বিলি হয়নি রাইজোবিয়াম, মার খাবে মুসুর-কলাই
ৃষি দফতরের অবহেলায় রাজ্য জুড়ে মার খেতে বসেছে ডাল শস্যের উৎপাদন। মুসুর ও কলাইয়ের বীজ পৌঁছলেও, আসেনি পুষ্টিবর্ধক ‘রাইজোবিয়াম’ এবং বীজকে জীবাণুমুক্ত করার শোধনকারী ওষুধ। ফলে যে চাষিরা চলতি বছরে ডাল বীজ পেয়েছেন, তাঁদের একটা বড় অংশ বীজ শোধন না করেই, এবং রাইজোবিয়াম প্রয়োগ না করেই তা বপন করতে বাধ্য হয়েছেন। যার জেরে ২০-৩০ শতাংশ ফলন কম হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষি দফতরের কর্তারা।
রাজ্য বীজ কর্পোরেশনের ম্যানেজিং ডিরেক্টর প্রদীপ সেন বলেন, “আমরা রাজ্য সরকারি সমবায় সংস্থা বেনফেডের কাছে রাইজোবিয়াম কেনার বরাত দিয়েছিলাম। কিন্তু সময়ে পাইনি। তাই বিলি করা যায়নি। যথা শীঘ্র সম্ভব চাষিদের রাইজোবিয়াম দেওয়ার ব্যবস্থা করব।” বেনফেডের ম্যানেজার (ইনপুট) সাদরুল আলম বলেন, “আমাদের কাছে কোনও সামগ্রী সরবরাহের বরাত এলে তা পরে থাকে না। তবে এই বরাত কবে এসেছে তা না দেখে কিছু বলতে পারব না। দফতরে খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে কেন এমন অভিযোগ উঠছে।” মুখ্যমন্ত্রীর প্রধান কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার বলেন, “আমার কাছে এখনও এমন কোনও অভিযোগ আসেনি। কেন এমন হল তা জানতে চাওয়া হবে।”
বর্ধমানে ডালের খেত। —ফাইল চিত্র।
জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা কর্মসূচীর অধীনে পশ্চিমবঙ্গে ১০৮০০ হেক্টর জমিতে উন্নতমানের ডাল শস্য চাষের কর্মসূচী নেওয়া হয়। রাজ্যে প্রায় দু’লক্ষ হেক্টর জমিতে ডাল শস্য চাষ হয়। তার মধ্যে ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে মুসুরি চাষ করা হয়। চলতি বছরে কৃষি দফতর উন্নতমানের মুসুরি চাষে জোর দিয়েছে। আরও ১১ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা স্থির হয়। কৃষি দফতরের আধিকারিকেরা সেই অনুযায়ী কাজ শুরু করেন। বিভিন্ন কৃষি সমবায় সংস্থা থেকে বীজ কেনা হয়।
রাজ্যের মধ্যে ডাল শস্য উৎপাদনে শীর্ষে রয়েছে নদিয়া এবং মুর্শিদাবাদ। এ ছাড়া বীরভূম, মালদহ, পুরুলিয়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায়ও ডাল শস্য চাষ হয়। সে কারণে এই জেলাগুলিতে উৎপাদন বাড়ানোয় জোর দেওয়া হয়। চাষিদের উৎসাহিত করতে বীজ, বীজ শোধনের কীটনাশক এবং বায়ো-ফার্টিলাইজার হিসেবে রাইজোবিয়াম দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
কিন্তু বীজের আনুষঙ্গিক কোনও সরঞ্জামই পৌঁছয়নি চাষিদের কাছে। নদিয়ার ধুবুলিয়ার কৃষক আব্দার শেখ বলেন, ‘‘মাস খানেক আগে মুসুরির বীজ পেয়েছি। কিন্তু রাইজোবিয়াম বা বীজ শোধনকারী ওষুধ পাইনি। অগত্যা মুসুরি বুনে ফেললাম।’’ জেলার উপ কৃষি অধিকর্তা পার্থ প্রামাণিক বলেন, “রাইজোবিয়াম মিশিয়ে বীজ শোধন করলে ফসলে পোকামাকড় বাসা বাঁধতে পারে না। তাই উৎপাদন ভাল হয়। কিন্তু এ বছর জেলার ১৭টি ব্লকের বেশির ভাগে বীজ বিলি হলেও কৃষকদের রাইজোবিয়াম দেওয়া হয়নি।” রাইজোবিয়াম বাজারে পাওয়া যায় না। তাই সরকারের উপরেই নির্ভর করতে হয় চাষিদের।
মুর্শিদাবাদেও ছবিটা এক। কৃষির সহকারী অধিকর্তা জাহিরুদ্দিন শেখ বলেন, “আমাদের প্রয়োজন ১ লক্ষ ৩২ হাজার প্যাকেট রাইজোবিয়াম। কিন্তু জোগান কম। যেমন যেমন আসছে, তেমনই দিচ্ছি চাষিদের।” ডাল বোনার পরে রাইজোবিয়াম মেশালে তাতে কাজ হয় কি? “নেই মামার চাইতে কানা মামা ভাল,” বলেন জাহিরুদ্দিন।
নিয়ম হল, ভাতের ফ্যান বা চিটেগুড়ের মতো কোনও চটচটে পদার্থে রাইজোবিয়ামের গুঁড়ো মিলিয়ে, তা ডালবীজে লাগিয়ে ছায়ায় শুকিয়ে নিতে হবে। সেই মিশ্রণে দিতে হবে বীজশোধক ওষুধও। কিন্তু এ বছর বীজ পেয়েছেন, এমন চাষিদের অর্ধেকেই রাইজোবিয়াম পাননি। মুর্শিদাবাদে তেমন চাষির সংখ্যা কত, তা বলতে চায়নি কৃষি দফতর। তাঁদের বক্তব্য, এখনও পূর্ণ পরিসংখ্যান মেলেনি। তবে তেমন চাষির সংখ্যা খুব কম নয়, তা-ও একান্তে স্বীকার করেছেন তাঁরা।
নদিয়ার কৃষি সহ-অধিকর্তা অরুণাভ হাজরা অবশ্য চাষিদের অবহেলাকেও দায়ী করেন। তিনি বলেন, “অনেক চাষিকে রাইজোবিয়াম দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাঁরা বীজে লাগান না। বিনা পয়সায় পাওয়া জিনিস ফেলে দেন।” কৃষি দফতর থেকে ধুবুলিয়াতে প্রতি সপ্তাহে ৩০ জন চাষির দু’দিনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে, জানান তিনি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.