রাজস্থানে ৩ আসন খুইয়ে আরও দিশাহীন সিপিএম
হিন্দি বলয়ে এত দিন সিপিএমের ধুনি জ্বালিয়ে রেখেছিল রাজস্থানের তিনটি আসন। বিজেপির ঝড়ে সব ক’টিই হাতছাড়া। সেই সঙ্গে মোদী-জুজুকে সামনে রেখে কংগ্রেসের প্রতি নরম হওয়ার যে নীতি নিয়ে এগোনো হচ্ছিল, চার রাজ্যের ফলাফল তার উপরেও জল ঢেলে দিয়েছে।
অতঃ কিম? সিপিএমের সামনে এখন রাস্তা ঠিক করাই বড় সঙ্কট।
এ দিন ভোটের ফলাফল ঘোষণা হওয়ার পর সিপিএমের নেতাদের প্রতিক্রিয়া থেকে স্পষ্ট, এই কংগ্রেস বিরোধিতার আঁচ তারা টের পাননি। ফলে লোকসভা নির্বাচনে দল ঠিক কোন পথে এগোবে, সেটা নিয়ে নতুন করে ভাবতে বসতে হবে তাঁদের। এ দিন দলের রাজ্যসভার দলনেতা সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, “মানুষের উপরে বোঝা চাপানোর যে নীতি কংগ্রেস নিয়ে চলেছে, তার বিরুদ্ধে বিপুল ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ এই ভোটে ঘটেছে। এই জনমতকে স্বীকার এবং সম্মান করতে হবে।” অথচ এত দিন মুখে ইউপিএ সরকারের উদারনীতির সমালোচনা করলেও পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল ও কংগ্রেসের মধ্যে জোট আটকাতে কংগ্রেসের প্রতি নরম মনোভাবই নিচ্ছিলেন। উল্টে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে মমতা কেন মুখ খুলছেন না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বুদ্ধবাবুরা। মোদীর সাম্প্রদায়িকতার জুজু দেখিয়ে ধর্মনিরপেক্ষ, আঞ্চলিক দলগুলিকে এককাট্টা করার চেষ্টাও করছিলেন প্রকাশ কারাট।
কিন্তু চার রাজ্যের ফল থেকে স্পষ্ট মোদীর বিরুদ্ধে গলা তুলে মেরুকরণের ফায়দা নেওয়ার যে চেষ্টা কংগ্রেস করেছিল এবং যার উপরে সিপিএমও ভরসা রেখেছিল, সেটা কাজে দেয়নি। সিপিএম নেতারাও মানছেন, মোদীকে আমজনতার একটা বড় অংশ উগ্র হিন্দুত্বের মুখ হিসেবে দেখছেন না। বরং আর্থিক উন্নয়নের কাণ্ডারী ও সুশাসক হিসেবে দেখছেন। সুতরাং মোদী-জুজুর স্লোগান লোকসভা নির্বাচনেও কতখানি কাজ করবে, সেই নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। সিপিএম নেতৃত্ব মনে করছেন, গোটা দেশে প্রবল কংগ্রেস বিরোধিতার হাওয়ায় ভর করেই বিজেপি এতখানি এগোতে পেরেছে। বিধানসভা ভোটে হলেও সব রাজ্যেই মূল্যবৃদ্ধি থেকে শুরু করে দুর্নীতির মতো বিষয়ে ইউপিএ সরকারের প্রতি মানুষের তিতিবিরক্ত মনোভাবের প্রতিফলন ঘটেছে। দিল্লিতে আমআদমি পার্টিও তারই সুফল পেয়েছে।
সিপিএম নেতাদের প্রাথমিক বিশ্লেষণ, এই ইউপিএ তথা কংগ্রেস বিরোধী মনোভাব লোকসভা ভোটেও বহাল থাকবে। তার সুফল কুড়োবে কারা? কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, “যেখানে যে আঞ্চলিক দল শক্তিশালী, তারাই কংগ্রেস বিরোধিতার ফসল ঘরে তুলবে। তামিলনাড়ু, ওড়িশার মতো রাজ্যে বিজেপি এর সুফল পাবে না।” পশ্চিমবঙ্গেও তৃণমূলই লাভবান হবে। কারণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রের যাবতীয় নীতিকেই ‘জনবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে চলেছেন। তা সে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নিই হোক বা জ্বালানির দাম বৃদ্ধি।
