|
|
|
|
আবাসনে যৌথ উদ্যোগ যাচাইয়ে এ বার উপদেষ্টা
প্রভাত ঘোষ • কলকাতা |
রাজ্যে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরেই একগুচ্ছ অভিযোগ জমা পড়েছিল আবাসন দফতরে। তার কয়েকটি নিয়ে সিআইডি-তদন্ত হচ্ছে। এ বার আর এক ধাপ এগিয়ে নবান্নের সিদ্ধান্ত, বাম আমলে যৌথ আবাসন প্রকল্পের অংশীদার বেসরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে সরকার নতুন চুক্তি করবে কি না, তা খতিয়ে দেখতে উপদেষ্টা নিয়োগ করা হবে।
আবাসন-সূত্রের খবর, এমন সংস্থার সংখ্যা মোটামুটি ১৮। বাম জমানায় তাদের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে চালু হওয়া বিবিধ প্রকল্প ঘিরে বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। তাই এখন স্থির হয়েছে, অর্থ দফতরের ঠিক করে দেওয়া এক জন অফিসারকে উপদেষ্টা (পরিভাষায়, লেনদেন উপদেষ্টা) হিসেবে নিয়োগ করা হবে, যিনি যাচাই করে দেখবেন, সংস্থাগুলোর সঙ্গে নতুন আবাসন প্রকল্প করা হলে রাজ্যের কতটা লাভ হতে পারে। সে সম্পর্কে রিপোর্ট বানিয়ে তিনি দফতরকে পেশ করবেন। “উপদেষ্টার মতামত জানার পরে রাজ্য ঠিক করবে, ওই সব সংস্থার সঙ্গে আর কাজকর্ম চালানো হবে কি না।” জানাচ্ছেন সরকারের এক কর্তা।
বস্তুত বাম আমলের বিভিন্ন যৌথ আবাসন প্রকল্প নিয়ে ক্ষমতায় আসা ইস্তক সরব রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান শাসকেরা। অংশীদার বেসরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে নতুন সরকারের আড়াই বছরে নতুন কোনও আবাসন প্রকল্পও করা হয়নি। উপরন্তু আবাসনের নানা অনিয়ম সম্পর্কে অর্থ দফতরের বিশেষ অডিট দল ইতিমধ্যে তদন্তে নেমেছে।
প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর পুত্র চন্দন বসুর সংস্থা গ্রিনফিল্ড হাউজিং ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে সিআইডি। আরও কয়েকটি সংস্থার হিসেবপত্র সম্পর্কে অর্থ দফতর বেশ কিছু প্রশ্ন তুলে একটা রিপোর্ট তৈরি করেছে, যা এই মুহূর্তে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হেফাজতে।
নবান্নের একাংশের দাবি: আগের আমলে তৈরি নানা যৌথ আবাসন প্রকল্পে নানা অনিয়ম ধরা পড়েছে। সরকারের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ক্রেতাদের হরেক উপায়ে প্রতারিত করেছে। যেমন, কোথাও ফ্ল্যাট হাতে নিয়ে গ্রাহক দেখেছেন, পানীয় জলের ব্যবস্থা হয়নি। কোথাও আবার নিকাশির কাজ অসম্পূর্ণ। বহু জায়গাতেই জরুরি পরিষেবার বন্দোবস্তে খামতি রয়ে গিয়েছে। এমনকী, যৌথ প্রকল্প সংক্রান্ত চুক্তিতে সরকারের ৪৯% মালিকানার কথা বলা থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে সরকার সেই অনুযায়ী লভ্যাংশ পায়নি। অথচ একই প্রকল্পে জড়িত বেসরকারি সংস্থা প্রচুর মুনাফা লুটে চলে গিয়েছে বলে অভিযোগ।
সরকারি-সূত্রের দাবি: এ সবের পরিপ্রেক্ষিতেই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে নতুন করে যৌথ আবাসন প্রকল্প নির্মাণ বন্ধ রাখা হয়েছে। অর্থ-অডিটের পাশাপাশি শুরু হয়েছে সিআইডি-তদন্ত। শেষমেশ উপদেষ্টা নিয়োগের সিদ্ধান্ত। এ প্রসঙ্গে বাম জমানার কর্তারা কী বলেন?
প্রাক্তন আবাসনমন্ত্রী গৌতম দেব পাল্টা বর্তমান সরকারের দিকে আঙুল তুলেছেন। তাঁর মন্তব্য, “গত আড়াই বছর ধরে কোনও যৌথ সংস্থাকে ওরা (রাজ্যের নতুন সরকার) কাজ করতে দেয়নি। এমনকী, সংস্থারা নিজেদের টাকায় যে জমি কিনেছে, সেখানেও প্রকল্প করতে দেয়নি। ফলে নিম্ন ও মধ্য আয়ের লোকজনের বাড়িঘর তৈরি হচ্ছে না। এর জবাব ওদেরই দিতে হবে।” বেসরকারি অংশীদারদের কী প্রতিক্রিয়া?
উ পদেষ্টা নিয়োগের সরকারি সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন যৌথ প্রকল্পের অন্যতম অংশীদার সংস্থা ‘বেঙ্গল অম্বুজা হাউজিং ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড’-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর হর্ষবর্ধন নেওটিয়া। তিনি বলেন, “সরকার যদি নতুন করে যৌথ উদ্যোগের সম্ভাবনা পর্যালোচনা করে দেখতে চায়, সেটা ভালই। এতে যৌথ প্রকল্পের সম্ভাবনা আরও বাড়বে।” যদিও অন্যান্য সংস্থার কর্তাদের একাংশ এতে সমস্যার আঁচ পাচ্ছেন। “গত আড়াই বছর রাজ্য সরকার আবাসনে যৌথ প্রকল্প করেনি। এখন উপদেষ্টা বসিয়ে পর্যালোচনা শুরু হলে আরও অনেকটা সময় চলে যাবে। আখেরে ব্যবসাই মার খাবে।” আক্ষেপ ওঁদের। |
|
|
|
|
|