দুই দিনের নাতিকে বিক্রির জন্য খদ্দের খুঁজছিলেন দিদিমা, প্রতিবেশীদের কাছ থেকে এমনই অভিযোগ পেয়ে জেলার চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির সদস্যরা ওই শিশুপুত্রকে উদ্ধার করেছে। পুলিশে অভিযোগও জানানো হয়েছে। মালদহ মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসার পর শিশুটিকে আপাতত হোমে রাখা হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে ইংরেজবাজার থানার মিশনঘাট পাড়ার ঘটনা।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯ বছরের দৃষ্টিহীন ওই শিশুটির মায়ের সঙ্গে প্রতিবেশী এক যুবকের ঘনিষ্ঠতা ছিল। বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে একাধিকবার সহবাস করার পর তিনি গর্ভবতী হয়ে পড়েন। এরপর সেই যুবক বিয়ে করতে বেঁকে বসায় পাড়ায় সালিশি সভাও হয়। সালিশি সভায় বিয়ের দাবি করেন ওই প্রতিবন্ধী মেয়েটি ও তার মা। তাতে কিছু না হওয়ায় ওই দৃষ্টিহীন মেয়ে ও মা ওই যুবকের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। পরে সেই মামলা তুলেও নেওয়া হয়। গত বুধবার ওই দৃষ্টিহীন তরুণী মালদহ মেডিক্যাল কলেজে পুত্রসন্তানের জন্ম দেন।
জেলা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারম্যান হাসান আলি শাহ জানান, আমাদের কাছে খবর আসে দুঃস্থ পরিবারের দৃষ্টিহীন এক মেয়ের মা একটি শিশু পুত্রকে বিক্রি করার চেষ্টা করছে। আমরা শিশুটিকে উদ্ধার করেছি। পরিবারের লোকজন শিশুটিকে মানুষ করতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন। শিশুটিকে উদ্ধার না করলে তার বিপদ হতে পারত। তাই আমরা বাচ্চাটিকে নিয়ে এসেছি।” শিশুটির দিদিমা, ওই দৃষ্টিহীন তরুণীর মা বলেন, “আমি পরিচারিকার কাজ করে কোনও রকমে সংসার চালাই। স্বামী অসুখে ভুগছে। মেয়ে চোখে দেখে না।” ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি জানিয়েছেন, নাতিকে বিক্রি করে নিজের অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসা করাতে চান তিনি। পুলিশ সূত্রে খবর, ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে শিশুটিকে বিক্রির ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন তিনি। এ দিন বিকেলে তাঁদের বাড়ি গিয়ে দেখা গেল, চাটাইয়ের দেওয়াল আর টালির চালের এক কামরার ঘর মহানন্দা নদীর ধারে। দখল-করা জমিতে বাস, তাই বিদ্যুৎ নেই। সামান্য বৃষ্টিতেই ঘর ছাড়তে হয়। চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি শিশুটিকে গ্রহণ করেছে বলে দিদিমা ও মা অন্তত কিছুটা স্বস্তিতে। “ওরাই মানুষ করুক,” বলেন দিদিমা। আপাতত মালদহের সরকারি হোমে রয়েছে শিশুটি। পরে তাকে কলকাতার একটি হোমে পাঠানো হবে, যেখানে সদ্যোজাতদের পরিচর্যার ব্যবস্থা রয়েছে। |