|
|
|
|
গেরুয়া ঝড়ের আঁচ সমীক্ষায় |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি
৪ ডিসেম্বর |
দরজায় কড়া নাড়ছে লোকসভা ভোট। তার আগে চার রাজ্যের বিধানসভা ভোটের বুথ-ফেরত সমীক্ষা গভীর করল কংগ্রেসের কপালের ভাঁজ। অন্য দিকে আরও চাঙ্গা বিজেপি শিবির। কারণ, এ দিন সমীক্ষার যেটুকু ফল সামনে এসেছে, তাতে চার রাজ্যেই গেরুয়া পতাকা ওড়ার সম্ভাবনা প্রবল। আগামিকাল পুরো ফল প্রকাশ হলে ছবিটা আরও স্পষ্ট হবে।
‘এবিপি নিউজ’ ও ‘এসি নিয়েলসেন’-এর বুথ-ফেরত সমীক্ষায় আজ দু’টি রাজ্যের ফল প্রকাশ করা হয়েছে। দিল্লি এবং মধ্যপ্রদেশ। সমীক্ষার মতে, দিল্লিতে ১৫ বছরের কংগ্রেস শাসনের অবসান হতে চলেছে। অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টির উত্থান রাজনৈতিক সমীকরণ পাল্টে দিয়েছে সে রাজ্যে। ৭০ আসনের দিল্লি বিধানসভায় ৩৭টি আসন পেয়ে ক্ষমতায় আসতে চলেছে বিজেপি।
আর মধ্যপ্রদেশে বিজেপি ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে বলেই ইঙ্গিত বুথ-ফেরত সমীক্ষার। সেখানে বিধানসভার আসন সংখ্যা ২৩০। ‘এবিপি নিউজ’-এর সমীক্ষার মতে ১৩৭টি আসন পেয়ে ফের ক্ষমতায় আসতে চলেছেন শিবরাজ সিংহ চৌহান।
অন্য দুই টিভি চ্যানেল ‘সিএনএন-আইবিএন’ এবং ‘আজ তক’-এর সমীক্ষার ফলও মোটের উপর গেরুয়া ঝড়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে। ‘আজ তক’ চার রাজ্যের (দিল্লি, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও ছত্তীসগঢ়) সমীক্ষার ফল প্রকাশ করলেও ‘সিএনএন-আইবিএন’ দিল্লির ফল এ দিন জানায়নি। |
 |
এই চার রাজ্যের সঙ্গে এ যাত্রায় ভোট হয়েছে উত্তর-পূর্বের মিজোরামেও। তবে সেখানে বুথ-ফেরত সমীক্ষা হয়নি। পাঁচ রাজ্যেরই ভোট গণনা হবে রবিবার, ৮ তারিখ। বুথ-ফেরত সমীক্ষার ফল মেলে কিনা, তার পরীক্ষা সেই দিনই। এটা ঠিক যে অতীতে অনেক বারই বুথ-ফেরত সমীক্ষার ফল ভুল প্রমাণিত হয়েছে। আবার সমীক্ষার ফল মিলে যাওয়ার উদাহরণও কম নয়। কিন্তু এই অনিশ্চয়তার বাইরেও ভোটদাতাদের মানসিকতার আঁচ পেতে এমন সমীক্ষার যে একটা গ্রহণযোগ্যতা আছে, সে কথা স্বীকার করেন অনেক বিশেষজ্ঞই।
‘এবিপি নিউজ’-এর সমীক্ষা বলছে, দিল্লিতে কংগ্রেসের আসন সংখ্যা ৪৩ থেকে কমে ১৬ হয়ে যেতে পারে। স্বচ্ছ প্রশাসন কায়েম করার আশ্বাস দিয়ে ভোটে লড়া আম আদমি পার্টি ১৫টি আসন পেয়ে বিরোধী দল হওয়ার লড়াইয়ে নিঃশ্বাস ফেলতে পারে তাদের ঘাড়ে। ‘আজ তক’-এর সমীক্ষা অবশ্য কংগ্রেসকে ২০টি আসন দিয়েছে। কেজরিওয়ালের দলকে ৬। আর তাদের মতে বিজেপি পাবে ৪১টি আসন।
