এক জায়গায় ঢুকে আপ্লুত হচ্ছেন ভ্রমণার্থীরা।
অন্য জায়গায় তাঁদের মুখ থেকে বেরিয়ে আসছে হতাশা।
এক কিলোমিটারের ব্যবধানে হুগলি জেলার দুই পর্যটন কেন্দ্রের দুই ছবি। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ এবং সংস্কারের জেরে ঝলমল করছে গঙ্গাপারের ব্যান্ডেল চার্চ। অন্য দিকে, সংস্কারের অভাবে পলেস্তারা খসে পড়ছে ইমামবাড়ার গা থেকে। ভেঙে পড়ছে ছাদের কড়ি-বরগা। ইমামবাড়া কর্তৃপক্ষ এ জন্য অবশ্য অর্থাভাবকেই দায়ী করেছেন।
পূর্ব রেলের হাওড়া-ব্যান্ডেল শাখার ব্যান্ডেল স্টেশন থেকে দু’কিলোমিটার দূরেই ব্যান্ডেল চার্চ। শীতের মরসুমে শনি-রবি বা অন্য ছুটির দিনগুলিতে এখানে ভিড় উপচে পড়ে। সেখান থেকে বেরিয়ে বহু ভ্রমণার্থীই নৌকায় বা সড়কপথে চলে যান ইমামবাড়া। কিন্তু সেখানে ঢুকতে গিয়েই তাঁদের থমকাতে হচ্ছে। কেননা, বাইরে থেকেই চোখে পড়ছে ওই সৌধের ভগ্নদশা। রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের তত্ত্বাবধানে ২০১০-১১ সালে ওই সৌধের আংশিক সংস্কার হয়েছিল। কিন্তু তার পরে আর কাজ এগোয়নি। স্থানীয় বাসিন্দা এবং ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ, ঐতিহ্যমণ্ডিত এই সৌধের পূর্ণাঙ্গ সংস্কার হলে দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়ত।
ইমামবাড়া সূত্রের খবর, গঙ্গার ধারে ৪০ বিঘা জুড়ে হাজি মহম্মদ মহসিন ১৮৪০ সালে এই সৌধ তৈরির কাজ শুরু করান। ২০ বছর ধরে নির্মাণকাজ চলে। খরচ হয় ২ লক্ষ ১৭ হাজার টাকা। বাইরে থেকে ভিতরে ঢোকার সময়ে প্রথমেই ভ্রমণার্থীদের চোখে পড়ে আকাশছোঁয়া স্তম্ভের মধ্যে ঘড়ি। |
প্রধান ফটক দিয়ে পেরিয়ে বাঁ দিকে শরবতখানা, ডান দিকে তাজিয়াখানা। মাঝখানে বেলজিয়াম থেকে আনা ঝাড়লণ্ঠন দিয়ে সাজানো বিশাল জরিদালান। দেওয়ালে কোরানের বাণী। বিশেষ দিনগুলিতে এখানে নমাজ পড়েন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। কিন্তু প্রায় সব জায়গা থেকেই এখন পলেস্তারা খসছে। বেরিয়ে আসছে ইট।
ওই সৌধ বর্তমানে রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের তালিকাভুক্ত। পাঁচ জনের একটি ট্রাস্টি বোর্ড ইমামবাড়া দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে। কমিশনের তত্ত্বাবধানে ২০১০-১১ সালে এক কোটি টাকায় ওই সৌধের প্রধান ফটক এবং জরিদালানের কিছুটা করে অংশ সংস্কার করে হুগলি-চুঁচুড়া পুরসভা। ইমামবাড়ার ম্যানেজার গৌতম দাস বলেন, “সম্পূর্ণ অংশ সারাই করতে অনেক অর্থের প্রয়োজন। যে পরিমাণ অর্থ পাওয়া গিয়েছে, তা দিয়ে সারানো হয়েছে। পরবর্তীতে আবার অর্থ মঞ্জুর হলে সারানোর কাজ শুরু হবে।” রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের কনসালট্যান্ট দীপককুমার পালিত বলেন, “ইমামবাড়ার যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা সারাতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। এক সঙ্গে সেই পরিমাণ অর্থ পাওয়া সম্ভব নয়। আগে যতটুকু টাকা মঞ্জুর হয়েছিল, তা দিয়ে সংস্কারের কাজ হয়েছে। এর পরে আবার টাকা মঞ্জুর হলে সংস্কারের কাজে হাত দেওয়া হবে।’’ ইমামবাড়া সূত্রের খবর, এই শীতের মরসুমে ছুটির দিনগুলিতে গড়ে ২০০ জন করে ভ্রমণার্থী বেড়াতে আসছেন। তবে, ভিতরে ঢুকে অনেকেই হতাশা গোপন করছেন না। দিন কয়েক আগেই সপরিবারে ইমামবাড়ায় এসেছিলেন দুর্গাপুরের তপন বিশ্বাস। তিনি বলেন, “এই প্রথম ব্যান্ডেল চার্চ দেখে ইমামবাড়া দেখলাম। এত সুন্দর একটা স্থাপত্যকীর্তি সংস্কারের অভাবে ধ্বংসের মুখে পড়ে যাচ্ছে, এটা খুবই দুঃখজনক।” কলকাতার বাসিন্দা, দিল্লিতে কর্মরত মানস মজুমদারের কথায়, “ছেলেমেয়েদের নিয়ে ইমামবাড়া দেখলাম। মন ভরল না। যা অবস্থা, তাতে দ্রুত সংস্কারের প্রয়োজন।” একই বক্তব্য আরও অনেক ভ্রমণার্থীর। |