জট কাটাতে জমিহারাদের কিছু দাবি মানছে ডিভিসি
ঙ্কট কাটিয়ে কিছুটা আশার আলো দেখলো ডিভিসি-র বিদ্যুৎ প্রকল্প। প্রকল্পকে ঘিরে তৈরি হওয়া জট ছাড়াতে জমিহারাদের কয়েকটি দাবি মেনে নেওয়ার কথা জানিয়ে দিলেন সংস্থা কর্তৃপক্ষ।
পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে বিদ্যুৎ প্রকল্পের জমি-জট কাটাতে বৃহস্পতিবার রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে বসেন ডিভিসি-র চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ সেন। বৈঠক শেষে দু’পক্ষই জানান, আলোচনা ভাল হয়েছে। দু’এক দিনের মধ্যেই সমস্যা মিটে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তাঁরা। পরে রাতে শিল্পমন্ত্রীর কাছে বার্তা পাঠিয়ে জমিহারাদের কয়েকটি দাবি মেনে নেওয়ার কথা জানিয়ে দেন ডিভিসি কর্তারা। প্রশাসন সূত্রে খবর, ডিভিসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, জমিহারারা সমবায় তৈরি করলে তাঁদের প্রকল্প নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত ছোটখাটো কাজের বরাত দেওয়া হবে। পাশাপাশি, ঠিকাদারদের অধীনেও জমিহারারা যাতে কাজ পান, সে ব্যাপারটিও কর্তৃপক্ষ দেখবেন
বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। জোর দেওয়া হবে সামাজিক সুরক্ষা উন্নয়ন প্রকল্পেও। তবে জমি মালিকদের স্থায়ী চাকরি ও বিনামূল্যে বিদ্যুৎ দেওয়ার দাবি মানা যাবে না বলে এ দিন বৈঠকে জানান ডিভিসি কর্তৃপক্ষ। প্রশাসন সূত্রে খবর, ডিভিসি-র এই বক্তব্য জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে জমিহারাদের জানানো হবে।
রঘুনাথপুরে ৮,৮১২ কোটি টাকা বিনিয়োগে মোট চারটি তাপবিদ্যুৎ ইউনিট গড়ার পরিকল্পনা নিয়েছে ডিভিসি। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ের ৬০০ মেগাওয়াটের দু’টি ইউনিট তৈরির কাজ প্রায় শেষ। কিন্তু দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্মাণ কাজের বরাত দিয়েও হাত গুটিয়ে বসে রয়েছেন ডিভিসি কর্তৃপক্ষ। কারণ, মূল প্রকল্পের জন্য ১০০০ একর জমি পেলেও রেল করিডর ও ওয়াটার করিডরের জন্য প্রয়োজনীয় ৩৭৫ একর জমির মধ্যে ডিভিসি-র হাতে এসেছে মাত্র ১৩০ একর। ডিভিসি-র অভিযোগ, জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া অনেক ধীর গতিতে চলছে। তা ছাড়াও অনেক জমিদাতা এখনও চেক নেননি।
প্রকল্পের জন্য জমি পেতে অসুবিধা হচ্ছে বলে গত সোমবার সংস্থার ডিরেক্টর অব প্রোজেক্টসকে চিঠি লিখে জানান ডিভিসি-র রঘুনাথপুর প্রকল্পের মুখ্য বাস্তুকার দেবাশিস মিত্র। তাঁর বক্তব্য ছিল, প্রকল্প নির্মাণের কাজে নানা সমস্যা হলেও স্থানীয় প্রশাসনের সক্রিয় সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না। এই অবস্থায় প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের রূপায়ণ সম্ভব নয়।
এই প্রসঙ্গে ডিভিসি কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা, ওয়াটার করিডর তৈরি না হলে প্রথম পর্যায়ে যে দু’টি ইউনিটের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে, সেগুলোও চালানো যাবে না। কারণ এগুলিতে ১০০ শতাংশ ক্ষমতায় বিদ্যৎ উৎপাদন করতে গেলে ঘণ্টায় ৬০ হাজার কিউবিক মিটার জল লাগবে। আর সেই জল ওয়াটার করিডর তৈরি না করলে কোনও মতেই পাওয়া সম্ভব নয়। জেলা প্রশাসনকেও সমস্যাগুলি বিশদে ব্যাখ্যা করে দেবাশিসবাবু জানিয়ে দেন, প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। জমি নিয়ে সমস্যার
কথা জানানো হয় কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রকের সচিব প্রদীপকুমার সিন্হাকেও। গত মঙ্গলবার বিদ্যুৎসচিব জানিয়েও দেন, “ডিভিসি চাইলে প্রকল্প অন্য কোথাও সরিয়ে নিয়ে যেতে পারে। তাতে বিদ্যুৎ মন্ত্রকের কোনও আপত্তি নেই।”
এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই আসরে নামে রাজ্য। ডিভিসি-র কর্তাকে বৈঠকে ডাকেন শিল্পমন্ত্রী। সেই মতো এ দিনের বৈঠকে শিল্পমন্ত্রী ও ডিভিসি-র চেয়ারম্যান ছাড়াও ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো, রঘুনাথপুরের বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউড়ি এবং জমিহারাদের কয়েক জন প্রতিনিধি। বৈঠক শেষে শিল্পমন্ত্রী বলেন, “আন্দোলনকারীদের যে সাত-আট দফা দাবি রয়েছে, তার মধ্যে তিন-চারটি ন্যায়সঙ্গত। ডিভিসি কর্তৃপক্ষ সেগুলি মেনে নেবেন বলে জানান। তাই সমাধানসূত্র বেরোবেই।” তিনি বলেন, “ডিভিসি-কে বলেছি ২০০৭ সালের চুক্তি অনুযায়ী প্রকল্পের অঙ্গ হিসাবে যে সব সামাজিক কাজকর্ম করার কথা, তা করতে হবে।” প্রকল্পের জলের লাইন বসানো নিয়ে তৈরি সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনে ‘অন্য পথ’ তৈরির কথা ডিভিসি-কে ভাবতে বলেছেন শিল্পমন্ত্রী।
চেয়ারম্যান বলেন, “রঘুনাথপুর থেকে প্রকল্প সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ এ রাজ্যে করতে চাই। প্রকল্পের কাজে যে দু’একজন বাধা দিচ্ছেন, তাঁরা এসইউসিআই-এর সমর্থক। জমিহারাদের কেউ নন। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব এবং সরকার আমাদের পাশেই রয়েছেন।”
রঘুনাথপুরে বিদ্যুৎ প্রকল্পের দাবি জানিয়ে শনিবার সেখানে সভা করবে সিপিএমের যুব সংগঠন। সেই সভায় থাকার কথা প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেন এবং সাংসদ বাসুদেব আচারিয়ার। এ দিন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র অভিযোগ করেন, “মুখ্যমন্ত্রী যেখানে হাত দেন, সেখানেই সমস্যা। রঘুনাথপুরে নিজের দলের লোকেদের সামলাতে না পেরে এখন জেলাশাসককে দায়িত্ব দিয়েছেন।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.