|
|
|
|
বিস্ফোরণে উড়ে গেল পুলিশের গাড়ি, ওসি-সহ নিহত সাত জন |
স্বপন সরকার • পটনা
৩ নভেম্বর |
পার্শ্ববর্তী থানায় আইসি-র ক্রাইম মিটিং সেরে নিজেদের থানায় ফেরার পথে মাওবাদীদের ল্যান্ড মাইনে উড়ে গেল পুলিশের একটি গাড়ি। বিস্ফোরণের জেরে ঔরঙ্গাবাদের তান্ডওয়া থানার ওসি-সহ সাত পুলিশকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। আজ বিকেল সোয়া চারটে নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে ঔরঙ্গাবাদেরই নবীনগর থানা থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে, শঙ্করপুরে। রাজ্য পুলিশের ডিজিপি অভয়ানন্দ বলেন, “গাড়িতে যাঁরা ছিলেন সেই সাত জনেরই মৃত্যু হয়েছে। কেউ বেঁচে না থাকায় কী ভাবে ঘটনাটি ঘটেছে তা জানতে সময় লাগবে। তবে মাওবাদীদের পোঁতা ল্যান্ড মাইনেই এই বিস্ফোরণ ঘটেছে।”
কয়েক মাস আগে ঝাড়খণ্ডের দুমকায় পাকুড়ের পুলিশ সুপারের গাড়ির উপরে যে ভাবে মাওবাদীরা হামলা চালিয়েছিল, ঔরঙ্গাবাদেও সেই একই পদ্ধতি অনুসরণ করেছে হামলাকারী জঙ্গিরা। আজ দুপুরে নবীনগর থানায় সংশ্লিষ্ট থানাগুলির ওসিদের নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন সংশ্লিষ্ট আইসি। সেই বৈঠকেই যোগ দিতে গিয়েছিলেন তান্ডওয়ার ওসি অজয় কুমার। গাড়িটি চালাচ্ছিলেন এক হোমগার্ড। গাড়িতে স্পেশাল অক্সিলিয়ারি ফোর্সের পাঁচ সশস্ত্র জওয়ান। রাজ্য পুলিশের কর্তাদের ধারণা, ওই বৈঠকের খবর মাওবাদীদের কাছে আগেই ছিল। তারা জানত, ওই রাস্তা দিয়েই তান্ডওয়ায় ফিরতে হবে অজয় কুমারের গাড়িটিকে। পুলিশ কর্তাদের ধারণা, অজয়রা নবীনগরে পৌঁছনোর পরেই রাস্তায় ল্যান্ডমাইনটি বসানো হয়। এরপর বৈঠক সেরে যখন পুলিশের গাড়িটি ফিরছিল, সেই সময় বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। উড়িয়ে দেওয়া হয় সাত পুলিশ-সহ গাড়িটি।
এ দিনের ঘটনা নিয়ে এডিজি (সদর) রবীন্দ্র কুমার পটনায় জানিয়েছেন, “নিহতদের মধ্যে থানার ওসি, রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের পাঁচ জন এবং গাড়ির চালক তথা হোমগার্ডের এক জওয়ান আছেন। আশপাশের জেলা রোহতাস এবং গয়ায় পুলিশ অভিযান শুরু হয়েছে।” পুলিশের রাইফেল লুঠ হয়েছে কি না তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি এডিজি। তবে নবীনগর থানার ওসি জানান, পুলিশের কোনও রাইফেল খোয়া যায়নি।
ঘটনার খবর পেয়ে নবীনগর থানার পুলিশ সেখানে পৌঁছয়। পুলিশ সুপার উপেন্দ্র শর্মাও ঘটনাস্থলে পৌঁছন। জঙ্গিদের খোঁজে সংলগ্ন এলাকা জুড়ে শুরু হয়েছে তল্লাশি। এখন মাওবাদীদের ‘শহিদ সপ্তাহ’ চলছে। পুলিশের গুলিতে নিহত কমরেডদের মৃত্যুর ‘বদলা সপ্তাহ’ পালিত হচ্ছে ছত্তীসগঢ়, ওড়িশা, বিহার, ঝাড়খণ্ড-সহ সমস্ত মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকায়। এই তাদের লক্ষ্য মূলত পুলিশ ও নিরাপত্তা রক্ষীরাই। যে কারণে সর্বত্রই রাজ্য প্রশাসন বিশেষ সতর্কতা নিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, বিহারে কী সেই সতর্কতায় কোনও ঘাটতি রয়েছে? গত কয়েক দিনে বিহারে আরও কয়েকটি মাওবাদী হামলার ঘটনা ঘটেছে। দু’দিন আগে সাহেবগঞ্জ-দানাপুর ইন্টারসিটি এক্সপ্রেসে মাওবাদীরা হামলা চালিয়ে প্রহরারত তিন পুলিশ কর্মীকে খুন করে তাদের রাইফেল লুঠ করে পালায়। বিহারের ৩৮টি জেলার মধ্যে ২১টি মাওবাদী প্রভাবিত। ১৫টিতে জঙ্গিদের শক্ত ঘাঁটি। ঝাড়খণ্ডের পলামু সংলগ্ন ঔরঙ্গাবাদ মাওবাদীদের অন্যতম শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। রাজ্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, নীতীশ প্রশাসন মাওবাদীদের মোকাবিলার জন্য তেমন পদক্ষেপ করছে না। এই নিয়ে বিরোধীদের অভিযোগ তো রয়েছেই, অভিযোগ তোলা হয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক রিপোর্টেও।
নীতীশ গত কালই জনতা দরবারে বলেন, “শুধুমাত্র পুলিশি অভিযান দিয়ে এর মোকাবিলা করা যাবে না। সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে এর মোকাবিলা করতে হবে। সেই চেষ্টাই করছি।” আজই মাওবাদীদের জন্য আড়াই লাখ টাকার পুনর্বাসন প্যাকেজ ঘোষণা করেছে নীতীশ সরকার। |
|
|
|
|
|