ঘাস কাটতে গিয়ে ট্র্যাক্টর থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছে সহকর্মীর। তাই, আজ সোমবার থেকে ঘাস কাটার কাজ করবেন না বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের ট্র্যাক্টর চালকেরা।
এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চেয়েছেন কর্মী ইউনিয়নের নেতারা। কর্মী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রামকৃষ্ণ বক্সী বলেন, ‘‘অনির্দিষ্টকাল ঘাস কাটা তো বন্ধ রাখা যাবে না। যে সমস্ত বিষয় নিয়ে অভিযোগ, সেগুলি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসে মেটানোর পরে কাজ শুরু হবে।”
কর্তৃপক্ষ সূত্রের খবর, পোকা-মাকড়, শিয়াল-কুকুরের উপদ্রব এড়াতেই নিয়মিত ঘাস-জঙ্গল সাফাই চলে। নয়তো সেই পোকা-মাকড়ের লোভে চলে আসে পাখি। তারা ও শিয়াল-কুকুরের জন্য ব্যাহত হয় বিমান চলাচল। বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কাও তৈরি হয়। তাই, ঘাস-জঙ্গল নিয়মিত পরিষ্কার করার জন্য বাইরের ঠিকাদার সংস্থাকে দিয়ে কিছু কাজ করা হয়। যেখানে ট্র্যাক্টরের মতো বড় গাড়ি পৌঁছতে পারে না, সেখানে সেই ঠিকাদার সংস্থার কর্মীরা হাতে ঘাস কাটেন। বাকি অংশে তিনটি ট্র্যাক্টরের পিছনে ব্লেড লাগিয়ে ঘাস কাটা হয়। |
যাঁরা নিয়মিত ট্র্যাক্টর চালিয়ে এই কাজ করেন তাঁদের অভিযোগ, রানওয়ের দু’পাশে বিদ্যুতের কেব্ল রয়েছে। সেগুলি রক্ষণাবেক্ষণ হয় নিয়মিত। অভিযোগ, মাটি খুঁড়ে সেই কাজের পরে ঠিক মতো গর্ত ভরাট করা হয় না। ফলে ট্র্যাক্টর নিয়ে তাঁরা গর্তে গিয়ে পড়েন। কর্মীদের বিশ্বাস, গত শুক্রবার বাপি ওঁরাও যে ট্র্যাক্টরটি চালাচ্ছিলেন, সেটি একটি গর্তে পড়ে যায়। টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যান বাপি। ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, এর আগেও কখনও গর্তে পড়েছে ট্র্যাক্টরের চাকা, কখনও ব্লেড ভেঙে ছিটকে গিয়েছে, কখনও গর্তে পড়ে চাকা আটকে গিয়েছে। কিন্তু, কোনও ক্ষেত্রেই কর্মীর মৃত্যু ঘটেনি। কিন্তু, শুক্রবারের ঘটনার পরে কার্যত ভয় পেয়ে গিয়েছেন তাঁরা।
বিমানবন্দরের এক গাড়িচালকের কথায়, “বিশ্বাস করবেন না, ওই এলাকায় কত সাপ রয়েছে। আমরা তাই ট্র্যাক্টর থেকে নামতেই চাই না। বাপি ট্র্যাক্টরের তলায় পড়ে গিয়েছিল। কেউ সাপের মুখেও তো পড়তে পারেন। বহুবার কর্তৃপক্ষকে বলেও কাজ হয়নি। গর্ত ভরাট করা হয়নি।” বেশ কিছু বোল্ডারও রয়েছে ওই এলাকায়। সেই বোল্ডারের উপরেও কখনও পড়ে যায় ট্র্যাক্টরের চাকা। যেহেতু চাকাগুলি তুলনায় বড় তাই, খুব সমস্যা হয় না।
শুক্রবারের ঘটনা নিয়ে তদন্তে নেমেছেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। এক অফিসারের কথায়, “আমরা এত বছর ধরে চাকরি করছি, এমন কখনও ঘটেনি।” রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয়েছে ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ)-এর তরফেও। ডিজিসিএ-এর এক কর্তার কথায়, “ট্র্যাক্টরটি রানওয়ে পেরিয়ে চলে গিয়েছিল। সেই সময় রানওয়ে থেকে বিমান ওঠানামা করছিল। তাই, এ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য চেয়ে পাঠানো হয়েছে।” বাপি ওঁরাও মৃত্যুর তদন্ত করছে বিমানবন্দর থানার পুলিশ। সে দিন বাপির সঙ্গে আর যে দুই চালক ঘাস কাটার কাজ করছিলেন, তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তাঁরাও পুলিশকে জানিয়েছেন, বাপিকে ফেলে খালি ট্র্যাক্টর যখন রানওয়ে পেরিয়ে গিয়েছে, তখন ঘটনাস্থলের কাছে পৌঁছেও সাপের ভয়ে তাঁরা নামেননি। অন্যরা পৌঁছনোর পরে তাঁরা নামেন। |