|
|
|
|
|
নজরে লোকসভা, পুরভোটের
পরও কৌশলী প্রচার
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
|
পুরভোটের পাট চুকেছে। সেই চাপানউতোরও দাঁড়ি। অথচ, প্রচার গাড়ি ঘুরছে পাড়ায় পাড়ায়! প্রার্থী পৌঁছচ্ছেন দুয়ারে!
এখনও মেদিনীপুরে চোখে পড়ছে এমন দৃশ্যই। জনসংযোগকে পাখির চোখ করে শাসক-বিরোধী দু’পক্ষই এক পঙক্তিতে। সকলেই নিজের মতো করে সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করছেন। মানুষের কাছে পৌঁছচ্ছেন। কিন্তু, কেন? প্রার্থীদের বক্তব্য, রাজনৈতিক লড়াইয়ে হার-জিত থাকে। কিন্তু, ভোটই তো শেষ নয়! সারা বছর মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা উচিত। তবেই না রাজনৈতিক লড়াইয়ের সময় মানুষ পাশে থাকবেন! তবে, রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা অন্য। ওই মহল মনে করছে, শিয়রে যেহেতু লোকসভার ভোট কড়া নাড়ছে, তাই জনসংযোগে একটু বেশিই তৎপর পুরভোটের প্রার্থীরা। ঠিক কী ভাবে জনসংযোগ চলছে? মেদিনীপুরের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে দলের প্রার্থী হয়েছিলেন সিপিএমের শহর জোনাল কমিটির সম্পাদক কীর্তি দে বক্সী। জোনাল সম্পাদক আগেও এই এলাকা থেকে জিতেছেন। তবে, পুরভোটে তিনি তৃণমূল প্রার্থী জিতেন্দ্রনাথ দাসের কাছে ১১৮ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন। ভোটে হারার পরও এলাকার বাড়ি বাড়ি ঘুরছেন তিনি। মানুষের হাতে তুলে দিচ্ছেন একটি কার্ড। সেখানে লেখা, ‘পুরসভা নির্বাচনে আপনাদের রায়ের প্রতি সন্মান জানাই। আমি ছিলাম-আছি-থাকব। ভাল থাকুন।’ সঙ্গে লেখা নিজের নাম এবং মোবাইল নম্বর।
মেদিনীপুরে এ বার একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হয়েছে তৃণমূল। ২৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৩টি শাসক দলের দখলে গিয়েছে। বাকি ১২টির মধ্যে কংগ্রেস পেয়েছে ৬টি। বাম-জোট ৫টি এবং নির্দল ১টি ওয়ার্ড পেয়েছে। এই পরিস্থিতিতেও শহরের মানুষের রায়কে সম্মান জানাচ্ছেন? সিপিএমের শহর জোনাল সম্পাদক বলছেন, “ভোটে হার-জিত থাকে। মানুষের রায়কে তো সম্মান জানাতেই হবে। জনগণ তৃণমূলকে ভোট দিয়েছেন। ভোটের আগে এলাকার মানুষকে কথা দিয়েছিলাম, হারি-জিতি আপনাদের পাশে থাকব। এখনও তাই বলছি।” কিন্তু, এই হারের ব্যাখ্যা কী? কীর্তিবাবু বলছেন, “পুলিশ-প্রশাসন কী ভূমিকা নিয়েছিল, তা এলাকার মানুষ জানেন। নতুন করে কিছু বলছি না। আমরা বুথ ভিত্তিক ফলের পর্যালোচনা করব। তখন ব্যাখ্যা মিলবে।”
জনসংযোগে অব্যহত রেখেছেন মেদিনীপুর শহর কংগ্রেস সভাপতি সৌমেন খান। পুরভোটের ফল প্রকাশের পর তিনি এলাকায় প্রচার-গাড়ি বের করেন। শহরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়েছিলেন সৌমেনবাবু। তৃণমূল প্রার্থী শক্তিপদদাস অধিকারীকে ১,৭৮৫ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছেন। পুরভোটের পরও প্রচার-গাড়ি কেন? শহর কংগ্রেস সভাপতি বলছেন, “নিজের কথা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতেই প্রচার-গাড়ি বের করি। ভোটের সময় রাজনীতি হয়েছে। আমিও সভা করে বিরোধীদের সম্পর্কে দু’চারটে কথা বলেছি। বিরোধীও বলেছে। কিন্তু, এখন তা অতীত। এ বার এলাকার উন্নয়ন করতে হবে। এলাকার উন্নয়নে সকলের সহযোগিতা চাই।” প্রচারে ঘাটতি রাখতে চাইছেন না শিপ্রা মণ্ডলও। শিপ্রাদেবী মেদিনীপুরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছিলেন। নির্দল প্রার্থী সীমা পানিগ্রাহীকে ৫০৪ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছেন। তিনিও বলছেন, “ভোটের সময় রাজনীতি হয়েছে। আর নয়। সকলের সহযোগিতা নিয়েই এলাকার উন্নয়ন করতে চাই। আশা করব, সকলে আমার পাশে থাকবেন।”
২২ নভেম্বর মেদিনীপুরে পুরভোট ছিল। তার আগের এক মাস শহরে কতই না প্রচার চলেছে। কত চাপানউতোর। শাসক দল এক দাবি করে তো, বিরোধী দল অন্য দাবি করে। কারও ব্যানারে লেখা হয়েছিল, ‘সিপিএমের দলতন্ত্র নয়, সব মানুষের গণতন্ত্র চাই’। কারও ব্যানারে লেখা হয়েছিল, ‘সবার জন্য কাজ চাই, সবার পেটে ভাত চাই।’ কিন্তু, এখন এ সব অতীত। লোকসভা ভোটের আগে প্রচারে যোগ হয়েছে রাজনৈতিক সৌজন্য। সেখানে পুরভোট পরবর্তী রাজনীতির আকচাআকচি নেই। বদলে সবপক্ষের প্রার্থীরাই এলাকার উন্নয়নে একে অন্যের সহযোগিতা চাইছেন। পাশে থাকার বার্তা দিচ্ছেন। |
|
|
|
|
|