আরামবাগ পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলরের বাড়িতে হামলা চালিয়ে তাঁকে দিয়ে জোর করে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে।
সোমবার রাতের এই ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার হুগলিতে সাংবাদিক সম্মেলন করেন হুগলি জেলা বামফ্রন্ট নেতৃত্ব। সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুরী বলেন, “তৃণমূলের হুমকি, অত্যাচার,ভীতি প্রদর্শনের নানা ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা কার্যত দর্শকের। শোনা যাচ্ছে, কাউন্সিলরকে হুমকি দিয়ে পদত্যাগপত্র লেখানোর ঘটনার পিছনেও পুলিশেরও মদত আছে। বিষয়টি আমরা জেলা প্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র দফতরকে জানাচ্ছি।” এ দিন বাদলকোনার বাসিন্দা প্রশান্ত যশ নামে ওই কাউন্সিলর মহকুমাশাসকের কাছে অভিযোগ জানান। তাঁর পদত্যাগপত্র যাতে গৃহীত না হয়, সে বিষয়েও আবেদন জানান। পাশাপাশি নিরাপত্তার দাবিও লিখিত ভাবে জানিয়েছেন তিনি। অভিযোগপত্র দেওয়া হয় এসডিপিওকেও।
মহকুমাশাসক অরিন্দম রায় বলেন, “ডাকযোগে ওই পদত্যাগপত্র আমাদের দফতরে এসেছিল। তবে পুর আইন অনুযায়ী, কোনও কাউন্সিলরের পদত্যাগপত্র পুরপ্রধানের কাছেই দিতে হয়। তিনি বিষয়টি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেন।” |
অর্থাৎ, এ বিষয়ে যে মহকুমা প্রশাসনের কিছু করার নেই, তা স্পষ্ট করে দেন অরিন্দমবাবু। পাশাপাশি প্রশান্তবাবুর নিরাপত্তার বিষয়টি পুলিশ খতিয়ে দেখবে বলেও জানান তিনি। এসডিপিও শিবপ্রসাদ পাত্র জানান, লিখিত অভিযোগ হাতে এলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।
পুরপ্রধান সিপিএমের গোপাল কচ এখন শহরে নেই। তিনি টেলিফোনে বলেন, “তৃণমূলের একটা অংশ মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের চেষ্টা করছে। নির্বাচিত সদস্যের উপরে বলপ্রয়োগ করে পদত্যাগে বাধ্য করানো হয়েছে সে কারণেই। এই অপচেষ্টার বিরুদ্ধে প্রশাসন যাতে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়, সেই আর্জি বিভিন্ন স্তরে জানিয়েছি।” কাউন্সিলরকে জোর করে পদত্যাগ করানোর অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। আরামবাগ ব্লক তৃণমূল সভাপতি তথা পুরসভার বিরোধী দলনেতা স্বপন নন্দী বলেন, “এই ঘটনার সঙ্গে দলের কোনও যোগ নেই। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে অনুন্নয়নের অভিযোগ ছিল। তার জেরে স্থানীয় মানুষ ওই ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারেন।” এ বিষয়ে জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্তের বক্তব্য, “দলের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই। যতটা শুনেছি, সিপিএমের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই উনি পদত্যাগ করেছেন।”
আরামবাগ পুরসভার ১৮টি ওয়ার্ডের ১২টি আসনে জয়লাভ করে গত বার বোর্ড গঠন করে সিপিএম। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ জনা দশেক যুবক প্রশান্তবাবুর বাড়িতে হাজির হয়। কাউন্সিলরের অভিযোগ, “ওরা দরজা খোলার জন্য জোর করে। খুলতেই তৃণমূলের কয়েক জন একটা টাইপ করা কাগজ দিয়ে বলে, তাতে সই করতে হবে। দেখি ওটা পদত্যাগপত্র। সই করতে না চাওয়ায় ওরা নানা ভাবে ভয় দেখায়। বাধ্য হয়ে সই করি।” সাংসদ শক্তিমোহন মালিক প্রশান্তবাবুকে নিয়ে মহকুমাশাসকের কাছে অভিযোগ জানাতে যান। তিনি বলেন, “তৃণমূল যে ভাবে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারের উপরে হস্তক্ষেপ করছে, মানুষ তা কোনও ভাবেই ক্ষমা করবে না।” |