দীর্ঘ আড়াই বছর টালবাহানার পর নতুন করে সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক (এসটিপি) প্রকল্প চালু করতে চলেছে কেন্দ্র। সংশ্লিষ্ট সরকারি সূত্রে খবর, প্রকল্পের নয়া ‘ইনসেন্টিভ’ (উৎসাহ ভাতা) কাঠামো অনুযায়ী, এ বার লগ্নিকারী বিভিন্ন কর বাবদ যে খরচ করবেন, তার অনেকটাই নগদে পুষিয়ে দেওয়া হবে। অর্থাৎ সে দিক থেকে বিশেষ আর্থিক অঞ্চলের (সেজ) সুযোগ-সুবিধার সঙ্গে কিছুটা পাল্লা দিতে পারবে এসটিপি। আর তাই এই প্রকল্পের হাত ধরেই রাজ্যে ইনফোসিসের লগ্নি-জট খুলতে পারে বলে আশা তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের।
পশ্চিমবঙ্গে ইনফোসিসের প্রথম ক্যাম্পাস ঘিরে নয়া বিতর্কের সূত্রপাত সেজ-এর তকমা ঘিরেই। বিধানসভা ভোটের আগে থেকেই নিজেদের সেজ-বিরোধী অবস্থান স্পষ্ট করেছে তৃণমূল। আবার সংস্থাও শুরু থেকেই স্পষ্ট করেছে যে, ওই তকমা ছাড়া লগ্নি করা তাদের পক্ষে অসম্ভব। পরে অবশ্য সেই অবস্থান থেকে কিছুটা সরে ইনফোসিস কর্তা এস গোপালকৃষ্ণন বলেন, বাণিজ্যিক লাভের সঙ্গে আপোস না-করলেও সেজ-এর বিকল্প প্রস্তাব নিয়ে তাঁরা আলোচনায় রাজি। উল্টো দিকে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শিল্প তথা তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও বহু বার জানিয়েছেন যে, সেজ তকমা নিয়ে আপত্তি থাকলেও তার সমতুল্য সুযোগ-সুবিধা ইনফোসিসকে দিতে সরকার তৈরি।
ফলে এই অবস্থায় নয়া এসটিপি প্রকল্প জিয়ন কাঠির কাজ করতে পারে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। কেন্দ্রীয় সরকার সূত্রে খবর, এ বার প্রকল্পে করছাড়ের সুযোগ আনা হবে নতুন মোড়কে। কোনও সংস্থা বিভিন্ন কর বাবদ যে টাকা দেবে, তার বেশির ভাগটাই (প্রায় ৬০%) নগদে পূরণ করে দেওয়া হবে। যদিও তার মধ্যে আয়করও অন্তর্ভুক্ত কি না, তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তা মুখ খুলতে চাননি।
১৯৯১ সালে যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের অধীনে তৈরি হয় সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক অফ ইন্ডিয়া নামে স্বশাসিত সংস্থা। মূলত ছোট ও মাঝারি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাকে সহায়তার জন্যই তার আওতায় প্রকল্প চালু করে কেন্দ্র। কর ও রফতানির ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া শুরু হয়। যার মধ্যে ছিল আয়করও। কিন্তু ২০১১-র মার্চের পর এই আয়কর ছাড়ের সুবিধা তুলে দেয় কেন্দ্র। তার পর রাজ্য-সহ সারা দেশে এসটিপি-র বৃদ্ধির হার কমে।
আবার রাজ্য জানে, ইনফোসিস-সহ কোনও সংস্থার সেজ তকমার জন্য আবেদন করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। বরং এসটিপি মারফত সুযোগ-সুবিধা পেতে পারে সংস্থাগুলি। তাই এই প্রকল্পকে চাঙ্গা করতে কেন্দ্রকে আগেই চিঠি দিয়েছে রাজ্য। ফলে সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে, নয়া এসটিপি প্রকল্প চালু হলে, ব্র্যান্ড-ইনফোসিসকে ধরে রাখতে তাকেই পাখির চোখ করবে তারা। |