|
আপনার সাহায্যে ১... |
|
তিন বার মিসক্যারেজের পরেও মা
হতেই পারেন। ভরসা দিচ্ছেন
ডা. গৌতম খাস্তগীর। কথা বললেন রুমি গঙ্গোপাধ্যায় |
|
|
কর্পোরেট দুনিয়ায় টিঁকে থাকার প্রতিযোগিতা, নিত্যনতুন টেনশন আর পরিশ্রম। তবুও তো সংসারের কথা ভাবতে হয়। নতুন অতিথিকে কে না চায়? ঘটনা হল, প্রেগন্যান্সি আসছে, কিন্তু তা ধরে রাখা যাচ্ছে না। এমনটা আজকাল আকছাড় ঘটছে।
কয়েক দিন আগে মিসক্যারেজের সমস্যা নিয়েই বাঁকুড়ার এক চিকিৎসক দম্পতি এসেছিলেন কলকাতার এক সুপ্রজনন বিশেষজ্ঞের কাছে। বছর তিরিশের মেয়েটি কাজ করতেন এক হাসপাতালে। বেশির ভাগ সময় তাঁর ডিউটি পড়ত রাতে, আইসিইউতে। সঙ্গে চলত পোস্ট গ্র্যাজুয়েশনের জন্য প্রস্তুতির পড়াশুনো। রাত জাগা, কাজ আর পড়ার চাপ এই তিনের ত্র্যহস্পর্শে প্রেগন্যান্সি এলেও মহিলার বার বার মিসক্যারেজ হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু শেষমেশ কী হল?
কোনও ট্রিটমেন্ট না করে তাঁকে রাতের ডিউটি ছাড়তে পরামর্শ দেওয়া হল। বলা হল, মা হওয়ার আগে অবধি পড়াশুনোও মুলতুবি রাখতে। তাতেই সুফল মিলল।
শুধু শরীর বা চেহারায় নয়, স্ট্রেস অজান্তেই থাবা বসাচ্ছে প্রেগন্যান্সিতেও। এমনই বলছেন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ গৌতম খাস্তগীর। “মিসক্যারেজ হলে মনের ওপর বিরাট চাপ পড়ে। পরবর্তী প্রেগন্যান্সির আগে সেই চাপ না কাটালে মিসক্যারেজের সমূহ সম্ভাবনা। সব সময় আতঙ্ক, আবার বুঝি মিসক্যারেজ হল। সেই স্ট্রেসই ডেকে আনে রেকারেন্ট মিসক্যারেজ।” |
স্ট্রেসের কারসাজি |
কর্পোরেটের কাজের চাপ হোক বা বাড়ির কোনও অঘটন, যে কোনও স্ট্রেসই শরীরে স্টেরয়েডের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের। স্টেরয়েডের প্রভাবেই কমে যায় শুক্রাণু বা ডিম্বাণুর গুণমান। তৈরি হয় ত্রুটিযুক্ত ভ্রূণ। জরায়ু এ ধরনের ভ্রূণকে বাতিল করে দেয়। তার থেকেই মিসক্যারেজ। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি কিন্তু মন্দের ভাল। নইলে বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম হত। তাই বলে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকলেও চলবে না। দুই বার মিসক্যারেজ হলে তিন বারের বার যাতে একই ঘটনা না ঘটে তার চেষ্টা করতে হবে।
তবে সব ক্ষেত্রে যে স্ট্রেস-ই মিসক্যারেজ ঘটাচ্ছে, এমন নয়। “জরায়ুর গঠনগত ত্রুটি থাকলেও এমনটা হতে পারে। কারও কারও জরায়ুর মুখ ঢিলে হয়ে যায়। সংক্রমণ বা হরমোনের মাত্রার তারতম্যও মিসক্যারেজের কারণ হতে পারে।” |
অঙ্ক বলে অন্য কথা |
এত সব ঘটনা মিসক্যারেজের পেছনে থাকলেও অঙ্কের হিসেবে তা খুব কমই দেখা যায়। প্রথম বার মিসক্যারেজ হয়েছে এমন একশো জনের মধ্যে মোটে পাঁচ জনের এই সব শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। বাকিদের কারণ স্ট্রেস-ই। বিশেষজ্ঞদের মতে, “এক বার মিসক্যারেজ হলে আমরা আশ্বাস দিই, যে চিন্তা নেই। কোনও টেস্ট করারও দরকার নেই। সন্তান চাইলে স্ট্রেসকে দূরে রাখুন।” |
কী করবেন |
