রানওয়েতে ছুটন্ত ট্র্যাক্টর, ব্লেডে ছিন্নভিন্ন চালক
রানওয়ের পাশে ঘাস কাটার সময়ে চালককে পিষে দিয়ে চালকহীন ট্র্যাক্টর পেরিয়ে গেল রানওয়ে। তার পরে ট্র্যাক্টরের পিছনের ব্লেডে কাটা পড়ল দেহটি।
শুক্রবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ ভয়াবহ এই ঘটনাটি ঘটেছে কলকাতা বিমানবন্দরের রানওয়েতে। এ দিনই শহরে এসেছেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। তাঁর বিমান নামে দুপুর ১২টা ১৮ মিনিটে। ততক্ষণে রানওয়ের পাশ থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বিমানবন্দরের কর্মী বাপি ওঁরাওয়ের (৪০) ছিন্নভিন্ন মৃতদেহ। পুলিশ জানিয়েছে,
বাপি ওঁরাও
ট্র্যাক্টরের সামনের চাকা তাঁকে পিষে দেয়। তার পরে পিছনের ধারালো ব্লেডে কাটা পড়ে তাঁর দেহ। ভাগ্য ভাল যে, সেই সময়ে কোনও বিমান নেমে আসেনি। তা হলে বড় বিপদ হতে পারত বলে মনে করছেন বিমানবন্দরের অফিসারেরা।
বিমানবন্দর সূত্রের খবর, রানওয়ের ঠিক পাশেই বড় বড় ঘাস কাটার কাজ চলে প্রায় নিয়মিত। এক মাস ধরে সেই কাজে নিযুক্ত ছিলেন পেশায় চালক বাপি। শনিবারই তাঁর সেই কাজের শেষ দিন ছিল। শুক্রবার সকাল সাড়ে আটটা থেকে শুরু হয় কাজ। পুলিশ জানিয়েছে, তিনটি ট্র্যাক্টর নিয়ে বাপি ওঁরাও, কিরণকুমার দত্ত এবং শান্তনু ধর নামে তিন জন উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত রানওয়ের পূর্ব প্রান্তে ঘাস কাটছিলেন। দক্ষিণ থেকে উত্তরের দিকে যেতে যেতে ঘাস কাটার সময়ে সকলের আগে ছিলেন বাপি। পিছনের ট্র্যাক্টর থেকে আচমকাই কিরণ দেখেন, বাপির ট্র্যাক্টরটি বাঁ দিকে ঘুরে রানওয়েতে উঠে যাচ্ছে। এ ভাবে রানওয়েতে ওঠা নিষেধ। তাই কিরণ বাপিকে চেঁচিয়ে ডাকতে শুরু করেন। তবু রানওয়েতে উঠে হেলেদুলে ট্র্যাক্টরটি এগিয়ে চলছিল। তখন কিরণ দেখেন, চালকের আসন ফাঁকা। তড়িঘড়ি নিজের ট্র্যাক্টর থেকে নেমে এগিয়ে গিয়ে দেখেন, কাটা ঘাসের স্তূপের উপরে পড়ে রয়েছে বাপির রক্তাক্ত দেহ। ততক্ষণে বাপির ট্র্যাক্টর রানওয়ে পেরিয়ে গিয়েছে। বাপিকে সেখান থেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত ঘোষণা করা হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, বাপিকে চাপা দিয়ে ট্র্যাক্টরটি একটি রানওয়ের পাশের ছোট বাতিস্তম্ভে ধাক্কা মেরে মুখ ঘুরিয়ে উঠে আসে প্রধান রানওয়ের উত্তর দিকের প্রান্তে। তার পরে এক দিক দিয়ে উঠে ৪৫ মিটার চওড়া রানওয়ে আড়াআড়ি ভাবে পেরিয়ে অন্য দিকের ঘাস-জমিতে নেমে থেমে যায়। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, রানওয়ের যে প্রান্ত দিয়ে ট্র্যাক্টরটি পেরিয়ে যায়, এ দিন বিমান নামছিল অন্য প্রান্ত দিয়ে। এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল অফিসারদের নজর ছিল বিমান নামা-ওঠার প্রান্তের দিকেই। তাই অন্য প্রান্তে ট্র্যাক্টরের গতিবিধি তাঁদের নজর এড়িয়ে যায়। এক অফিসারের কথায়, “ট্র্যাক্টর রানওয়ে পার হওয়ার সময়ে যদি কোনও বিমান উল্টো দিকে নেমে আসত, তা হলে পাইলট আগে দূর থেকেই সেটি দেখতে পেতেন। ফলে, তার আগেই তিনি বিমান দাঁড় করিয়ে দিতে পারতেন। তবু সময় মতো বিমান দাঁড় করাতে না পারলে বড়সড় বিপদ তো ঘটে যেতেই পারত।”
বাপি ট্র্যাক্টর থেকে পড়ে গেলেন কী ভাবে?
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে যেতে পারেন বাপি। নয়তো, ওই এলাকায় বেশ কিছু বড় গর্ত ও বোল্ডার রয়েছে। সেখানে চাকা পড়ে টাল সামলাতে না পেরে হয়তো তিনি পড়ে যান। কিন্তু চালকহীন ট্র্যাক্টর অতটা পথ পেরোল কী করে?
পুলিশ জানিয়েছে, বাপি যখন গাড়িটি চালাচ্ছিলেন, তখন সেটি গিয়ারে রাখা ছিল। গতি ছিল সামান্য। বাপি গাড়ি থেকে পড়ে যাওয়ার পরে তাঁর পা অ্যাক্সিলারেটর থেকে সরে যায়। এখন বেশির ভাগ গাড়িরই অ্যাক্সিলারেটরের চাপ (এ ক্ষেত্রে টিউনিং) একটু বাড়ানোই থাকে। ফলে পা সরিয়ে নিলেও গিয়ারে থাকা অবস্থায় গাড়ি গড়িয়ে চলে। এ ক্ষেত্রেও তেমনটাই ঘটেছে।
বিমানবন্দরের কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, রানওয়ের পাশে যেখানে কর্মীরা ঘাস কাটা বা পাখি তাড়ানোর কাজ করেন, সেখানে গর্ত ও বোল্ডারের কথা কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। বিদ্যুত্‌বাহী খোলা তারও পড়ে থাকার অভিযোগ রয়েছে। এক কর্মীর কথায়, “আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করি।” পুলিশ জানিয়েছে, মৃত বাপি ওঁরাও-এর বাড়িতে তাঁর মা, স্ত্রী ও তিন সন্তান আছে। তাঁর বাবাও বিমানবন্দরের কর্মী ছিলেন।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.