রঘুনাথপুরের ডিভিসি-র তাপবিদ্যুত্ প্রকল্পের জমি-জট কাটানোর লক্ষ্যে অনিচ্ছুক জমি-মালিকদের বোঝাতে আসরে নেমেছেন পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। সেই লক্ষ্যে যে তাঁরা আংশিক সফল, তা শুক্রবার পুরুলিয়া সদরে বিশেষ চেক বিলি শিবিরে উপস্থিত অনিচ্ছুক জমি-মালিকদের সংখ্যাই বুঝিয়ে দিল।
এ দিন জেলাশাসকের অফিসে জমিহারাদের জন্য ক্ষতিপূরণের চেক ও নগদ টাকা বিলির ব্যবস্থা করেছিল জেলা প্রশাসন। প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, সন্ধ্যা অবধি চেক নিয়েছেন ছ’জন। নগদে ক্ষতিপূরণ নিয়েছেন ৩২ জন। ডিভিসি-র প্রকল্পের ওয়াটার করিডর তৈরিতে যে-সব অনিচ্ছুক জমি-মালিক এত দিন বাধা দিয়ে এসেছেন, মূলত তাঁরাই এ দিন ক্ষতিপূরণের চেক ও টাকা নিয়েছেন। ফলে, ওয়াটার করিডরের জট কাটার ব্যাপারে আশাবাদী জেলা তৃণমূলের নেতারা। ঘটনা হল, এ যাবত প্রকল্প এলাকায় চার-চারটি শিবির করে অনিচ্ছুক জমি-মালিকদের চেক বিলির বন্দোবস্ত করেছে প্রশাসন। ওই চারটি শিবির মিলিয়ে ক্ষতিপূরণের চেক ও অর্থ নিয়েছেন ৫৩ জন। সেখানে শুধু শুক্রবারের শিবিরেই ৩৮ জন টাকা ও চেক নিয়েছেন।
আগের শিবিরগুলিতে তেমন সাড়া না মিললেও এক সপ্তাহ আগে প্রকল্প এলাকায় যে তিন দিনের শিবির করা হয়, তাতে আগের তুলনায় কিছুটা সাড়া মিলেছিল। এ দিন চার-পাঁচটি গাড়িতে করে নিতুড়িয়া ব্লকের গুনিয়াড়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা থেকে জেলাশাসকের কার্যালয়ে আসেন অনিচ্ছুক জমি-মালিকদের একাংশ। তাঁরা সংখ্যায় ছিলেন পঞ্চাশের বেশি। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন তৃণমূলের জেলা কাযর্করী সভাপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় ও নিতুড়িয়া পঞ্চায়েত সমিতির দলীয় সভাপতি শান্তিভূষণ প্রসাদ যাদব। অনিচ্ছুক জমি-মালিকদের তৃণমূল নেতৃত্বই সংগঠিত করে নিয়ে এসেছিলেন। সুজয়বাবু বলেন, “মানুষকে বোঝানোয় কিছুটা ঘাটতি ছিল। এখন আমরা মানুষকে ডিভিসি প্রকল্পের গুরুত্ব বোঝাতে সমর্থ হয়েছি। তাঁরা বুঝেছেন, এই প্রকল্প এলাকা থেকে সরে গেলে কতটা ক্ষতি হবে।” গত ৭ নভেম্বর শিল্পমন্ত্রী ও ডিভিসি-র তত্কালীন চেয়ারম্যানের বৈঠকে অনিচ্ছুক জমি-মালিকদের স্বার্থে কী কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা-ও তাঁরা প্রচারপত্রের মাধ্যমে জমিহারাদের জানিয়েছেন বলে সুজয়বাবুর দাবি।
এ দিন শালচূড়া গ্রাম থেকে ক্ষতিপূরণ নিতে আসা দেবীলাল টুডু, সুদর্শন হাঁসদা, লক্ষ্মী মান্ডি, দর্শনী হাঁসদা বা বীরবলডি গ্রামের ফটিক মাঝি, সোম মাঝিরা বলেন, “আমরা বুঝেছি, থেকে এতবড় একটা প্রকল্প সরে গেলে তা এলাকার অর্থনীতির পক্ষে বড় ক্ষতি। তাই আমরা ক্ষতিপূরণের অর্থ নিতে রাজি হয়েছি। তবে, বিনিময়ে আমরা আমাদের দাবি জানিয়েছি। সেটা করতে হবে।” এতদিন তাঁরা যে ওয়াটার করিডর নিয়ে আন্দোলনতারী জমিরক্ষা সংগ্রাম কমিটির পাশে ছিলেন, তা মেনে নিয়ে ওই জমিদাতারা বলেন, “এ বার আমরা চাই এলাকায় ডিভিসি-র এই প্রকল্প গড়ে উঠুক।” এ দিন অনিচ্ছুক জমি-মালিকদের সঙ্গে তৃণমূল নেতৃত্ব থাকলেও রঘুনাথপুরের বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরিকে দেখা যায়নি। সুজয়বাবু বলেন, “এ দিন বিধানসভায় রাষ্ট্রপতির আসার কথা থাকায় তিনি বিধানসভায় ছিলেন। কাগজপত্রের গোলমালের কারণে এ দিন একাধিক অনিচ্ছুক জমি-মালিক ক্ষতিপূরণের চেক বা নগদ অর্থ নিতে পারেননি। আগামী শুক্রবার রঘুনাথপুরে শিবির হবে। সেই শিবিরে বিধায়ক থাকবেন। আর কাগজপত্রের বিষয়টি নিয়ে আমরা সতর্ক থাকব।” |