মধ্যপ্রদেশে বিজেপি যে জয়ের হ্যাটট্রিক করতে চলেছে, তা নিয়েও তিন সমীক্ষার মধ্যে কোনও মতবিরোধ নেই। শাসক দলকে মোটামুটি একই সংখ্যক আসন দিয়েছে তারা। ‘এবিপি নিউজ’ এবং ‘আজ তক’ দু’জনেই বলেছে বিজেপি পাবে ১৩৮টি আসন। অর্থাৎ, গত বারের থেকে মাত্র পাঁচটি আসন কমছে শিবরাজের। দু’টি সমীক্ষাই কংগ্রেসকে ৮০টি আসন দিয়েছে। ‘সিএনএন-আইবিএন’-এর মতে বিজেপির আসন সংখ্যা থাকতে পারে ১৩৬ থেকে ১৪৬-এর মধ্যে। আর কংগ্রেসের ৬৭ থেকে ৭৭। |
|
ভোট দিতে এসেছেন আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল। অন্যদিকে ভোটের লাইনে রাহুল গাঁধী। |
দিল্লির মতো রাজস্থানও কংগ্রেসের হাতছাড়া হতে চলেছে বলে ইঙ্গিত দুই সমীক্ষায়। ২০০ আসনের রাজ্যে ‘আজ তক’ বিজেপি-কে ১১০ এবং কংগ্রেসকে ৬২টি আসন দিয়েছে। ‘সিএনএন-আইবিএন’-এর পূর্বাভাস বিজেপি ১২৬ থেকে ১৩৬ এবং কংগ্রেস ৪৯ থেকে ৫৭টি আসন পেতে পারে।
পাশাপাশি, ছত্তীসগঢ় বিজেপির হাতেই থেকে যেতে পারে বলে জানাচ্ছে সমীক্ষা। ‘আজ তক’ বিজেপি-কে যেখানে ৫৩টি আসন দিয়েছে, ‘সিএনএন-আইবিএন’ দিয়েছে ৪৫ থেকে ৫৫টি আসন। ‘আজ তক’-এর মতে ৩৩টি আসন পেতে পারে কংগ্রেস। ‘সিএনএন-আইবিএন’ বলছে ৩২ থেকে ৪০। ছত্তীসগঢ়ের মোট আসন ৯০।
চার রাজ্যের এই সমীক্ষা যদি সত্যি হয়, তা হলে লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেস কর্মীদের মনোবল ধাক্কা খাবে বলে দলীয় নেতাদের একটা বড় অংশের আশঙ্কা। কারও কারও মতে, সংশয় তৈরি হতে পারে রাহুল গাঁধীর নেতৃত্ব নিয়েও। কারণ, প্রার্থী মনোনয়ন থেকে শুরু করে দলের প্রচার এবং কৌশল নির্ধারণ সব ব্যাপারেই তিনি ছিলেন প্রধান কাণ্ডারী। তবে এখনই হাল ছাড়তে নারাজ কংগ্রেস নেতারা। তাঁদের দাবি সমীক্ষা ভুল প্রমাণ করে তাঁদের ফল ভাল হবে। বিজেপি শিবির কিন্তু এখন থেকেই উচ্ছ্বসিত। লোকসভা ভোটের আগে চার রাজ্যেই দল ক্ষমতায় এলে নরেন্দ্র মোদীর পায়ের তলার মাটি আরও শক্ত হবে বলেই মনে করছেন বিজেপি নেতারা। কারণ, রাহুলের মতো মোদীই ছিলেন এ বারে প্রচারে বিজেপির একমাত্র মুখ। দুর্নীতি, মূল্যবৃদ্ধি আর নীতিপঙ্গুত্বের জেরে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে এই হাওয়া লোকসভা ভোট পর্যন্ত থাকবে বলেই বিজেপি আশাবাদী। |
 |
ভোট দিয়ে বেরোচ্ছেন শীলা দীক্ষিত। সঙ্গে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। |
অনেকেই বলছেন, চার রাজ্যের এই ভোট সেমিফাইনাল। ফাইনাল হবে আর বড়জোর ছ’মাস পরে লোকসভায়। এবং ফাইনালে কী ফল হতে পারে তার ইঙ্গিত দিয়ে গেল এই সেমিফাইনাল ভোট। এই তত্ত্বে অবিশ্বাসীরা অবশ্য মনে করাচ্ছেন ২০০৪ সালের কথা। সে বার মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এবং ছত্তীসগঢ় কংগ্রেসের থেকে ছিনিয়ে নিয়ে আগাম লোকসভা ভোটে চলে গিয়েছিল আত্মবিশ্বাসী বিজেপি। তার পর থেকেই তারা বিরোধী আসনে।
