নির্ভয়ার ভয়াবহ ধর্ষণ কাণ্ড ঘুম ছুটিয়ে দিয়েছিল উদাসীন দিল্লির। প্রতিবাদের অভূতপূর্ব জনজোয়ারে ভেসে যায় রাজধানীর রাজপথ। দিল্লিতে সংগঠিত প্রতিবাদের এমন একটি অভিনব ঘটনার পরে পাঁচ রাজ্যের ভোটের লাইনে এ বার প্রমীলা বাহিনীর বাড়তি উপস্থিতি নজর কেড়েছে। নির্বাচন কমিশনের প্রাথমিক হিসাব বলছে, রাজস্থানে মহিলাদের ভোটের হার বেড়েছে ২৫%, দিল্লিতে ২০%। তাতেই উঠেছে অনিবার্য প্রশ্ন এই ঐতিহাসিক নারী অভ্যুদয়ের সঙ্গে কি কোনও যোগ রয়েছে নির্ভয়া কাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী গণজাগরণের?
কেউ কেউ বলছেন হ্যা। অনেকে আবার এর পিছনে দেখছেন রাজনীতি। ভোটের লাইনে মহিলাদের উৎসাহের উপস্থিতিকে নির্বাচন কমিশনের দুর্দান্ত সাফল্য বলেও বর্ণনা করছেন অনেকে।
কংগ্রেস নেত্রী এবং জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট গিরিজা ব্যাস মনে করেন, চলতি সামাজিক আন্দোলনেরই ফলশ্রুতি মহিলাদের এই দলে দলে ভোটদান। তাঁর কথায়, “ভারতীয় নারীরা যে স্বাধীন হচ্ছে, এটা তারই প্রকাশ। গত বছর দিল্লিতে ধর্ষণে পর যে সামাজিক আন্দোলন শুরু হয়, তাতে মহিলাদের স্বাধীনতাবোধ বেড়েছে। আগে অনেক মহিলাই বাইরে বেরোতেন না। এখন সচেতনতা তৈরি হয়েছে।” গিরিজার মতে, কোন দলকে ভোট দিচ্ছেন, তা বড় নয়। মত প্রকাশের অধিকারকে যে গুরুত্ব দিচ্ছেন, সেটাই হল চেতন।
বুথ ফেরত সমীক্ষায় এগিয়ে থাকা বিজেপি কিন্তু গিরিজার সঙ্গে সহমত নন। তাদের বক্তব্য, মত প্রকাশের অধিকার নিয়ে কয়েক বছর ধরে নির্বাচন কমিশন যে লাগাতার প্রচার করছে, তারই সুফল মিলেছে। সচেতনতা বেড়েছে মেয়েদের। তবে বিজেপি নেতারা সেই সঙ্গে অন্য কথাও বলছেন। তাঁদের মতে, পঞ্চায়েতে মহিলা সংরক্ষণ চালুর পর গ্রামের মহিলাদের যেমন আত্মবিশ্বাস বেড়েছে, বেড়েছে সচেতনতাও।
বিজেপি নেতাদের একটা অংশ অবশ্য এই ঘটনায় মোদী-ম্যাজিকও দেখছেন। যেমন স্মৃতি ইরানির কথায়, “প্রতি রাজ্যে মোদী ৪-৫টি করে জনসভা করেছেন। মহিলারা তাঁর বক্তৃতা শুনতে এসেছেন।” আবার সুষমা স্বরাজের মতো তথাকথিত মোদী-বিরোধী গোষ্ঠীর নেত্রীর মতে, মহিলাদের এমন আত্মীয়তার বন্ধন রয়েছে শিবরাজ সিংহ চৌহান বা রমন সিংহের সঙ্গে, যে তাঁরা দলে দলে এ বার ভোটের লাইনে। সমাজ-মনস্তত্ত্ববিদ আশিস নন্দী মনে করেন, নির্বাচনী সংস্কারেই আজ মহিলারা বেশি করে ভোটের লাইনে। তাঁর কথায়, “কমিশন দারুন কাজ করেছে। ভুয়ো ভোটার কমেছে। আগে মহিলারা বাড়িতে থাকতেন। সেই জায়গায় ছাপ্পা ভোট পড়ত। এখন তা হচ্ছে না।” |