|
|
|
|
কর্তাদের তেষ্টায়
‘কল্পতরু’ পুরসভা
অনুপ চট্টোপাধ্যায় |
|
|
‘তোমার জন্য ভাল, আমার জন্য নয়’। শহরবাসীকে সরবরাহ করা পানীয় জল সম্পর্কে অন্তত এমনই মনোভাব কলকাতা পুরসভার কর্তাদের। তাই কলকাতাবাসীর তেষ্টা মেটাতে টালা-পলতা ও গার্ডেনরিচের জল সরবরাহ করা হলেও পুরকর্তাদের বৈঠকের জন্য আসে বহুজাতিক সংস্থার তৈরি বোতলবন্দি জল। এমনকী সরকার যে জল তৈরি করছে (প্রাণধারা), তা-ও খেতে নারাজ পুরসভার অফিসারেরা। ফলত, বোতলের জল কিনতে বছরে কমপক্ষে পাঁচ লক্ষ টাকা খরচ
হচ্ছে পুরসভার।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বহুজাতিক সংস্থার জল মুখেই দেন না। তাঁর পছন্দ
সরকারি উদ্যোগে তৈরি জল ‘প্রাণধারা’। সরকারি অফিসের প্রয়োজনে ইতিমধ্যেই সরকারি জলের ব্যবহার বাড়ানোর উপরে জোর দিয়েছেন তিনি।
পুর-প্রশাসনের কথায়, টালা-পলতার জল খুবই ভাল। এমনকী, বোতলের কেনা জলকেও হার মানায়। পুরসভার সরবরাহ করা পানীয় জলের প্রশংসায় যাঁরা পঞ্চমুখ, তাঁরা নিজেরা ওই জল পছন্দ করছেন না কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে পুরসভার অন্দরমহলে। আপাতত পানীয় জলের জন্য বছরে কয়েক লক্ষ টাকা খরচের বিষয়টি চিন্তায় ফেলেছে পুর প্রশাসনকে। প্রশ্ন উঠেছে, জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর বহু আগেই
পানীয় জলের বোতল ও পলিপ্যাক তৈরি শুরু করলেও পুরসভা এত দিন তা করেনি কেন? এক অফিসারের কথায়, “দেরিতে হলেও এ বার পুর প্রশাসন নড়ে বসেছে। পানীয় জলের বটলিং প্লান্ট তৈরি করার প্রক্রিয়া
শুরু করেছে।”
পুরসভা সূত্রের খবর, কলকাতা পুরসভায় জলের বোতল কেনার রেওয়াজ দীর্ঘ কালের। জল সরবরাহ দফতরের এক আধিকারিক জানান, পুরভবনে দু’টি কনফারেন্স রুম। একটিতে ৫০ জন ও অন্যটিতে ২৫ জন বসতে পারেন। দৈনিক কমপক্ষে দু’টি করে বৈঠক হয় একটি ঘরে। অর্থাত্ দু’টি ঘর মিলিয়ে চারটি বৈঠকে থাকেন ১৫০ জন। সপ্তাহে ছ’দিন এ ভাবে চলায় প্রতি সপ্তাহে ৯০০ বোতল জল লাগে। অর্থাত্ বছরে লাগে ৪৩ হাজার ২০০ বোতল। ৫০০ মিলিলিটারের একটি বোতলের দাম ১০ টাকা হিসেবে প্রতি বছর প্রায় সাড়ে চার লক্ষ টাকা বিল মেটাতে হয় পুর প্রশাসনকে। এর উপরে দিনে দু’টির বেশি বৈঠক হওয়ার সংখ্যাটাও কম নয়। ওই অফিসার জানান, এর সঙ্গে পুরসভার ব্যবস্থাপনায় শহরের নানা জায়গায় নানা অনুষ্ঠান তো আছেই। সে সব যোগ করলে পানীয় জল কেনার জন্য পুরসভার ব্যয় বছরে ১২ লক্ষ টাকারও বেশি।
বছরের পর বছর এ ভাবেই চলছে। পুরসভার এক মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের বক্তব্য, “টালা-পলতার মাধ্যমে কলকাতায় যে জল দেওয়া হয় তার মান অত্যন্ত ভাল। জল সরবরাহ দফতরের পক্ষ থেকেও সেই বার্তা দেওয়া হয় শহরবাসীকে।” তা সত্ত্বেও ওই জলে পুর কর্তাদের অনীহা কেন, তার জবাব মেলেনি। ওই ইঞ্জিনিয়ারের কথায়, “কেনাকাটা করাতে পুরসভার আগ্রহ বরাবরই বেশি।” এর বেশি কিছু বলতে চাননি তিনি।
জলের বোতল কেনার খরচ কমাতে সম্প্রতি তত্পর হয়েছেন পুর কমিশনার খলিল আহমেদ। পুরসভা সূত্রের খবর, আয় বাড়ানো সম্পর্কিত এক বৈঠকে ঠিক হয়েছে, পুরসভা নিজেরাই পানীয় জলের প্যাকেজিং প্লান্ট তৈরি করবে। এর জন্য বেসরকারি উদ্যোগের সাহায্য নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে প্রকল্প-রিপোর্ট তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জল সরবরাহ দফতরকে। দফতরের এক অফিসার জানান, টালা-পলতা ও গার্ডেনরিচের জল অত্যন্ত ভাল। সেই জল বোতলবন্দি করে বাজারে বিক্রি করলে পুরসভার চাহিদা তো মিটবেই, সেই সঙ্গে অন্যত্র তা বেচে আয়ও হবে। জল সরবরাহ দফতর থেকে ওই প্রকল্প-রিপোর্ট এলেই মেয়র পারিষদ বৈঠকে তা অনুমোদনের জন্য তোলা হবে। ওই অফিসার জানান, পুরসভা জল দেবে, জায়গা দেবে। শুধুমাত্র কারিগরি সহায়তার জন্য কোনও বেসরকারি সংস্থাকে যুক্ত করা হতে পারে।
|
|
|
|
|
|