বালুরঘাটের চকভবানী এলাকার যুবক অভিষেক পালের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘিরে রহস্য ক্রমশ দানা বাঁধছে। ওই ঘটনায় প্রথমে পুলিশ অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা করে। মৃতের মা অপর্ণাদেবী লিখিত ভাবে এক পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে তাঁর ছেলেকে মারধরের পরে খুন করে ঝুলিয়ে দেওয়ার অভিযোগ আনায় নড়ে বসেছেন পুলিশ কর্তারা। শুক্রবার ওই পুলিশকর্মী বিশ্বজিৎ রায়ের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করেছে পুলিশ।
কিন্তু ঘটনার ৭২ ঘণ্টা পরেও মৃত যুবকের মোবাইলের সিম কার্ডের হদিস করতে পারেনি পুলিশ। অভিষেকের মোবাইল ও যে সাইকেলটি দেহের পাশে পড়েছিল, তা-ও বাজেয়াপ্ত করা হয়নি কেন, তা নিয়েও মৃতের বাড়ির লোকজন প্রশ্ন তুলেছেন। অভিষেকের ‘সুইসাইড নোট’-এ তাঁর মৃত্যুর জন্য প্রশাসন যেন কাউকে দায়ী না-করে এমন কথা লেখা কেন, তা নিয়েও অপর্ণাদেবী প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর বক্তব্য, “অভিষেক মুহুরির কাজ করে দিনে অন্তত ৫০০ টাকা করে উপার্জন করত। তাতে মা-ছেলের সংসার ভাল ভাবে চলে যাচ্ছিল। তাই সুইসাইড নোট-এ চাকরি না পেয়ে হতাশ বলে কেন লিখল, তা বুঝতে পারছি না।’’ অভিষেকের মার প্রশ্ন, “প্রশাসন যেন কাউকে দায়ী না করে, সে কথাই বা ছেলে হঠাৎ লিখবে কেন?” দক্ষিণ দিনাজপুরের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মৃত যুবকের মায়ের অভিযোগক্রমে ওই পুলিশ কর্মীর বিরুদ্ধে ৩০২ ধারায় খুনের মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু হয়েছে। পুলিশকর্মীর বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে মামলা রুজু করে তদন্ত চলছে। সব কিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
ঘটনার সূত্রপাত মঙ্গলবার রাতে। সেই রাতে অভিষেক বাড়ি ফেরেননি। সেই রাতেই পুলিশের কাছে তাঁর ছেলে নিখোঁজ বলে অভিযোগ দায়ের করান অপর্ণাদেবী। পর দিন সকালে একটি পরিত্যক্ত অফিস থেকে ছেলের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছে বলে জানতে পারেন। অপর্ণাদেবী বলেন, “খোঁজ করে জানতে পারি, মঙ্গলবার রাতে ঘোষপাড়ার পুলিশকর্মী বিশ্বজিৎবাবু তাঁর স্ত্রীকে উত্ত্যক্ত করার জন্য এক জনকে রাস্তায় মারধর করেন।” তাঁর দাবি, “ওই সময়ে প্রত্যক্ষদর্শী এক জন জানান, যে ছেলেটিকে মারা হয়, সে অভিষেক।” এর পরেই অপর্ণাদেবীর প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন এক দল মহিলা ওই পুলিশকর্মীর বাড়িতে চড়াও হয়ে ভাঙচুর চালান। পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগও দায়ের হয়। এ দিন পুলিশ বিশ্বজিৎবাবুকে জেরা করতে পারেনি। পুলিশের দাবি, বাড়িতে গিয়ে দেখা গিয়েছে তিনি নেই। বিশ্বজিৎবাবুর শ্যালক তথা আইনজীবী সুদীপ দে-এর দাবি, “খুনের অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমার দিদির বাড়ির সামনে গিয়ে মোবাইল নিয়ে এক যুবক উত্ত্যক্ত করছিল। সেই সময়ে ভগ্নিপতি গিয়ে একটি ছেলেকে মারধর করেন। সে অবশ্য অভিষেক নয়। অন্য একটি ছেলে। পরে দেখা যায়, সেই ছেলেটি নির্দোষ। তাঁর বাড়িতে গিয়ে ভগ্নিপতি ক্ষমা চেয়ে বিষয়টি মিটিয়ে নেন।” তবে যে যুবককে বিশ্বজিৎবাবু মারধর করে ক্ষমা চেয়েছেন, তাঁকে পুলিশ এখনও খুঁজে পায়নি। পুলিশের একটি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, ওই যুবক বহরমপুরের বাসিন্দা। তিনি সেখানে চলে গিয়েছেন। যে মোবাইলের দোকানে যুবকটি কাজ করতেন, সেখানকার কেউ মুখ খুলতে চাননি। তাতেই রহস্য ক্রমশ দানা বেঁধেছে। তদন্তকারী অফিসারদের একাংশ দাবি করেছেন, বহরমপুরের যুবককে এনে আদালতে জবানবন্দি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু মৃত অভিষেকের মোবাইলের কল রেকর্ড কবে মিলবে, তিনি শেষ কার সঙ্গে কী কথা বলেন সেই তথ্য কত দিনে সামনে আসবে, সেটাই বাড়ির লোকজনদের প্রশ্ন। |