|
|
|
|
|
|
|
মুখোমুখি... |
|
স্বপ্ন দেখি, মায়ের বিয়ে হচ্ছে |
দুই সখী? না, অল্টার-ইগো? না কি,
পেশাদার পরিচালক ও তাঁর অভিনেত্রী?
মা শতরূপা সান্যাল ও মেয়ে
ঋতাভরী চক্রবর্তী-র সেলুলয়েড-অভিযানের
আগে দু’জনকে পাকড়াও করলেন ঋজু বসু |
পত্রিকা : সাত বছর বাদে ফের ছবি করতে এসে মেয়েকেই নিতে হল! কোনও নামী নায়িকাকে দিয়ে চরিত্রটা করালে ভাল হত না...
শতরূপা: প্রথমেই পরিষ্কার করে বলা যাক্, যে ছবিটা রিলিজ করছে, ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন কলকাতা-র চরিত্রটার জন্য কিন্তু পলিন (ঋতাভরী)-কে আমি নই, প্রোডিউসারই চেয়েছিল। ওগো বধূ সুন্দরী সিরিয়ালের ললিতা হওয়ার পর থেকেই ও নজর কাড়ছে। তবে পলিন বা ওর আড়াই বছরের বড় দিদি তিতিন (চিত্রাঙ্গদা)-কে ভেবে আমারও কিছু প্ল্যান আছে বইকী! এটাই আগে ঘটল।
ঋতাভরী: একটা কথা বলি। আমার খুব প্রিয় ছবি, অপর্ণা সেনের মিস্টার অ্যান্ড মিসেস আয়ার! আই ফেল্ট কঙ্কনা লুক্ড পারফেক্ট দেয়ার। দেখুন, মা আর মেয়ে যতটা ভাল ভাবে দু’জনকে চেনে, তাতে মা ডিরেক্টর হলে মেয়ের সেরাটা কিন্তু বেরিয়ে আসবেই...
পত্রিকা: তা বলে সেটে ঘাড়ের কাছে সারা ক্ষণ মা-গিরি! এটা কতটা পোষায়?
ঋতাভরী: মা ও দেবজিৎ ঘোষের ডিরেকশনে আর একটা ছবি ‘তবুও বসন্ত’ (এখনও রিলিজ করেনি।)-র শ্যুটের কথা বলি। আমার ও রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটা ইন্টিমেট দৃশ্য। কিসিং সিন, অলমোস্ট ইনিশিয়েশন অব আ লাভ মেকিং সিন! মা কী করল জানেন! আমাদের সিচুয়েশনটা, চরিত্রগুলোর ইমোশন সব বোঝাল। তার পর আমায় বলল, পলিন বাকিটা কী করতে হবে, তুই জানিস... আমার এক মুহূর্ত আনকমফর্টেবল লাগেনি।
পত্রিকা: হুঁ, এটাই তো পেশাদারিত্ব...
শতরূপা: তার সঙ্গে আর একটা ব্যাপার আছে। ও তো আমার আত্মজা, শরীরের অংশ, অল্টার-ইগো। অনেকেই বলে, আমরা দু’জন ভীষণ এক ধরনের। কিন্তু ও তো একটা স্বতন্ত্র মানুষ। মেয়েকে ভালবাসি, আবার আলাদা মানুষটাকে সম্মান করি। এ ভাবে ভাবলে ইনহিবিশনগুলো মুছে যায়।
ঋতাভরী: তা বলে মা কিন্তু আমায় এখনও সেই ছোট্ট পলিনই ভাবে। ‘ন হন্যতে’ নিয়ে আমার একটা লেখা, মা হঠাৎ বলে উঠল, বুড়ি তুই এত বুঝিস! এত পাকা পাকা কথা লিখলি...।
পত্রিকা (ঋতাভরীকে): আচ্ছা, তোমার মা তো তোমাদের ছোটবেলা থেকেই একজন সিঙ্গল মাদার...একা মায়েরা তাঁদের কনসার্ন, ভালবাসা থেকেই একটু বেশি চাপ সৃষ্টি করে ফেলেন, বেশি-বেশি আঁকড়ে ধরেন। তোমাদের ক্ষেত্রে এটা হয়নি?
ঋতাভরী: মা পাশে থেকেছে। কিন্তু বুঝিয়েছে, যা শেখার হাত পুড়িয়ে শিখতে হবে। তবে নিজের জার্নিটা নিজেরই।
পত্রিকা: কী শতরূপাদি, এতটা ছেড়ে দেন! মেয়েরা কার সঙ্গে প্রেম করছে, কী হবে, এই নিয়ে টেনশন হয় না?
