তিন দিন আগেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে জোর করে পদত্যাগপত্রে সই করানোর অভিযোগ তুলে তা গ্রহণ না করার আর্জি নিয়ে মহকুমাশাসকের দ্বারস্থ হয়েছিলেন আরামবাগ পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর প্রশান্ত যশ। শুক্রবার সেই প্রশান্তবাবুই তৃণমূল নেতা-কর্মী পরিবেষ্টিত হয়ে প্রথমে পুরসভার ‘রিসিভিং’ সেকশনে, পরে মহকুমাশাসকের দফতরে গিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দিলেন।
মহকুমাশাসক অরিন্দম রায় জানিয়েছেন, পুর আইন অনুযায়ী, কোনও কাউন্সিলরের পদত্যাগপত্র পুরপ্রধানের কাছেই দিতে হয়। তিনি বিষয়টি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেন। অর্থাৎ, এ বিষয়ে যে মহকুমা প্রশাসনের কিছু করার নেই তা স্পষ্ট করে দেন অরিন্দমবাবু। পদত্যাগপত্র জমা দেওয়া নিয়ে এ দিন প্রশান্তবাবু কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, “আমার এ নিয়ে কিছু বলার নেই।” পদত্যাগপত্রে তিনি জানিয়েছেন, ‘পারিবারিক ও ব্যক্তিগত কাজকর্মের অসুবিধার কারণে ওয়ার্ডের কাজ করার সময় দিতে না পারায় নাগরিক পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে। এমতাবস্থায় আমি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে ইচ্ছুক’।
কিন্তু প্রশান্তবাবুর দল এই পদত্যাগপত্র দেওয়ার পিছনে প্রশান্তবাবুর ‘পারিবারিক ও ব্যক্তিগত কাজকর্মের অসুবিধা’র কথা মানেনি। এ দিন দলের আরামবাগ জোনাল কমিটি অফিসে উপস্থিত সিপিএমের হুগলি জেলা সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুরী বলেন, “পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করানো নিয়ে গত ৩ ডিসেম্বর থানায় যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন প্রশান্তবাবু, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার বদলে প্রশান্তবাবুকেই অস্ত্র মামলায় জড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুলিশ নিরপেক্ষ ভূমিকা যেখানে পালন করছে না, সেখানে এই ছবি স্বাভাবিক।” পুরপ্রধান সিপিএমের গোপাল কচ বলেন, “শেষ পর্যন্ত তৃণমূলের সন্ত্রাসের কাছে হার স্বীকার করতে হল আমাদের কাউন্সিলরকে।” সন্ত্রাসের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্তের দাাবি, “গত মঙ্গলবার ওই কাউন্সিলর স্বেচ্ছায় পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলেন। সিপিএম নেতাদের চাপে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করতে বাধ্য হন। এ দিনও তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগপত্র দিয়েছেন।”
গত মঙ্গলবার মহকুমাশাসকের কাছে অভিযোগে প্রশান্তবাবু জানান, আগের রাতে তৃণমূলের ছেলেরা তাঁর বাড়িতে গিয়ে হুমকি দিয়ে জোর করে পদত্যাগপত্রে সই করিয়ে নেয়। সেই পদত্যাগপত্র যাতে গৃহীত না হয় সে জন্য আবেদনও জানান প্রশান্তবাবু। পরের দিন থেকে তাঁর জমির আমন ধান কাটার কাজে যুক্ত শ্রমিকদের প্রভাবিত করে তৃণমূল কাজ বন্ধ করে দেয় বলেও অভিযোগ তোলেন। তৃণমূল সেই অভিযোগ মানেনি। বৃহস্পতিবার বিকেলে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের এক সিপিএম নেতার বাড়িতে অস্ত্র মজুতের ঘটনাতেও কয়েক জনের সঙ্গে অভিযুক্ত হন প্রশান্তবাবু।
পুরসভা ঘুরে শুক্রবার দুপুর ১২টা নাগাদ মহকুমাশাসকের দফতরে পদত্যাগপত্র জমা দিতে ঢোকেন ওই সিপিএম কাউন্সিলর। সেখান থেকে বেরিয়ে পদত্যাগপত্রের ‘ডুপ্লিকেট কপি’ তৃণমূল নেতাদের হাতে তুলে দেন তিনি। পরে সেই ‘ডুপ্লিকেট কপি’ সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের হাতে তুলে দেন ওই তৃণমূল নেতারা। সিপিএমের জেলা সম্পাদকের অভিযোগ, “আরামবাগ পুরসভায় (১৮টি ওয়ার্ড) বামফ্রন্টের ১২ জন কাউন্সিলরের মধ্যে সাত জনকে পদত্যাগ করাতে চাপ দিচ্ছে তৃণমূল। পুলিশে তাঁরা অভিযোগ করতেও গিয়েছিলেন। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার বদলে এক পুলিশ অফিসার তাঁদের পদত্যাগ করারই পরামর্শ দেন। পুলিশের উপরে ভরসা রাখা যাবে কী করে?” আরামবাগ থানা এ কথা উড়িয়ে দিয়েছে। পদত্যাগের জন্য সিপিএম কাউন্সিলরদের চাপ দেওয়ার অভিযোগ মানেনি তৃণমূল। |