|
|
|
|
অরবিন্দের ঝাড়ু কার জমি সাফ করবে আজ, চিন্তা দু’শিবিরেই |
শঙ্খদীপ দাস • নয়াদিল্লি
৩ ডিসেম্বর |
আম আদমির মনে কতটা খাস জায়গা নিতে পারলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল? কাল দিল্লিতে বিধানসভা নির্বাচন। তার সম্ভাব্য ফলাফল নিয়ে তামাম জল্পনার বৃত্তে কেন্দ্রবিন্দু এখন এই প্রশ্নটাই।
প্রশ্নটা যে শুধু রাজধানীর আম ভোটারকে ভাবাচ্ছে তা নয়, রীতিমতো আশঙ্কার মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে জাতীয় রাজনীতির যুযুধান দুই দল কংগ্রেস ও বিজেপি-কে। কারণ, রাতারাতি তাদের খাস তালুকে ঢুকে পড়ে তাদের দীর্ঘদিনের ভোট অঙ্ক দৃশ্যতই ঘেঁটে দিয়েছেন অরবিন্দ-বাহিনী। রাজনীতির পণ্ডিতদের মতে, এ বার আম আদমি পার্টি তথা আপ-এর ফলাফলের ওপরেই কার্যত নির্ভর করছে দিল্লির ভবিষ্যৎ!
দু’বছর আগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যখন অণ্ণা হজারে আন্দোলন শুরু করেন তখন কেজরিওয়ালই ছিলেন তাঁর অন্যতম সেনাপতি। আয়কর বিভাগের চাকরি ছেড়ে সে সময় অণ্ণার আন্দোলন নিয়ে ঢেউ তুলতে প্রাণপাত করেছেন কেজরিওয়াল। তলে-তলে তাঁকে ভরপুর মদত জুগিয়েছিল বিজেপি। তাদের ধারণা ছিল, কমনওয়েলথ গেমস, টুজি কাণ্ডের মতো পরের পর দুর্নীতির ঘটনায় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে মানুষের অসন্তোষ বাড়ছে। তাই অন্না-অরবিন্দের আন্দোলনের সুফল তাঁরাই পাবেন। কিন্তু অরবিন্দ যে নিজেই দল ফেঁদে ভোটের ময়দানে প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠবেন, বিজেপি-ও তা আঁচ করতে পারেনি। অরবিন্দ রাজনৈতিক দল গঠনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতেই বিরোধী ভোট ভাগ হওয়ার আশঙ্কায় প্রমাদ গুনেছিল বিজেপি। খুশি হয়েছিল কংগ্রেস। কিন্তু পরে তারা বুঝতে পারে, ইন্দিরা গাঁধীর জমানা থেকেই দিল্লির যে সব বস্তি এলাকা ছিল কংগ্রেসের দুর্গ, সেখানেও থাবা বসাচ্ছে আপ। প্রচার পর্বেই দেখা গিয়েছে, মঙ্গলপুরী, কল্যাণপুরী, উত্তমনগরের মতো এলাকায় আপ-এর মিছিলে শুধু লোক জুটছে তা নয়, লোকে মুখের ওপর এ-ও বলছেন, “ইসবার ঝাড়ু চলেগা।” ঝাড়ু আপ-র প্রতীক চিহ্ন। ফলে শীলা দীক্ষিতদেও ঘোর চিন্তায় ফেলেছে আপ। গত দেড় দশক ধরে প্রতি নির্বাচনেই মূলত দ্বিমুখী লড়াই দেখেছে দিল্লি। কংগ্রেস-বিজেপি, দু’দলই স্বীকার করে নিচ্ছে ত্রিমুখী লড়াই হচ্ছে এই প্রথম।
সাম্প্রতিক বিভিন্ন জনমত সমীক্ষাও জানিয়েছে, দিল্লিতে আপ উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় ভোট পাবে এ বার। কারও মতে ৮-১০টি আসন, কারও মতে ১৮টি পর্যন্ত আসনেও জিততে পারে তারা। সব সমীক্ষাই জানাচ্ছে, আপ-এর দাপটে কংগ্রেস বা বিজেপি কেউই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। এই সব সমীক্ষাও প্রচারের হাতিয়ার হয়েছে আপ-এর। তা ছাড়া সাড়া জাগাতে চমক দেওয়ার ক্ষেত্রেও কোনও খামতি রাখেননি অরবিন্দ। নেতারা সাধারণত নিরাপদ কেন্দ্র খোঁজেন ভোটে। কেউ একাধিক আসনে দাঁড়ান। তিনি দাঁড়িয়েছেন খোদ শীলার বিরুদ্ধে।
কেউ কেউ আবার মলদ্বীপের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মহম্মদ নাসিদের সঙ্গে তুলনা করছেন অরিবিন্দের। নাসিদও গায়ুম-জমানার দুর্নীতির বিরুদ্ধে এ ভাবেই ঝড় তুলেছিলেন দল, অর্থবল ও ক্ষমতাশালী গোষ্ঠীর সমর্থন ছাড়াই। নির্বাচনে বিপুল সমর্থন পেয়ে দেশের প্রেসিডেন্ট হন নাসিদ। যদিও পরে তাঁর বিরুদ্ধেও ওঠে অভিযোগ। অরবিন্দ-অনুগামীদের বিরুদ্ধে অবশ্য নানা অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে ভোটের আগেই।
ঝাড়ু-ফ্যাক্টর নিয়ে চিন্তায় থাকলেও নিজস্ব কিছু হিসেব কষছে দুই শিবিরই। যেমন বিজেপি মনে করছে, স্থানীয় প্রসঙ্গ বড় ভূমিকা নেবে ভোটে। উত্তরপ্রদেশে গোষ্ঠী সংঘর্ষের প্রভাবে দিল্লির সীমান্তবর্তী এলাকার জাঠ ভোট আসবে তাদের ঝুলিতে। কংগ্রেসের প্রধান মূলধন অবশ্যই শীলার ‘সাফল্য’। সেই সঙ্গে ভরসা দলের বিধায়করাও। ৭০ আসনের বিধানসভায় বর্তমানে কংগ্রেস বিধায়ক ৪৩ জন। এঁদের প্রায় সকলকেই টিকিট দিয়েছে দল। কিন্তু এ সব হিসেব ছাপিয়ে দুই শিবিরেই দীর্ঘ হয়ে উঠেছে আপ-এর ছায়া। দু’পক্ষই চিন্তায়, ন’মাস ধরে দিল্লিতে বেড়ে উঠেছে যে দল, সেই আম আদমি পার্টি শেষ পর্যন্ত কাকে বধ করবে, বিজেপি না কংগ্রেসকে?
নাকি উভয়কেই!
|
পুরনো খবর: শীলার হয়ে রাজনীতির মাঠে রাষ্ট্রপতির মেয়ে |
|
|
|
|
|