|
|
|
|
পিস্তলকাকুর শাস্তি চায় না শিরোনামে উঠে আসা গুঞ্জন
নিজস্ব সংবাদদাতা • গুয়াহাটি
৬ ডিসেম্বর |
কানে দুল। হাতে খোলা পিস্তল। গলায় ভরসা। এমন ধারা অপহরণকারীকে আদৌ ভয় পাবে কী না, তা ভাবতে ভাবতেই রাত কেটে গিয়েছিল গুঞ্জন শর্মার। বাড়ি ফিরে যখন সবই বলাবলি করছিল কোনওমতে প্রাণ বেঁচেছে, তখন খানিক ভয় হলেও পরে গুঞ্জনের মনে হচ্ছে, “লোকটা তেমন মন্দ নয়। ওকে বকাবকি করে, ভাল হয়ে থাকতে বলে ছেড়ে দেওয়াই ভাল।”
৫ নভেম্বর বিকেলের পর থেকে নাজিরা কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীর জীবনটাই বদলে গিয়েছে। সৌজন্যে, ওই ‘পিস্তল কাকু’। শিমুলগুড়ি চারিয়ালির হোটেলে মারামারির পরে পিস্তল দেখিয়ে গুঞ্জন ও তার সঙ্গীদের ‘পণবন্দী’ করে গাড়ি নিয়ে চম্পট দেয় ওই জঙ্গি যুবক। পরে গুঞ্জনের চেয়ে বয়সে ছোট একটি মেয়েকে নিয়ে পালাবার চেষ্টা করেছিল সে। রুখে দাঁড়ায় গুঞ্জন। বলে, সে যেহেতু বয়সে বড়, তাকেই সঙ্গে করে নিয়ে যেতে হবে। বাকিদের ক্ষতি করা চলবে না। রাতভর উধাও থাকার পর পরের দিন সকালে গুঞ্জন অসম-নাগাল্যান্ড সীমানার রঙাজান গ্রামে হাজির হয়। সেখান থেকে হাসপাতাল হয়ে, পুলিশের হাত ঘুরে বাড়ি। এরপর থেকেই রাজ্য জুড়ে সংবাদ-শিরোনামে ছোট্ট কিন্তু সাহসী মেয়েটি। মুখ্যমন্ত্রী তাকে ২ লক্ষ টাকার ইনাম দিয়েছেন। তার নাম পাঠানো হচ্ছে জাতীয় পুরস্কারের জন্য। আজ সকাল থেকে সেই গুঞ্জনের দম ফেলার ফুরসত নেই। কখনও স্থানীয়, কখনও জাতীয় সংবাদমাধ্যমে ইন্টারভিউ। কখনও পাড়ায়, কখনও জেলাস্তরে সম্বর্ধনার জন্য টানাটানি চলছে। গুঞ্জনের বাবা-মা জানাচ্ছেন, আজ তো নয়ই, আগামী এক মাসের জন্য সাহসিনী গুঞ্জন একেবারে ‘বুক্ড’। গুয়াহাটি-সহ জেলার স্কুল ইতিমধ্যেই গুঞ্জনকে তাদের স্কুলে একটিবার আনার জন্য আবেদন জানিয়ে রেখেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, যে ব্যক্তি গুঞ্জনকে অপহরণ করেছিল তাকে শণাক্ত করা গিয়েছে। শীঘ্রই সে গ্রেফতার হবে। তবে সকলেই অপরাধীর কড়া সাজা দাবি করলেও খোদ গুঞ্জন কিন্তু বলছে, “লোকটা খারাপ ছিল না তো। আমার জঙ্গলে হাঁটতে কষ্ট হয়েছে ঠিকই, কিন্তু একবারের জন্যও কাকুটাকে ভয় লাগেনি। বরং কাকুটা আমায় বলেছিল, ওঁরও আমার মতোই বাচ্চা রয়েছে। আমার কোনও চিন্তা নেই।” গুঞ্জনই অপহরণকারীর হয়ে সাফাই দিচ্ছে, “আসলে মনে হয় লোকটা খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিল। তাই কী করবে ভেবে না পেয়ে আমায় নিয়ে পালায়।” অপহরণকারীকে কী শাস্তি দিতে চায় সে? গুঞ্জনের মতে, “আমি বুঝেছি, লোকটার মনটা ভাল। ওকে যেন পুলিশ মারধর না করে। ভাল হয়ে থাকবে আর এমন কাজ কখনও করবে না, এই প্রতিজ্ঞা করিয়ে ওকে যেন ছেড়ে দেওয়া হয়।” |
|
|
|
|
|