শতরূপা: আমি ঠিক ও ভাবে ভাবি না। সম্পর্ক লং রানে যাবে কি না, তা তো পরীক্ষাসাপেক্ষ।
ঋতাভরী: মা হয়তো বুঝল, আমি কষ্ট পাচ্ছি। দোষটা আমার নয়, তারও নয়। সম্পর্কটা জাস্ট হচ্ছে না! মা বোঝাল, বেরিয়ে আয়, তোর ভাল হবে! কিন্তু ছেলেটাকেও হয়তো মা খুব ভালবাসে। ওর সঙ্গেও মায়ের যোগাযোগ থেকে গিয়েছে। (সুর করে) আ-হা, ও-ও তো আমার ছেলেরই মতো (দু’জনের হাসি)...
|
|
ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল। |
পত্রিকা: আর মায়ের যদি কোনও সম্পর্ক হয়...
শতরূপা: পলিন একবার যা স্বপ্ন দেখেছিল না...
ঋতাভরী: আমি দেখি, মায়ের বিয়ে হচ্ছে। মা তো সেজে বসে আছে। হঠাৎ এক ফোটোগ্রাফার এসে বাওয়াল দিচ্ছে, ৩০০ টাকা না-দিলে ছবি হবে না। আর মা বলছে, তা-ই তো টাকা তো নেই...(হাসি)
পত্রিকা: ঘুম ভেঙে কি মন খারাপ হয়ে গেল, বিয়েটা হল না বলে...
ঋতাভরী (হাসতে হাসতে): ওয়েল আমার মা যেমন রোম্যান্টিক মানুষ, মা যদি এটা বলেও মায়ের এত বছরেও কোনও প্রেমিক ছিল না, বা পাশের মানুষ ছিল না, আমি তো সেটা বিশ্বাস করব না। নিশ্চয়ই ছিল। কিন্তু মায়ের ভাল থাকার জন্য আমি চাইব, মা যে ধরনের ছবিতে বিশ্বাস করে, তেমন ছবি করতে পারুক। কাজের মানুষ তো কাজেই ভাল থাকে! ওয়েন শি ডাজ দ্যাট, তাতে চোখে-মুখে যে কনফিডেন্সটা আসে আর কিছুতে আসে না! কোনও পুরুষমানুষ পাশে থাকল, বাড় খাওয়াল, আহা তুমি কী স্ট্রং, তাতেও হয় না...
পত্রিকা (শতরূপাকে): চিত্র পরিচালক উৎপলেন্দু চক্রবর্তীর সঙ্গে বিয়েটা থেকে যখন বেরিয়ে এসেছিলেন, তখন তো আপনারও কম বয়স, কখনও মনে হয় না, কাউকে দরকার?
শতরূপা: দেখুন, বন্ধু তো অনেকে থাকেই, কিন্তু পুরোপুরি নির্ভর করতে পারাটা, সে তো কল্পনার মানুষ...
পত্রিকা: এটা তো আপনি আইডিয়ালের কথা বলছেন, কিছু বাঙালি মেয়ে যেমন সারা জীবন রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে প্রেম করে গেল (ঋতাভরী বলে ওঠে, ঠিক, ঠিক)...কিন্তু রক্তমাংসের কেউ তো থাকবে...
শতরূপা: ঘরসংসার, দায়িত্ব, কতর্ব্য তো থাকেই! কিন্তু প্রেম হওয়া, ইমোশনালি জড়িয়ে পড়াটাও জীবনের একটা দিক...
ঋতাভরী: মা তার নিজের কাজ, দায়িত্ব, কনফিডেন্সের যদি ক্ষতি না-করে, তবে ইভেন ইফ শি হ্যাজ আ লাভার অর বয়ফ্রেন্ড...হার লাইফ... আমার কী সমস্যা!
পত্রিকা (ঋতাভরীকে): বাবার (উৎপলেন্দু) সঙ্গে যোগাযোগ নেই...
ঋতাভরী: সেই কেজিতে পড়ার সময় থেকেই ওঁকে দেখিনি, কিন্তু আমি সিরিয়ালে কাজ করার সময়ে লোকে এত ওঁর কথা বলত...এত কৌতূহল হত, ভাবলাম যা-ই দেখা করে আসি...উনি ফোন ব্যবহার করতেন না, তা আমি বাড়ি খুঁজে বেল বাজিয়েছি, পিসি দরজা খুলেছেন। তুমি কে? আমি বলি, পলিন! এক সময়ে ছোট ছিলাম।
শতরূপা: পুরো সিনেমার দৃশ্য!
