নাবালিকাকে ধর্ষণের দায়ে ১০ বছর কারাদণ্ড হল এক যুবকের। শুক্রবার রামপুরহাট ফাস্ট ট্র্যাক আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক সুধীর কুমার ওই সাজা শোনান। সরকারি আইনজীবী কল্যাণ বন্দোপাধ্যায় বলেন, “সহবাস করে বিয়ের প্রতিশ্রতি ভঙ্গ করায় ওই নাবালিকা অভিযুক্ত যুবকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেছিলেন। ওই মামলায় বিচারক অভিযুক্ত আমিরুল শেখকে দোষী সাব্যস্ত করে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ ধারা অনুযায়ী ১০ বছর কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন।” একই সঙ্গে বিচারক দোষীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন। জরিমানা অনাদায়ে দোষী যুবককে আরও দু’ বছর জেলে সাজা কাটাতে হবে।
কল্যাণবাবু জানান, ২০০৯ সালের ওই ঘটনাটি ময়ূরেশ্বর থানা এলাকার। আমিরুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সে গ্রামেরই এক নাবালিকার সঙ্গে একাধিক বার সহবাস করে। কিন্তু নাবালিকা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে আমিরুল আর তাকে বিয়ে করতে রাজি হয়নি। শেষে মেয়েটির পরিবার পুলিশের কাছে অভিযোগ করে। একই বছর ২৫ জুলাই নাবালিকার পরিবারের পক্ষ থেকে এসডিপিও-র (রামপুরহাট) কাছে আমিরুলের নামে একটি লিখিত অভিযোগও দায়ের করা হয়। নাবালিকার পরিবারের অভিযোগ, এর পরেও পুলিশ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখেনি। অভিযুক্তকে গ্রেফতারও করা হয়নি। পুলিশ কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় মেয়েটির পরিবার শেষমেশ আদালতের দ্বারস্থ হয়। রামপুরহাট আদালতে শুরু হয় মামলা। মেয়েটির আবেদনের গুরুত্বকে উপলব্ধি করে রামপুরহাট আদালত সরাসরি ময়ূরেশ্বের থানাকে ওই ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এফআইআর করার জন্য নির্দেশ দেয়। ইতিমধ্যেই ওই নাবালিকা একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেয়। প্রায় একই সময়ে আদালতের নির্দেশে ২০০৯ সালের ৯ নভেম্বর ময়ূরেশ্বর থানার পুলিশ অভিযুক্ত যুবককে গ্রেফতার করে ধর্ষণের মামলা শুরু করে। পরে ওই নাবালিকা, অভিযুক্ত আমিরুল এবং শিশুটির ডিএনএ পরীক্ষা করায়। প্রমাণিত হয় যে আমিরুলই শিশুটির বাবা। প্রায় তিন বছর ধরে মামলাটির বিচার চলার পরে বৃহস্পতিবারই রামপুরহাট ফাস্ট ট্র্যাক আদালত আমিরুলকে দোষী সাব্যস্ত করে। সরকারি আইনজীবী জানিয়েছেন, উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে একই মামলায় অভিযুক্ত আমিরুলের বাবা, মা এবং এক ভাই বেকসুর খালাস পেয়েছেন। জরিমানার টাকা নির্যাতিতা মেয়েটি পাবেন।
চার বছরের শিশুকন্যাকে নিয়ে কুমারী মা এখন বাবা-মায়ের আশ্রয়েই থাকেন। এ দিন রায় শোনার পরে তাঁর প্রতিক্রিয়া, “আমি তো ওর সঙ্গে ঘর করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সহবাস করেও ওরা আমাকে ঘরের বউ করতে চায়নি। আজকের রায়ের জন্য আমি দীর্ঘ দিন ধরে অপেক্ষা করছিলাম। আরও কঠিন শাস্তি হলে বেশি শান্তি পেতাম। তা ছাড়া ওর পরিবারের লোকেরা ওকে মদত দিয়েছিল। আমি তাদেরও শাস্তি প্রত্যাশা করেছিলাম।” |