করলা চাষি রামেশ্বর বর্মন আত্মহত্যা করার পর ১১ বছর কেটে গিয়েছে। তবু পরিবর্তন হয়নি সেই ছবির। শীত পড়তেই ফের সব্জির দাম কমতে শুরু করেছে। চাষি ও ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, দু’সপ্তাহের মধ্যে সব্জির দাম আরও পড়বে। বিপাকে পড়তে হবে চাষিকে।
জেলার দিনহাটা ও কোচবিহার সদর মহকুমার একটি অংশ সব্জি চাষের উপর নির্ভরশীল। শীত কালে প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে সব্জি চাষ হয়। এ ছাড়াও বর্ষা ও গ্রীষ্মকালে ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে সব্জি চাষ হয়। প্রতি হেক্টর জমিতে ১৫ টন সব্জি হয়। প্রায় ২৭ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়। আলু সংরক্ষণের জন্য জেলায় ১২ হিমঘর থাকলেও সব্জির জন্য কোনও বহুমুখী হিমঘর নেই।
কৃষকরা জানান, উৎপাদিত সব্জির তুলনায় কোচবিহারে চাহিদা কম। জোগান বেশি হওয়ায় দাম কমতে শুরু করে। ২০০২ সালে আড়াই বিঘা জমির মালিক রামেশ্বরবাবু মহাজনের কাছে তিন হাজার টাকা ঋণ নিয়ে এক বিঘা জমিতে করলা চাষ করেছিলেন। করলার দাম ১১০ টাকা মনে নেমে আসায় তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন বলে অভিযোগ। বাঁধাকপি, ফুলকপি, বেগুনের দাম ৫০ পয়সা কেজিতে নেমে আসায় বহু বছর সব্জি বাজারে ফেলে দিয়ে চলে গিয়েছেন চাষিরা।
এ বছরে পাইকারি বাজারে করলা ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মাত্রই দিন দশেকের ফারাকে বাধাকপি ১৮ টাকা থেকে ৪ টাকায়, ফুলকপি ২০ টাকা থেকে ৮ টাকায় নেমেছে। বেগুন ৩০ টাকা থেকে ৫ টাকা, সিম ৩০ টাকা থেকে ১০ টাকা, গাজর ৫০ থেকে ২৫ টাকায় নেমেছে। এ অবস্থায় ঋণ নিয়ে চাষ করে সব্জির দাম না পাওয়ায় হতাশ চাষিরা। ব্যবসায়ী সংগঠন ফোসিন-এর সদস্য, দিনহাটা মহকুমা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক রানা গোস্বামী বলেছেন, “করলা চাষি রামেশ্বর বর্মনের আত্মহত্যার ঘটনার পরেও কৃষকেরা যাতে সব্জির দাম পান, সে ব্যাপারে কেউ উদ্যোগী হয়নি।” তিনি বলেন, “সব্জি সংরক্ষণে কোনও ব্যবস্থা নেই। বিপণনের ব্যবস্থা নেই। আমরা চাই সরকার ব্যবস্থা নিক, যাতে রামেশ্বর বর্মনের মতো ঘটনা আর না ঘটে।” চাষিদের এ অবস্থাপ কথা জানেন কোচবিহারের জেলাশাসক মোহন গাঁধী। তিনি বলেন, “বহুমুখী হিমঘর তৈরির জন্য প্রশাসনিক স্তরে চেষ্টা চলছে। সব্জি সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন মাপের উষ্ণতার প্রয়োজন হয়। সে জন্যই অনেকেই এই বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চান। আমরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেছি। দিনহাটার নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতিতে এক বহুমুখী হিমঘর তৈরির কাজ চলছে। ডিসেম্বরের মধ্যে তা চালু করাও হতে পারে।” |