ঋতাভরী: বাবা এসে বললেন, চল গল্প করি। আমি কী করব বুঝতে পারছিলাম না। তার পরে বাবা যেই বললেন, চল তোকে বিষ খাওয়াব, আমি কনফিডেন্স পেলাম। বাবা অ্যাক্টিং নিয়ে টিপ্স দিলেন। পরে স্টুডিয়োয় গিয়েও দেখা করেছেন।
পত্রিকা: ওয়ান্স আপন আ টাইমে ঋতাভরীর যে রোলটা, শ্রীলেখা সেও তো কোন্ বখাটে ছেলের প্রেমে পড়বে! মেয়েদের এ রকম একটা টেন্ডেন্সি থাকেই, তোমার (ঋতাভরীকে) এমন হয়েছে না কি?
শতরূপা ( মেয়ের দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে): হয়েছে, হয়েছে...
ঋতাভরী (হাসতে হাসতে): বখাটে, নেশাখোর ছেলে কিন্তু কী ট্যালেন্টেড! তবে শ্রীলেখা খুব ইন্টারেস্টিং চরিত্র। টিপিক্যাল নায়িকা নয়। গল্পটা একটা মেয়ের চয়েস...প্রেম নিয়ে, জীবন নিয়ে! উফ, জীবনে যা সব ধাক্কা খেয়েছি... তাই তো চরিত্রটাকে বুঝতে সুবিধে হয়েছে।
পত্রিকা: এখনও সব ক্রাইসিসে মায়ের কাছে যাও?
ঋতাভরী: মা তো দাঁড়িয়ে আছেই—স্পাইনাল কর্ড! বাট ব্রেন অ্যান্ড হার্ট হ্যাজ টু চুজ ইট্স ওন ওয়ে। অনেক ঘটনা মা জানেও না। অন্য শহরে শ্যুটিংয়ে গেছি। এমন ঘটনা ঘটতে ঘটতে আমি বেঁচে ফিরেছি, অন্য অনেক মেয়ে হলে এই ইন্ডাস্ট্রির দিকে ফিরেও তাকাত না।
পত্রিকা: কোনও ইনডিসেন্ট প্রোপোজাল?
ঋতাভরী: একাধিক, একাধিক! তারা হয়তো জানে আমার মা কে, বাবা কে, সব প্রতিষ্ঠিত লোকজন...তাতে কিছু আটকায় না! (পাশ থেকে শতরূপা বলেন, নাম শুনলে পড়ে যাবেন!)
পত্রিকা: (শতরূপাকে) ওদের ছোটবেলাটা নিয়ে কোনও অভাববোধ আছে?
শতরূপা: অনেক কিছুই পারিনি। কিন্তু চেয়েছিলাম, কারও সাহায্য ছাড়াই ওদের ঠিকঠাক এডুকেশন যেন দিতে পারি। তিতিন (বড় মেয়ে) সেন্ট জেভিয়ার্সে মাসকম পড়েছে, এখন বম্বেয় থেকে থিয়েটার করছে। পলিনের রেজাল্ট বরাবরই ভাল, যাদবপুরে হিস্ট্রি অনার্স পড়ছে।
ঋতাভরী: মায়ের কাছ থেকে একটা শিরদাঁড়া পেয়েছি, আমারটা আমাকেই করতে হবে। হায় রে কী দুঃখ বলে, শুয়ে থাকার লাক্সারিটা মায়ের মধ্যে দেখিনি।
পত্রিকা: তা বলে কি স্ট্রেস থাকে না জীবনে?
শতরূপা: কার থাকে না? কিন্তু জীবনের ঘাত-প্রতিঘাতই আমায় শিখিয়েছে মাথা ঠান্ডা রাখতে। মেয়েদের শান্ত রাখতে।
ঋতাভরী: মা, তিতিন, আমি—তিন বন্ধুর মতো! যা-ই ঘটুক, একসঙ্গে খেলতে খেলতে, হাসতে হাসতেই এতটা সময় পেরিয়ে গেল। শ্যুটিংটাও তো একটা খেলা, যেটা মন থেকে খেলতে ভালবাসি, খুব ভালবাসি আমরা দু’জনেই। |
|
|
|
|
|