মোদী-ঝড়ের পথে কাঁটা বহু, স্বস্তি শুধু রাজস্থানে
বুথ ফেরত সমীক্ষার ফল যা-ই বলুক, গোবলয়ের চার রাজ্যে মোদী-ঝড় কতটা উঠবে, ফল প্রকাশের আগের রাতেও তা নিয়ে সংশয়ে বিজেপি শিবির। এতটাই যে, ফল আশাপ্রদ না হলে কী ভাবে লোকসভা ভোটের আগে দলের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীকে আগলে রাখা হবে, এখন সেই কৌশলও ভাবতে হচ্ছে বিজেপি নেতৃত্বকে।
পাঁচ রাজ্যের মধ্যে মিজোরাম বাদে বাকি চারটিতেই যদি বিজেপি সরকার গড়তে পারে, তা হলে লোকসভার আগে কংগ্রেসকে প্রবল চাপে ফেলে দিতে পারবেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু তেমনটা না হলে বড় ধাক্কা খাবে মোদী-ম্যাজিকের প্রচার। আর সেটাই ভাবাচ্ছে বিজেপি নেতৃত্বকে। কারণ চার রাজ্যের ভোটে প্রচারের পুরো সুরটাই নিজের হাতে বেঁধেছিলেন মোদী। এই অবস্থায় আজ সন্ধ্যায় দলের সভাপতি রাজনাথ সিংহের বাড়িতে বৈঠকে বসেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। বিজেপি সূত্রের খবর, সেখানে ভোট নিয়ে যে অভ্যন্তরীণ রিপোর্টটি তাঁদের হাতে এসেছে, তাতে একমাত্র রাজস্থানই স্বস্তির বার্তা দিয়েছে। ছত্তীসগঢ়, দিল্লি বা মধ্যপ্রদেশ কিন্তু উদ্বেগেই রাখছে দলকে।
এমনিতে রাজস্থান নিয়ে দলের ততটা চিন্তা নেই। বুথ ফেরত সমীক্ষার পাশাপাশি দলের অভ্যন্তরীণ রিপোর্টও বলছে, মরুরাজ্যে ফের ক্ষমতায় আসতে চলেছেন বসুন্ধরা রাজে। মধ্যপ্রদেশ নিয়ে বুথ ফেরত সমীক্ষা যা-ই বলুক, অতটা নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ। আবার ছত্তীসগঢ়ে বিজেপির ক্ষমতায় ফেরা নিয়ে কয়েকটি বুথ ফেরত সমীক্ষায় প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। বিজেপির অন্দরেও একাংশের আশঙ্কা, অল্পের জন্য হলেও ফস্কে যেতে পারে ছত্তীসগঢ়ে ফের সরকার গড়ার স্বপ্ন।
আর দিল্লিতে যে ঠিক কী হতে চলেছে, তা নিয়ে নানা মুনির নানা মত। আশার আলো একটাই, সেখানে বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হতে পারে। কিন্তু তা যদি সরকার গড়ার জন্য পর্যাপ্ত না হয়?
বিজেপি নেতারা সবচেয়ে বেশি জোর দিচ্ছেন দিল্লির উপরে। সেখানে টেনেটুনেও যদি বিজেপি পাশ করে যায়, তা হলে কারও সমর্থন দরকার নেই। তেমন হলে যাতে কেজরিওয়ালের হাত ধরা যায়, সে প্রেক্ষাপটও তৈরি করেছেন নেতৃত্ব।
বিজেপির এক শীর্ষ নেতার কথায়, “বিধানসভায় যাঁরা কেজরিওয়ালকে ভোট দিয়েছেন, তাঁরাই লোকসভায় মোদীকে বাছবেন। কিন্তু বিধানসভায় যদি কেজরিওয়াল দশের বেশি আসন নিয়ে আসেন, তার অর্থ বিজেপির আসনে টান পড়বে। সে ক্ষেত্রে কেজরিওয়ালের সমর্থন চাইতে পারে বিজেপি।” যদিও রাজনাথ সিংহের মতে, “আমরা হিসেব কষে দেখেছি, কম করে ৩৮টি আসন পেয়ে দিল্লিতে আমরা অনায়াসে সরকার গড়ছি।” বিজেপি সূত্রের বক্তব্য, দিল্লিতে ম্যাজিক সংখ্যা না পেলে আপাতত তিনটি বিকল্প ভাবনা রয়েছে দলের।