প্রেগন্যান্সি ধরে রাখার অন্যতম শর্ত “লাভিং অ্যান্ড কেয়ারিং”। সুস্থ জীবনযাপন, প্রাণায়াম প্রেগন্যান্সি টিকিয়ে রাখতে খুব দরকার। এগুলি স্ট্রেস কমায়। কোনও ভাবেই যেন টেনশন, কর্পোরেট জীবন আপনার এই অতি গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলির ওপর প্রভাব ফেলতে না পারে। টেনশনকে দূরে রাখলে অন্তত ৭৫% ক্ষেত্রে চিকিৎসা ছাড়াই সুস্থ সন্তানের জন্ম দেওয়া যায়। ডা. খাস্তগীরের দাবি, চিকিৎসা কাজ করবে মাত্র ১৫-২৫% ক্ষেত্রে। বাকিদের স্ট্রেস কমালেই ফল মিলবে।”
স্ট্রেস কত দূর প্রভাব ফেলতে পারে তা বলতে গিয়ে এক অদ্ভুত গল্প শোনালেন ডা খাস্তগীর। সাত বার মিসক্যারেজের পর এক মহিলা প্রেগন্যান্সির আশা ছেড়ে দিয়ে একটি বাচ্চা দত্তক নেন। তার পরই সেই মহিলার ছেলে হয়। এ রকম উদাহরণ অজস্র। আসলে বার বার মিসক্যারেজ অনেকের কাছেই প্রবল চাপ তৈরি করে। দত্তক নিলে, চাপটা চলে যায়। তখন আর হারানোর কিছু নেই। তার পর প্রেগন্যান্সি এলে তাঁদের অনেকেই অনায়াসে মা হতে পারেন। |
পাল্টান কিছু অভ্যাস |
অজান্তেই কিছু কিছু অভ্যাস প্রেগন্যান্সিকে প্রভাবিত করে। বিশেষ করে পুরুষদের। যেমন অনেক ক্ষণ ল্যাপটপ কোলে রেখে কাজ করলে, চাপা অন্তর্বাস পরলে বা একটানা মোটবাইক চালালে শুক্রাণু নষ্ট হয়ে যায়। ধূমপান বা রকমারি নেশার ওষুধও শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর গুণমান নষ্ট করে দেয়। ফলাফল মিসক্যারেজ!
অতিরিক্ত বিশ্রামও ক্ষতি করে
এক বার মিসক্যারেজ হলে অনেকেই পরের প্রেগন্যান্সিতে সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকেন। এটা কিন্তু উল্টে ক্ষতি করে বলে অভিমত ডা খাস্তগীরের। বিছানাতেই খাওয়াদাওয়া এমনকী বেডপ্যান ব্যবহার করলে সংক্রমণের সম্ভাবনা বাড়ে। তা ছাড়া শুয়ে থাকলে পায়ে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে, ব্লাড সুগারের মাত্রা বেড়ে যায়। সারা দিন বিশ্রাম করলে রাতে ঘুমও আসে না। স্বাভাবিক জীবন থেকে সরে যাওয়ায় উল্টে স্ট্রেস বেড়ে যায়। |
শেষ কথা |
মিসক্যারেজের কারণ খুঁজতে গিয়ে বেশ কিছু টেস্ট করতে হতে পারে। যা ব্যয়বহুল। সব থেকে বড় কথা, অনেক সময় টেস্ট-এ কিছু পাওয়াই যায় না। তাই দু’বার মিসক্যারেজ হলেও টেস্ট না করে বরং লাইফস্টাইল পরিবর্তন করতে পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তার পরেও যদি এমন হতে থাকে তখন টেস্টের কথা ভাবতে হবে। আর সমস্যা যদি কিছু থেকেও থাকে, চিকিৎসা করলে তা-ও অনায়াসে মিটিয়ে ফেলা যায়।
|
সতর্ক থাকব কী করে |
• মিসক্যারেজ হলে পরের তিন মাসের মধ্যে প্রেগন্যান্সি নয়।
• দ্বিতীয় বার প্রেগন্যান্সি এলে প্রথমেই ডাক্তারের কাছে যান।
• টেস্ট না করেও ধরে নেওয়া হয় কিছু সমস্যা থাকতে পারে। সেগুলির জন্য আগে থেকেই ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
• অতিরিক্ত বিশ্রামের প্রয়োজন নেই। স্বাভাবিক জীবনযাপন করুন।
• প্রেগন্যান্সির প্রথম তিন মাস সহবাস করবেন না।
• কোনও রকম স্পটিং দেখলে বা অস্বস্তি লাগলে ডাক্তারের কাছে যাবেন।
• ধূমপান করবেন না।
• সুষম আহার খাবেন। হাল্কা এক্সারসাইজ ও প্রাণায়াম জরুরি। |
|
যোগাযোগ: ৯৮৩০৬৬৬৬০৬ |
|