এই উপলব্ধিটা আগে না হওয়াটাই হিসেবে বড় ভুল বলে মনে করছেন নেতাদের একাংশ। তাঁদের মতে, তারই খেসারত দিতে হয়েছে রাজস্থানে। গত বার তিনটি আসন জিতেছিল সিপিএম। এ বার সিপিএম, এসপি, জেডি (ইউ) মিলে বিকল্প লোকতান্ত্রিক মঞ্চ গড়েছিল। ১৪০টি আসনে প্রার্থীও দিয়েছিল। সিপিএম একাই ৩৭টি আসনে প্রার্থী দেয়। তারা ধরে নেয়, অনুপগড়, দাঁতারামগড় ও ঢোড়-এর তিনটি আসন থাকবেই। তার পাশে শ্রীগঙ্গানগর-হনুমানগড়-শিকর-চুরু জেলার ১০টি আসনে ফল ভাল হবে। কিন্তু সেই বুঁদির গড় ধসে গিয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, সর্বভারতীয় কৃষক সভার সভাপতি অমরা রামও হেরেছেন। রাজস্থানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হান্নান মোল্লা বলছেন, “প্রচারের সময়ও পূর্বাভাস মেলেনি। নিঃশব্দ ঝড়ই তৃতীয় শক্তির ভোট কেড়ে নিয়েছে।”
দলের মধ্যেই একাংশ এখন অভিযোগ করছেন, নিজেদের পায়ের তলার জমি শক্ত না করেই সিপিএম মোদী-জুজুকে হাতিয়ার করে তৃতীয় ফ্রন্ট গড়তে নেমে পড়েছিল। ফল যা হওয়ার তাই হয়েছে। কেরল থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্য বলেন, “পার্টি কংগ্রেসে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, আগে দলের ভিত মজবুত করে তার পরেই বিকল্প জোট তৈরির চেষ্টা হবে। কার্যক্ষেত্রে তা হয়নি।” দলের কেন্দ্রীয় নীতির বিরুদ্ধে আরও একটি বক্তব্য হল, আম আদমি পার্টিকে গুরুত্ব না দেওয়া। দিল্লিতে সিপিএম ৩টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল। একটি মাত্র আসনে ভোটসংখ্যা হাজারের ঘরে পৌঁছেছে। অথচ কেজরিওয়ালরা নতুন দল গড়ে ২৮টি আসন জিতেছেন। কেরলের ওই নেতার দাবি, “দল প্রশ্ন তুলেছিল, আম আদমি পার্টির বিকল্প নীতি কোথায়? কিন্তু কেজরিওয়াল দেখিয়ে দিয়েছেন, ঠিক ভাবে কংগ্রেস, বিজেপির বিরোধিতা করতে পারলে মানুষের ভোট পাওয়া সম্ভব।”
১৩-১৫ ডিসেম্বর আগরতলায় দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক বসছে। কোঝিকোড় পার্টি কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত কতখানি কার্যকর হল, আগরতলায় তা নিয়েই আলোচনা হবে। সেখানে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে ফের এ নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হতে পারে।
তবে একটা রুপোলি রেখা এখনও দেখছে সিপিএম। তাদের বিশ্লেষণে, এই বিজেপি-ঝড় অনেকটাই কংগ্রেস বিরোধিতার নেতিবাচক ভোট। ইয়েচুরির কথায়, “জনমুখী নীতি নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে গ্রহণযোগ্য বিকল্প দিতে পারলে তার সুযোগ রয়েছেই। আম আদমি পার্টির জয় তারই দৃষ্টান্ত।” এখান থেকেই অ-কংগ্রেস, অ-বিজেপি দলগুলিকে শিক্ষা নিতে হবে বলে মনে করছেন তাঁরা। ইয়েচুরি আরও জানালেন, কেন্দ্রে সরকার গড়তে গেলে ২৭৩ জন সাংসদ দরকার। সেখানে এই চার রাজ্যে ছিল মোট ৭২টি আসন। তার পরেও বাকি থাকছে পুরো দু’শো। সুতরাং এই ফল দেখেই লোকসভা নিয়ে সিদ্ধান্ত টানার যুক্তি নেই।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.