, গত বার মায়াবতীর দল দিল্লিতে দু’টি বিধানসভার আসনে জিতেছিল। এ বারে প্রায় ছ’টি আসনে তারা লড়াইয়ে আছে। যদি মায়াবতীকে পাশে পাওয়া যায়, তা হলে কেজরিওয়াল-মুখো হবে না দল।
, কেজরিওয়ালের কাছে সমর্থন চাওয়া হবে।
, কেজরিওয়াল রাজি না হলে তাঁকেই মুখ্যমন্ত্রী করে সমর্থন করার প্রস্তাব দেবে বিজেপি। কিন্তু তাতেও যদি কেজরিওয়াল রাজি না হন? সূত্রের খবর, তখনই উঠছে চতুর্থ বিকল্পের ভাবনা। তা হল, কেজরিওয়ালের দল ভাঙা। দিল্লিতে বিজেপি নেতাদের একাংশ আজ পরোক্ষে চতুর্থ সম্ভাবনাটির কথা মেনেও নিয়েছেন। তাদের এই কৌশল নিয়ে ফল প্রকাশের আগের রাতেই সরব হয়েছে আম-আদমি পার্টি। দলের নেতা কুমার বিশ্বাসের অভিযোগ, “বিজেপি আমাদের দল ভাঙানোর চেষ্টা করছে।” যদিও আত্মবিশ্বাসী কেজরিওয়ালের মন্তব্য, “দিল্লিতে সরকার আমাদেরই হবে। তবে আমার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার কোনও বাসনা নেই। বিধানসভার পর লোকসভা ভোটে জাতীয় স্তরের লড়াই শুরু করব।”
দিল্লিতে তবু কেজরিওয়াল বা মায়াবতীকে পাশে পাওয়ার পথ রয়েছে। কিন্তু মধ্যপ্রদেশ বা ছত্তীসগঢ়ে তো তা-ও নেই! বড়জোর নির্দলদের উপর কিছুটা ভরসা রাখা যেতে পারে। কিন্তু কংগ্রেসের সঙ্গে আসন পার্থক্য খুব বেশি না হলে নির্দলদের পাশে টানার ব্যাপারে সনিয়া গাঁধীর দল বাজিমাত করতে পারে বলে আশঙ্কা বিজেপি শিবিরেই। আর সে ক্ষেত্রে তাঁদের উদ্বেগ বাড়িয়েছে শিবরাজ সিংহ চৌহানের মধ্যপ্রদেশ। এমনিতে বুথ ফেরত সমীক্ষার ফল দলের কাছে আশাপ্রদ। কিন্তু অভ্যন্তরীণ রিপোর্টে বলা হয়েছে মূলত তিনটি বিষয় বিপক্ষে যেতে পারে। এক, শিবরাজের ঘনিষ্ঠ কয়েক জন মন্ত্রীর কাজকর্ম নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে দলেই। ফলে একাধিক আসনে অন্তর্ঘাতের আশঙ্কা রয়েছে। দ্বিতীয়ত, মোদীকে এনে প্রচার করানোয় অন্তত ৩৫টি আসনে মেরুকরণের সম্ভাবনা, যার ফায়দা পেতে পারে কংগ্রেস। তৃতীয়টা হল, প্রতিষ্ঠান-বিরোধী ভোট। এই অবস্থায় মধ্যপ্রদেশে বিজেপির বড় ভরসা শিবরাজের ভাবমূর্তি। একই ভাবে ছত্তীসগঢ়ে অজিত জোগীর সঙ্গে পাল্লা দিতে রমন সিংহের উন্নয়নমুখী ভাবমূর্তিই ভরসা রাজনাথের দলের।
বিজেপি নেতারা বলছেন, হিন্দি বলয়ের চার রাজ্যে যদি ফলাফল বিজেপির পক্ষে ৩-১ হয়, তা হলে লোকসভার আগে পর্যন্ত মোদীর দাপট অব্যাহত থাকবে। লোকসভাতেও মোদী-ম্যাজিকের ভরসা করা যাবে। কিন্তু ২-২ হলেই কংগ্রেস বাড়তি অক্সিজেন পেয়ে যাবে। আর সেটা যাতে না হয়, সে জন্য এখন থেকে মরিয়া বিজেপির মোদী-পন্থী নেতারা। দলের শীর্ষ নেতা অরুণ জেটলি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য বিধানসভার ভোটের ফলকে পুঁজি করে নরেন্দ্র মোদীর লোকসভার প্রচার শুরু করা। কাল ফল প্রকাশের পর পরশু থেকেই এই প্রচার আমরা শুরু করে দেব।” এখন শুধু প্রহর গোনা।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.