|
|
|
|
ঘরে-বাইরে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে ‘ওয়ার-রুমে’ বৈঠক |
শঙ্খদীপ দাস • নয়াদিল্লি
৭ ডিসেম্বর |
সামনে ‘দুর্ধর্ষ দুশমন’। আর ঘরে ‘শত্রু বিভীষণ’!
হিন্দিবলয়ের চার রাজ্যের বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশ আগামিকাল। তার আগে বুথ ফেরত সমীক্ষায় অশনিসঙ্কেত পেয়ে এমনই সাঁড়াশি আক্রমণের আশঙ্কায় রয়েছেন রাহুল গাঁধী ও টিম রাহুল। নেতিবাচক সম্ভাবনা ধরে নিয়েই সঙ্কট মোকাবিলার কৌশলও নির্ধারণ করছেন।
রাহুল শিবিরের এক নেতা আজ বলেন, “শুনুন, ভাল ফল হলে জরুরি ভিত্তিতে কৌশল তৈরির দরকার নেই। খারাপ ফল কী হবে, সেটাই চিন্তার।” রাহুল ঘনিষ্ঠদের মতে, লোকসভা ভোটের আগে চার রাজ্যেই বিপর্যয় হলে একে তো ঘরে ঢুকে যাবেন কংগ্রেস কর্মীরা। তার থেকেও বড় আশঙ্কা, প্রশ্ন উঠে যাবে রাহুলের নেতৃত্ব নিয়েই। মা সনিয়া গাঁধীর অন্যতম উৎকণ্ঠাও এখন সেটাই। রাহুলের ওপর ব্যর্থতার তকমা সাঁটতে ইতিমধ্যেই বাছাই করা শব্দ জমিয়ে রেখেছে বিজেপি। টিম রাহুলের আশঙ্কা, কটাক্ষের জন্য ওঁৎ পেতে রয়েছেন শরদ পওয়ারের মতো শরিক নেতারাও। কংগ্রেসের বর্ষীয়ানরাও এই সুযোগে রাহুলের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে দলে পরিবর্তনের চেষ্টাকে থমকে দিতে চাইবেন বলে মনে করছেন তাঁরা। জয়রাম রমেশদের মতে, সেই পরিস্থিতি লোকসভা ভোটের আগে দলকে আরও দিশাহীনতার দিকে ঠেলে দিতে পারে।
তা হলে মোকাবিলায় কী কৌশল নিচ্ছে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড?
কাল ফল প্রকাশের আগে আজ সনিয়া-রাহুলের নির্দেশে গুরুদ্বার রেকাবগঞ্জ রোডে কংগ্রেসের ‘ওয়ার রুমে’ দলের ৩২ জন মুখপাত্রকে ডেকেছিলেন মিডিয়া বিভাগের চেয়ারম্যান অজয় মাকেন। আগামিকাল যখন ভোট গোনা চলবে, তখন বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে কংগ্রেসের এই নেতারাই বিতর্কে অংশ নেবেন। |
|
কংগ্রেস সূত্রের খবর, মাকেন দলীয় মুখপাত্রদের জানিয়েছেন, ফল যতই খারাপ হোক, জবাব দিতে হবে মুন্সিয়ানার সঙ্গে। কখনওই স্বীকার করলে চলবে না, এটা রাহুলের ব্যর্থতা। বরং বলতে হবে, সমষ্টিগত পরাজয়। কারও একার দোষ নেই এখানে। আগ্রাসী হয়ে পাল্টা প্রশ্ন তুলতে হবে মোদী জাদু নিয়েও। মুখপাত্রদের মাকেন তথ্য দিয়ে জানিয়েছেন, শেষ এক বছরে তিনটি রাজ্যে বিজেপিকে হারিয়েছে কংগ্রেস হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড এবং কর্নাটক। সব ক’টি রাজ্যেই মোদী প্রচারে গিয়েছিলেন। এ কথা বলে প্রশ্ন তুলতে হবে, তা হলে আলাদা করে মোদী জাদুর প্রসঙ্গ উঠছে কী ভাবে? কংগ্রেস আরও বলবে, বিধানসভা ভোট হয়েছে স্থানীয় বিষয়ের ভিত্তিতে। এই ফল কোনও ভাবেই দেশ জুড়ে কংগ্রেস-বিরোধিতার বার্তা দিচ্ছে না।
বৈঠকের পর কংগ্রেসের এক মুখপাত্র বলেন, এর আগে রাহুলকে যে কখনও বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হয়নি, তা নয়। বিহার ও উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা ভোটে রাহুলের নেতৃত্বে ভোট লড়ে হেরেছে দল। উত্তরপ্রদেশে ভরাডুবির পর রাহুল প্রকাশ্যে দায় স্বীকার করেছেন। কিন্তু এ বারের পরিস্থিতি একেবারেই অন্য রকম। তিন মাস বাদে লোকসভা ভোট। তার আগে দলের স্বার্থেই রাহুল-মহিমা অটুট রাখাটা জরুরি।
