাজনাথ সিংহের মুখে সেই মোদীই। এর আগে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে সদর দফতরে দলের সংসদীয় বোর্ডের বৈঠক করেছেন মোদী। তবে রাজনাথের সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি ছিলেন না। অনেকেই মনে করছেন, দিল্লির বুকে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী প্রার্থীর দাপট প্রতিষ্ঠার এটাই ছিল সুবর্ণ সুযোগ। তবে সাংবাদিক সম্মেলনে সে কাজটা করার চেষ্টা করলেন রাজনাথ। বললেন, “ফল পর্যালোচনা করে দেখেছি, মোদীর প্রভাব স্পষ্ট। মোদীর নেতৃত্বেই যে বিজেপি কেন্দ্রে সরকার গড়বে, জনতা তার সঙ্কেত দিয়ে রাখল এই ভোটে।” মোদীর অন্যতম সেনাপতি অরুণ জেটলি বলেন, “বিধানসভা নির্বাচন স্থানীয় বিষয়ের ভিত্তিতে লড়া হয় ঠিকই। তবে মোদী যে ‘কংগ্রেস-মুক্ত’ ভারত বানানোর ডাক দিয়েছেন, তা আজকের ফলে গুরুত্ব পেয়েছে।”
সঙ্ঘ নেতৃত্ব একটি বিষয় আরও এক বার পরিষ্কার করে দিয়েছেন। তা হল, মোদীকে নিয়ে দলের কিছু নেতাদের পছন্দ-অপছন্দ থাকতেই পারে। কিন্তু দলের অন্তর্কলহকে আর প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। মোদীর প্রশ্নে পিছু হঠার প্রশ্ন নেই। এই রাজ্যগুলিতে ৫৮৯টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ৪০৫টিতে জিতেছে বিজেপি। সেই হিসেবের নিরিখে লোকসভার ৭২টি আসনের মধ্যে ৬৫টির কাছাকাছি তাদের দখলে। গোটাটাই হিন্দিবলয়ে। ফলে সব মিলিয়ে এ বারে লোকসভার জন্য ঝাঁপাতে মোদীর মঞ্চ তৈরি বলেই মনে করছে সঙ্ঘ।
কিন্তু কংগ্রেসের প্রতি মানুষের বিতৃষ্ণার ফলে যে শূন্যস্থান তৈরি হয়েছে, আসন্ন লোকসভা ভোটে কি তার দখল নিতে পারবেন মোদী? তাঁর মরিয়া চেষ্টা সত্ত্বেও সংশয় রয়ে গিয়েছে। এ দিনের হিসেব থেকেই অনেকে বলছেন, জয়ের সবটাই হিন্দিবলয়ে, যেখানে বিজেপি যথেষ্ট শক্তিশালী। কিন্তু পূর্ব, দক্ষিণে এখনও আঞ্চলিক দলগুলি ছাড়া তারা অচল। সেখানে কী হবে? মোদী কি পারবেন বাজপেয়ীর মতো বন্ধু জোটাতে?
জয়ের তুমুল উল্লাসের মধ্যে এই কাঁটাটা রয়েই গেল।
|
পুরনো খবর: মোদী-ঝড়ের পথে কাঁটা বহু, স্বস্তি শুধু রাজস্থানে |
|
|
|
|
|