এই ব্যাখ্যার বিরোধীরা বলছেন, রাজনীতি গতিশীল। পুরনো পরিসংখ্যান দিয়ে বর্তমানকে বিশ্লেষণ করাটা তাই ভুল হতেই পারে। কারণ পরিস্থিতি বদলেছে। তাঁদের মতে, দিল্লির ভোট ফলটাই লোকসভার নিরিখে তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। কারণ, ভূমিপুত্র ও বিভিন্ন রাজ্যের প্রবাসীদের নিয়ে দিল্লি হল ‘মিনি ভারত’। তাই এখানকার ফল থেকে লোকসভা ভোটের একটা আগাম ইঙ্গিত মিলতে পারে।
কংগ্রেস বা বিজেপি নেতাদেরও অনেকে মেনে নিচ্ছেন যে, দিল্লির ফলাফল জাতীয় রাজনীতিতে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, “দিল্লি ছোট রাজ্য হলেও গোটা দেশের নজর থাকে এর দিকে। ‘দিল্লি কেয়া বোলতা হ্যায়’, এটা জাতীয় রাজনীতিতে সত্যিই খুব গুরুত্বপূর্ণ।” এবং ঘটনা হল, ২০০৪-এ কিন্তু দিল্লি বিজেপি-র অধরাই থেকে গিয়েছিল। ভোট বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, স্থানীয় প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার কারণে সে বার বিজেপি ছত্তীসগঢ়, মধ্যপ্রদেশ এবং রাজস্থানে কংগ্রেসকে হারিয়ে দিলেও দিল্লিতে কিন্তু পারেনি। কারণ, দিল্লিতে শুধু ভূমিপুত্ররা নন, ভিন্ রাজ্যের বাসিন্দারাও দু’হাত তুলে ভোট দিয়েছিলেন শীলা দীক্ষিতকে। একই ঘটনা ঘটেছিল ২০০৮-এও। উন্নয়নের প্রশ্নে শীলার ভূমিকাকে সমর্থন করেছিলেন মানুষ। তা ছাড়া, কেন্দ্রে কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধেও তখন তেমন কোনও অসন্তোষ ছিল না।
কিন্তু এ বার শীলা দীক্ষিত সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ। বিশেষ করে নির্ভয়া-কাণ্ডের পরে দিল্লিবাসী যে ভাবে রাস্তায় নেমে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়েছিলেন, তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। তা ছাড়া, মূল্যবৃদ্ধি পরিস্থিতি এবং কেন্দ্রে কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতাও রয়েছে। আর এই সব মিলিত কারণেই দিল্লিতে কংগ্রেসের পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছে বলে মনে করছেন তাঁরা। এমনকী বুথ-ফেরত সমীক্ষার ভিত্তিতে অনেকে এ-ও বলতে শুরু করেছেন, এর পর নয়াদিল্লি বিধানসভা কেন্দ্রে শীলা দীক্ষিতকেও আর নিরাপদ বলে মনে করা যাচ্ছে না।
বাস্তবে কী হবে তা অবশ্য জানা যাবে রবিবার। |
ভোট চিত্র |
 |
 |
 |
 |
অন্যান্য |
দিল্লি ৭০ |
৩৭ |
১৬ |
১৫ |
২ |
মধ্যপ্রদেশ ২৩০ |
১৩৮ |
৮০ |
- |
১২ |
|
 |
 |
 |
অন্যান্য |
ছত্তীসগঢ় ৯০ |
৪৫-৫৫ |
৩২-৪০ |
৩-৫ |
মধ্যপ্রদেশ ২৩০ |
১৩৬-১৪৬ |
৬৭-৭৭ |
১৩-২১ |
রাজস্থান ২০০ |
১২৬-১৩৬ |
৪৯-৫৭ |
১২-২০ |
|
 |
 |
 |
 |
অন্যান্য |
দিল্লি ৭০ |
৪১ |
২০ |
৬ |
৩ |
রাজস্থান ২০০ |
১১০ |
৬২ |
- |
২৮ |
ছত্তীসগঢ় ৯০ |
৫৩ |
৩৩ |
- |
৪ |
মধ্যপ্রদেশ ২৩০ |
১৩৮ |
৮০ |
- |
১২ |
|
পুরনো খবর: অরবিন্দের ঝাড়ু কার জমি সাফ করবে আজ, চিন্তা দু’শিবিরেই |
|
|
 |
|
|