কিন্তু সনিয়ার সমস্যা হল, শুধু সংবাদমাধ্যমে মহিমা রক্ষাই নয়, দলেও রাহুলের ভাবমূর্তি রক্ষা করাটা এখন চ্যালেঞ্জ। ১০ জনপথের ঘনিষ্ঠ এক নেতা আজ বলেন, পাঁচ রাজ্যের ভোটে প্রার্থী নির্বাচন থেকে প্রচার কৌশল, বহু বিষয়েই রাহুল বর্ষীয়ানদের মত নেননি। আহমেদ পটেল, দিগ্বিজয় সিংহ, অজিত জোগী, জনার্দন দ্বিবেদীর মতো নেতাদের সঙ্গেও পরামর্শ করেননি। রাহুলের ওপর তাই তাঁরা যারপরনাই ক্ষুব্ধ। ভোটের ফল খারাপ হলে রাহুলের নেতৃত্ব ও তাঁর কাজের ধরন নিয়ে প্রশ্ন তুলতে তাঁরা দেরি করবেন না।
বুথ ফেরত সমীক্ষা প্রকাশের পর থেকে দলের একাধিক বর্ষীয়ান নেতা বলতে শুরু করেছেন, রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশে প্রার্থী বাছাইয়ে প্রচুর ভুলভ্রান্তি হয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য মধুসূদন মিস্ত্রী নামক গুজরাতের যে নেতাটিকে দায়িত্ব দিয়েছেন রাহুল, তিনি নিজেই কিছু বোঝেন না। ইস্তেহার তৈরিতে মোহন গোপালকে দায়িত্ব দেওয়া নিয়েও রোষ রয়েছে দলে। মধ্যপ্রদেশের নেতাদের প্রশ্ন, সেখানে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াকে কেন মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করা হল না? করলে ফল ভাল হতে পারত।
রাহুলের প্রচার কৌশল নিয়েও শুরু হয়েছে কাটাছেঁড়া। দলের অনেকে এ-ও বলছেন, শুরুতে রাহুলের প্রচারে আগ্রাসন থাকলেও শেষ দিকে ধার চলে গিয়েছিল। দিল্লিতে প্রচারের শেষ ধাপে মোদী যখন দাপিয়ে বেরিয়েছেন, তখন কংগ্রেসের দুর্গ একা রক্ষা করতে হয়েছে শীলা দীক্ষিতকে।
কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির এক বর্ষীয়ান নেতা আজ বলেন, চার রাজ্যের ভোটে বিপর্যয় হলে তাত্ত্বিক দিক থেকেও ধাক্কা খাবে রাহুলের সূত্র। কারণ, কাজ ও খাদ্যের অধিকারকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে রাহুল এ বার প্রচার করেছিলেন। দৃষ্টান্ত হিসাবে তুলে ধরছিলেন রাজস্থান ও দিল্লিতে সামাজিক প্রকল্প রূপায়ণের সাফল্যকে। এর পরেও যদি ওই দুই রাজ্যে কংগ্রেস হারে, তা হলে ভবিষ্যতে কী দৃষ্টান্ত দেবেন রাহুল? কংগ্রেস নেতৃত্বের মতে, এই পরিস্থিতিতে রাহুলের মুখ বাঁচাতে পারে ছত্তীসগঢ়। সেখানেই একমাত্র জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশাসী কংগ্রেস। তা হলে অন্তত কেউ অভিযোগ করতে পারবেন না যে, রাহুল পুরোপুরি ব্যর্থ। দেশ জুড়ে কংগ্রেস-বিরোধী হাওয়া বইছে, এই বক্তব্যও খণ্ডণ করা যাবে। জ্যোতিরাদিত্যরা আশা করছেন, মধ্যপ্রদেশেও ফল আগের থেকে ভাল, এমনকী বিস্ময়কর ফল হতে পারে।
কংগ্রেসের এ সব আশা-আশঙ্কার মধ্যে এ দিন সন্ধ্যায় সপা সাংসদ নরেশ আগ্রবাল ঘরোয়া আড্ডায় বলেন, রাহুলকে তো মাঠে মেরেছেন (জনসভায়) মোদী। ভোটে কী হয় দেখুন এ বার!
|
পুরনো খবর: গেরুয়া ঝড়ের আঁচ সমীক্ষায় |
|
|
|
|
|